বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ৩০ কার্তিক ১৪৩১
বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪
চিঠি
বিল্লাল বিন কাশেম
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৮:১৭ PM
হে বন্ধু! হে প্রিয়, 

গত কিছুদিন আমি চার দেয়ালে বন্দি। এই চিঠি লিখে খামবন্ধ করে টিকিট লাগিয়ে বেয়ারার কাছে দিয়ে দেব সে অবস্থাও নেই। লকডাউনের কারণে খামটা পোস্টে দেবার নির্দেশ পালন করবে কে? তাই হয় তো চিঠির আধুনিক সংস্করণ ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারের শরণাপন্ন হলাম। আমার জীবনের কেলেঙ্কারির আভাস দিয়েছিলাম তোমাকে। সেই কেলেঙ্কারি এবং তার পরিণতির কথা তোমাকে জানাই।

বার বছর আগে আমি সাতাশ বছরের এক বিবাহিত যুবক। দু’বছর বিবাহিত জীবন কেটে গিয়েছে। নেহা তখন অন্তঃসত্ত্বা। পেটে আট মাসের বাচ্চা নিয়ে ও তখন বাপের বাড়িতে। নিচের তলার বড় ড্রয়িংরুম আর হল আর মাঝারি বেডরুম তখন নেহা আর আমার দখলে ছিল। ওপরতলার ঘরগুলো বরাবর আকারে ছোট, সংখ্যায় বেশি। ওপরে চারটে বেডরুমের একটিতে দাদা-বৌদি-বাচ্চা। একটিতে আমার ছোটভাই ভাস্কর। বাবা তখন বেঁচে। বাবা-মায়ের একটা ঘর। আর একটা ঘরের কেউ দাবিদার ছিল না। প্রয়োজনে যে কেউ ব্যবহার করতে পারত। রান্নাঘর বাথরুম ওয়াসরুম একটা করিডরের শেষ প্রান্তে।

নেহা বাপের বাড়ি যাওয়ার পর পুরো নিচের তলাটা আমাকে যেন হা করে গিলতে আসে। তখন কালে-ভদ্রে মদপান করতাম। নেহার অবর্তমানে সপ্তাহে দু-একদিন পান করতাম। অফিস বেরুবার আগে একবার ওপরে যেতাম খেতে। মা এবং বৌদি দু‘জন দু’পাশে থেকে আমার খাওয়ার পরিচর্যা করত। সংসারে বরাবরই আমার রােজগার ছিল বেশি। মায়ের হাতে তখন সংসার খরচের জন্যে পর্যাপ্ত টাকা আমিই দিতাম। আমার ব্যাপারে তখন সকলেরই একটু সুনজর ছিল। রাতে খাবার বেড়ে বৌদি আমাকে হাঁক দিত।

বাসার কাজের বয়স্ক পারুল নামের মানুষটি তখন তীর্থে যাবার জন্য একমাসের ছুটিতে। এক শুক্রবার ছুটির দিনে বেলা দশটা নাগাদ ড্রইংরুমে বসে খবরের কাগজ পড়ছি। কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলে দেখি এক অষ্টাদশী একহাতে মেডিক্যাল ইক্যুয়িপমেন্ট, অন্যহাতে ম্যাসাজের জিনিসপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে। দরজা থেকে সরে দাঁড়ালে ও ঘরে ডুকল। বুঝতে অসুবিধে হল না, মেডিক্যাল সেবা সার্ভিস থেকে এসেছে। মেয়েটিকে আগে কোনোদিন দেখিনি। মেয়েটির শরীরে আমার চোখ আটকে গেল। যৌবনে পরিপূর্ণ এক মুহূর্তে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।

ফর্সা তার ওপর সুশ্রী মুখ। খোপা দেখে বোঝা যায়, চুল ছেড়ে দিলে নিতম্ব ছাড়িয়ে যাবে। অনম্র বুক দুটি আর নিতম্বের বক্রতা ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছে। মেয়েটি লাজুক হেসে বলল, দাদা, আপনি একটু পাশের ঘরে গিয়ে চেঞ্জ হয়ে আসুন, আমি এখানেই কি রেডি করব?
আমার মাথায় তখন পোকা কিলবিল করছে। কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না নিজের মধ্যে। আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, পাশের ঘরে গেলে তোমাকে দেখব কী করে! এত রূপ-যৌবন তুমি কোথায় পেলে! তোমাকে দেখে তো চোখ ফেরাতে পারছি না। কোনও কথা না বলে মেয়েটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল মাথা নিচু করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমাকে  তো কোনোদিন দেখিনি। তুমি কি এ প্রতিষ্ঠানে নতুন ঢুকেছ? মেয়েটি বলল, হ্যাঁ। দু’দিন হল। আপনার এখানে যে আসতো সে একমাসের জন্য ছুটি কাটাতে গেছে। বদলিতে আমি এসেছি। জিজ্ঞেস করলাম,  তোমার নাম কী? জবাব দিল, জি শ্রাবণী।

আমি এগিয়ে গিয়ে ওর হাত থেকে মেডিক্যাল ইক্যুপমেন্টের ব্যাগ আর স্পার সরঞ্জামাাদি নিয়ে মেঝেয় রাখলাম। তারপরেই সোজা ওর বুকে হাত দিলাম। ও একটু বাধা দেবার চেষ্টা করল মাত্র। আমি সজোরে ওকে বুকে চেপে পিষে ফেললাম আমার শরীরের সঙ্গে। মুখ নামিয়ে চুমু খেলাম। ওর ঠোঁটে।  হঠাৎ খেয়াল হল, দরজাটা হা করে খোলা। দরজাটা বন্ধ করে ফিরে এলাম ওর কাছে। জড়িয়ে ধরে পাশের ঘরে গিয়ে আমাদের বিছানায় শুইয়ে দিলাম ওকে। আর মিলিত হলাম ওর সঙ্গে। সমস্ত ব্যাপারটাই ঘটল একটা ঘোরের মধ্যে। বুঝতে পারলাম, শ্রাবণী দারুন তৃপ্ত। ও আমাকে জড়িয়ে রাখল দু’বাহুর বন্ধনে।

সেদিন দুপুরেই অফিস ডিউটি সেরে পালিয়েই এল আমার বাসায়। এসে নানা আলাপচারিতা করল শ্রাবণী। নিজের কথা ও পরিবারের কথা বলল। পরে কথা ফাঁকে আমার শোাবার ঘরে দুজনে নগ্ন হয়ে সঙ্গমে মিলিত হলাম। আসলে যৌনক্ষুধায় দুজনেরই পাগল পাগল অবস্থা। ও রাতেও আসতে চাইল। আমি সাহস দিলাম ওকে।

যৌন তাড়নায় আমরা পরে কেউ কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলিনি। খুব মনোযোগ ছিল বারবার একই খেলায় মেতে উঠেছিলাম আমরা। 
বাসা কাছাকাছি হওয়ায় রাতে ও এল আমার ঘরে। প্রথম লক্ষ্য করে দেখলাম, ওর সিঁথিতে বাসি সিঁদুরের আভাস। জিজ্ঞেস করলাম, কতদিন বিয়ে হয়েছে তোমার?

ও বলল, দু’বছর। বর নেয় না। মা-র কাছে থাকি। জিজ্ঞেস করলাম, কেন? তোমার এত ভা্েযলা চেহারা। ও বলল,  খেতে দিতে পারে না। ছ’মাস রেখেছিল, তারপর পাট্টে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, ছেলেপুলে হয়নি? ও বলল, না।

আর বিশেষ কিছু বলার বা জানার ছিল না। দু’জনে দু’জনকে নগ্ন করে স্বাধীন সঙ্গমে। মিলিত হলাম। সারারাতে কতবার মিলিত হয়েছিলাম, হিসেব ছিল না। কাকভোরে। নিঃশব্দে দরজা খুলে বিদায় দিই ওকে। টানা একমাস শ্রবণী আমার শয্যাসঙ্গিনী ছিল। শুক্রবার ও ছুটির দিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যেত সঙ্গমলীলা। বিছানায় নেহার অনুপস্থিতি ভুলিয়ে দিয়েছিল শ্রাবণী। যে যৌনসুখ আমি শ্রাবণীর কাছে পেয়েছিলাম, নেহার তুলনায় তা আশাতিরিক্ত। কিন্তু তখনও জানতাম না, আমার জীবনে শ্রাবণীই শেষ নারী। 

তীর্থ সেরে ফিরে এসে পারুল কাজে যোগ দিল। বাসায় কাজকর্ম করে দিয়ে যায়। বাসায়ও আর কেও আসা যাওয়া করে না। তখন শ্রাবণীর অভাবে পাগল প্রায় আমার অবস্থা। যৌনক্ষুধায় পাগল পাগল অবস্থা। দীর্ঘরাত কাটতে চায় না কিছুতেই। সেই সময় নেহা এক কন্যাসন্তানের জন্ম দিল। আরও দু’মাস পরে বাচ্চা নিয়ে ফিরে এল নেহা। এক শুক্রবারের সকালে খবরের কাগজে চোখ বুলোচ্ছি। পাশে নেহা মেয়েকে স্তন্যপান করাচ্ছে। হঠাৎ মা, শ্রাবণীর মা আর শ্রাবণী নিজে- তিনজন ঘরে হাজির। সঙ্গে সঙ্গে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হল। বিপদের গন্ধ পেলাম। উদ্বেগে সারা শরীর টানটান। 

প্রথমে কথা বলল মা, বউমা, তুমি মেয়েকে নিয়ে ওপরে যাও। খোকনের সঙ্গে আমার একটু কথা আছে। নেহা আমার দিকে একবার তাকাল। গণ্ডগোলের আঁচ মুহূর্তে জানান দিল ওকে। ও দৃঢ়তার সঙ্গে বলল, যা বলার আমার সামনেই বলুন। একটা কেলেঙ্কারির দুর্গন্ধ পাচ্ছি। আমি জানতে চাই কী হয়েছে। মা তাকাল শ্রাবণীর মায়ের দিকে। তুমিই বল শ্রাবণীর মা। ও কথা মুখে আনতে আমার ঘেন্না হচ্ছে। শ্রাবণীর মা শ্রাবণীকে দেখিয়ে বলল, ওর পেট হয়েছে। দাদাবাবু ওর পেট করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

ঘাড় থেকে আমার মাথাটা নেমে যেতে চাইছে। নেহা কোনও কথা না বলে মেয়েকে নিয়ে ওপরে চলে গেল। আমার কী বলা উচিত, বুঝে পেলাম না। রগের দু-পাশ দপদপ করতে লাগল।

মা বলল,  শ্রাবণীর মা এ নিয়ে পাড়া মাথায় করবে। মান-সম্মান নিয়ে আর থাকা যাবে না। যা ব্যবস্থা করার কর। গলার দড়ি আমার জুটে যাবে।

হনহন করে বেরিয়ে গেল মা। শ্রাবণী কথা বলল, মা, তোমাকে  তো বলছি, দাদাবাবুর একার দোষ নয়।

ঝাজিয়ে উঠল শ্রাবণীর মা, তুই চুপ করবি? এসব ভদ্দরনোকেদের আমার জানা আছে। আমি এর বিচার চাই।

আমার ঘড়ঘড়ে গলা, কী চাই, বল।

শ্রাবণীর মা বলল, ইচ্ছে হলে জেবনভর রেখে দাও। তোমার মেয়েমানুষ হয়ে থাক। বাচ্চাকে মেনে নাও। নইলে খালাস করিয়ে দাও। আর দশহাজার ট্যাকা।

এক বন্ধুর নার্সিংহোমে চিঠি লিখে আর দশহাজার টাকা দিয়ে ওদের বিদায় দিলাম। যাবার আগে শ্রাবণী কিছু বলতে যাচ্ছিল। ওর মা সে-সুযোগ না দিয়ে ওকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। এরপর আমার মানসিক অবস্থা আন্দাজ করতে পার। সারাদিন ঘরে বসে রইলাম। স্নান, খাওয়া-দাওয়া কিছুই হল না। কেউ আমার কাছে এল না, কেউ আমাকে ডাকল না। 

সন্ধ্যার পরে বেরিয়ে এক বোতল মদ কিনে আনলাম। যতক্ষণ জ্ঞান ছিল, মদ গিলেছি। নেহা আর আমার কাছে আসেনি। মেয়েকে নিয়ে ওপরেই থেকে গেল। পরদিন পাথর-ভার মাথা নিয়ে চৈতন্য এল অনেক বেলায়। মা দেখা করতে এল আমার সঙ্গে। আমি মা-র দিকে তাকাতে পারলাম না। নিঃশব্দে মা চোখের জল মুছে গেল অনেকক্ষণ। 

অবশেষে কোনো রকমে বলল, বউমা আর তোর সঙ্গে থাকবে না। পারলে তুই নিজেকে স্বাভাবিক করে নে। অদৃষ্ট, সবই অদৃষ্ট। মা বেরিয়ে গেল। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমি  বোধ হয় স্বাভাবিক হতে পারিনি। নেহার সাহায্য, সমবেদনা ও সহযোগিতা পেলে হয়তাে সেটা সম্ভব হত। কিন্তু বদলা নেবার জন্য নেহা যা করল- সেটা ক্ষমার যোগ্য কিনা, তা বিচার করার অধিকার অবশ্যই আমার ছিল না।

ও প্রকাশ্যে আমার ছোটভাই ভাস্করের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করল। প্রথম প্রথম বাচ্চাকে মায়ের কাছে রেখে ভাস্করের সঙ্গে বেরুতে শুরু করল। সিনেমা, রেস্তোরাঁ পার্কে ঘুরে এসে ইচ্ছে করে আমাকে শোনাবার জন্যে মায়ের কাছে গল্প করত। মা বিরক্ত হত, কিন্তু শাসন করত না। আমি মদে ডুবতে শুরু করলাম। এরপর ভাস্কর সরাসরি জানিয়ে দিল, ও বিয়ে করবে না। নেহার সঙ্গে প্রকাশ্যেই এর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হল। আমি নিচের ঘরে একা নিজের মতন থাকি, রাতে নেহার ভাবের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে। নেহা আমাকে সাতপাক ঘুরে বিয়ে করেছিল। ও ভাস্করের বউ হয়ে গেল।

বেশ কয়েক বছর পরে, যখন ব্যাপারটা সকলের চোখে সয়ে গেল, তখন আমার সঙ্গে আলটপকা একটা-দুটো করে কথা শুরু করল। একটা অন্যায়ের জবাবে ও যে আর একটা অন্যায় খোলাখুলিভাবে করে যাচ্ছিল, সেটা বোধ হয় তখন উপলব্ধি করতে পেরেছিল।

একদিন রাতে ও হঠাৎ আমার ঘরে এল। মেয়ে তখন ঠাকুমার কাছে শুতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আমি তখন নেশার ঘোরে বেশ টালমাটাল।

ও বলল, এখন থেকে মাঝে মাঝে আমি তোমার কাছে থাকব। মেয়ে বড় হচ্ছে, তার চোখে আমাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ন থাকা উচিত।

আমি কোনও জবাব না দিয়ে গ্লাসে মদ ঢাললাম। ও আমার বিছানায় শুয়ে পড়ল। আমি বিছানায় গেলাম না। সোফার ওপর ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে ও একবার এসে ডাকাডাকি করেছিল। আমি আমল দিইনি। এরপরে রাতে ও আর কখনও আসেনি। পরবর্তীকালে মেয়েকে ভরসা করে একটি নতুন জীবনের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মেয়ের বোধবুদ্ধি হবার সঙ্গে সঙ্গে নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য আমার বিরুদ্ধে কুৎসা করে মেয়ের মনকে কলুষিত করে দেয় নেহা। আমার জীবনের শেষ আশা-ভরসা তখনই বিলীন হয়ে যায়। তখন থেকেই বেঁচে থাকার সমস্ত আকর্ষণ হারিয়ে যায় আমার কাছে। 

আমার জন্য কষ্ট পাবে না ঠিকই কিন্তু কারো কারো কষ্ট দিয়ে আমি শান্তির পথ খুঁজে নিতে চেয়েছি। তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। ভালো  থেকো। সুখে থেকো...

ইতি,
তোমার বন্ধু খোকন

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক আউয়াল সেন্টার (লেভেল ১২), ৩৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত