মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫ ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫
টুকরো টুকরো সত্তা
ইমামুল ইসলাম
প্রকাশ: শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৫:১২ PM
কী খবর হুতোম? বই বাঁধাই চলছে?
-জ্বি, চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ি... ভাবছি আর লাজে মরি।  ভালো একটা রিভিউ দিও।
-জ্বি জলকন্যা, সাধ্যের সাধনে তোমার মননে এ বাঁধন চলবে। তবুও তোমায় বাঁধবে কে?
-বই পাঠিয়ে দেব, ঠিকানা দিও।
-বইয়ের সঙ্গে তুমিও আইসো অবেলায়, অবলীলায়, অবচেতনে। -কারো সাধ্যি নাই বাঁধার...।
-আছে সাধ্যি, তবে সেটা না বাঁধার সাধ্যি, টুকরো টুকরো মানুষকে কী দিয়ে বাঁধা যায়- তাও তো জানি না...।
-কাচের টুকরোর মতো উদ্ভট মানুষের জীবন; এগুলো একত্রিত করে যথাযথ রূপ দেওয়া কষ্টসাধ্য। অতএব ও পথে হাঁটিও না, হাঁটাইও না।
-তাই তো, তবুও মানুষ হাঁটে, কেউ বাঁধা পড়ে, কেউবা বাঁধন কেটে চলে, কেউবা মুক্ত মনে চলে...।
-মানুষ হাঁটতে হাঁটতে শেখে বলে। আর উদ্দেশ্যহীন হাঁটাই মানুষের নিয়তি।
-নিয়তির নয়নে নোনাজল, মাঝে মাঝে ঝরে, মাঝে মাঝে সময়ের তাপে শুকিয়ে যায়...।
-বাঁধা পড়েছে বলে আমরা যেটাকে মনে করি; আসলে সেখানে কোনো বাঁধন নেই। মুক্তিই মানুষের অন্তরসত্তায় লুকিয়ে থাকে কিংবা বাহ্যিকভাবে দেখতে পাই। এটাই নিয়তি...।
-ভেতরটার বন্ধন বড় জোড়ালো, ওখানেই আসল লীলাখেলা...বাইরের বাহুল্য নিয়তির কষে আটকে রাখে মন আর দেহ...। মন আর দেহের মেলবন্ধন ঘটে কীভাবে?
-দেহ চাইলে মনও চায়। আসলে দেহের সঙ্গেই মনের সংযোগ।
-দেহ মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, না মন দেহকে?
-আর আমরা মনকে সামনে এনে মিথ্যাচার করি। মনের শক্তি প্রবল, তাই এর অপব্যবহার হয় বেশি। আর বাদবাকি নিরাপত্তা, বিশ্বাস আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।
-ব্যক্তি কি তার মনের ওপর নির্যাতন চালায়? নাকি দেহের ওপর?
-হুম, চালায়। মানুষ যেটার উপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার চালায় সেইটা মন।
-তাহলে তো মন দ্বারা মনের ওপর অত্যাচার চলে... ব্যক্তিসত্তার উপলব্ধি তো মন দ্বারাই প্রকাশ পায়...।
-সব আঘাত, ঝঞ্ঝাট মনের উপর দিয়েই যায়...।
-আমার কাছে মনে হয়, মন দেহের ওপর অত্যাচার চালায়।
-মনের অত্যাচার দেহের উপর বাহ্যিকভাবে রূপ নেয়; কিন্তু সে আঘাত শুকিয়ে যায়, সেরে ওঠে একসময়। কিন্তু মনের ব্যথার কোনো চিকিৎসা নেই, নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া।
-নিজের ওপর যে নিজে অত্যাচার সেটা মন দ্বারা হয়। তবে অন্যের অত্যাচার, ভালোবাসা; সেটা আমাদের মানসিক জগতকে আঘাত করে কিংবা প্রশান্তি দেয়...।
-তোমার কোন কারুকাজে মূর্ছনা হয়?
মানুষের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ তা মোহ এবং মায়া থেকে আসে; তাছাড়া মুগ্ধতা এবং একাকিত্ব ঘোচানোর কৌশল হচ্ছে অন্যের প্রতি নিজের মনকে সঁপে দেওয়া। তবে এই যে কামনা, মন কেমন করা আবেগ, পাওয়ার আকাক্সক্ষা অদ্ভুতভাবে সুন্দর। মনকে অসম্ভব দলিত-মথিত করে যায়। এক ঝলমলে আকুতি আমার ভালো লাগে।
-আমার সেই দিন শেষ; ভয়ঙ্করভাবে আলোড়িত করার যে অনুভব খুইয়ে এসেছি। এখন আর কোনো কৌশল কাজ করে না। 
-কই দেখিতো এখনো মনে মনে ডুব দাও, না হয় ডুবে ডুবে মন ডুবাও।
-এগুলো লোক দেখানো। তবে আমি আবারও এমনটা হতে চাই কিন্তু গড়বড়ে লেগে যায়। 
-ওগুলোতে কারো কারো মনে ঝড় (টেমপেস্ট) বয়...তার খেয়াল রাখো?
-চারিদিকে ঝড় উঠুক, তুফান ঝড়ে তলিয়ে যাক সব। মানুষ তো ধ্বংস হয়েই আনন্দের সাধ মিটায়।
-বিনাশেই মুক্তি, জাগতিক মোহের মুক্তি...।
-এজন্যই ধ্বংস হতে এসব ফেসবুকে চালিয়ে যাচ্ছি। আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। 
-আনন্দেও বিনাশ, দুর্ভোগেও বিনাশ, কীসে ছাপ রাখা যায় জীবনের ছোবলে, বয়ে যাওয়া স্রোতে কিছু মুহূর্ত সাঁতার কেটে?
-জীবন মূলত কিছু মুহূর্ত, এইভাবে ডুব-সাঁতার কেটে বয়ে চলা। তারপর চিরন্তন ডুবজলে হারিয়ে যাওয়া...।
-তাই তো...। চিরন্তন ডুবজলে যাওয়ার আগে কীসের ছাপ রাখা যায়? তোমার গালে লালরঙ, ওই রঙে কোথাও এক চিরন্তন চুম্বন একে দাও...।
-দাগ রেখে যাওয়া একটি কৃত্রিম প্রথা; যেটা সবাই রেখে যেতে চায়। কিন্তু প্রকৃত দাগ কেঁটে যাওয়া সকলে রাখতে পারে না। এটা অদ্ভুতভাবে বিশেষ কৌশলের সাংকেতিক রূপ। নিজের গালের লালরঙ এটাও কোনো কোনো সময় বেইমানি করে। পছন্দসই আর পছন্দ না-ও হতে পারে।
-তোমার সঙ্গে আমি একমত প্রকৃত দাগ কেঁটে যাওয়া...। তোমার বদনে তো কালজয়ী দাগ প্রকৃতি এঁকে দিয়েছে...। ওই দাগে তোমার কোন দাগ নতুন আঙ্গিকে বুনন হবে?
-প্রকৃত দাগ নিয়তির নিয়মে আঁকা হয়ে যায়; আমি হয়তো উপলক্ষ্য মাত্র। প্রকৃতি তার আপন মহিমায় স্রষ্টাকে সৃষ্টি করতে দুহাত ভরে অন্ন দান করে। আমি যদি সেখান থেকে কিছুটা হলেও নির্যাস ধরতে পারি কিংবা মর্মে মাখতে পারি তাহলে দাগ রেখে যেতে পারব। তা নাহলে নয়। আর প্রকৃতির প্রচেষ্টা আকণ্ঠ আত্মস্থ করা সবার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
-এত গভীরতায় হাবুডুবুতে প্রাণের সহজাত স্বভাবে (যে ছাপ জন্মের সময় ইনস্টল হয়েছে এবং আস্তে আস্তে বিভিন্ন আবহে বর্ধন ঘটেছে) মোচড় দিচ্ছে। কোথাও তোমায় হেঁচড়া টানে জলে দেই ফেলে...
-আমি তো জলে ডুবেই আছি।
-তাহলে কি আমি জল থেকে তুলব? নাকি ডাঙা ছেড়ে জলকন্যা হবা?
-ছোটবেলায় আমরা জলের মধ্যে চুবানি খেলতাম। একজন আরেকজনকে ধরে জল থেকে তুলতাম আর চুবানি দিতাম। এটা অনেক সময় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হত।
-এখন চুবানি খাবা, না দিবা?
-নতুন করে খেলতে আবার অনুশীলনের দরকার পড়ে। এত এনার্জি কি আছে? তার চেয়ে ডুবেই থাকি।
-নিঃশ্বাস কারো বুকে থাকে... কিন্তু কারো বুকে মাথা রেখে (বেগানা নারীর বুকে) নিঃশ্বাস বন্ধ করা যায়- তাহলে সুখের মরণ বলে ভাবা যায়...।
-চরিত্রের দূষণে দুষ্ট মানবমন; আমাদের একূলে একটা জায়গার দোষই ধরা তা হলো চরিত্রে। এজন্য আমাদের জীবনে সুখ হইলো না।
-আমরা চরিত্র বলে যা ভাবি- তা সহজাত...। সুখ তো লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম-যমুনায় দ্বৈত ডুবে ...।
-এ তো দেখি তোমার মন্দ স্বভাব।
-তুমি জলকন্যা, তুমি তো সাঁতার জানো... তবে কেন হাতছানি দাও ডাঙায় চড়া মানবকে? তোমার হাতছানিতে নেশা জাগে যমুনার জলে...।
-আমার কী দোষ বলো। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ-এই সংকট জীবনে চিরন্তন। তবে কুমিরও ডাঙায় আসে বাঘ ধরতে। আর আমি মানবী, জলে ডুবে আছি সেই কবে থেকে। অথচ মিথ্যা দোষী করলে আমাকে। 
-তুমি জলমানবী, তোমার জলে স্রোত, জোয়ার-ভাটায় তোমার ওঠানামা চলে, জোয়ারে তুমি ভেজাও মোরে; ভাটায় মোরে শুকাও...।
-এ তোমার অন্তরের অসুখ; বউয়ের সঙ্গে গল্প করো।
-অন্তরের অসুখ বউ সারবে কেমনে? এ অসুখ জলকন্যার জলছানিতে মিটবে...।
-এজন্যই আমাদের দুঃখ ঘুচল না; লালন বলেছেন, ‘লালন মরল জলপিপাসায় থাকতে নদী মেঘনা।’ আহা! কী দারুণ সত্য কথা! তৃষ্ণা কখনো মিটবে না...। জলে ডুব দিতে পারলেই আবার আমরা ডাঙায় ওঠার জন্য ছটফট করি। এই হাহাকার কোনোদিন শেষ হবার নয়। 
-হাহাকারেই জীবনে ছন্দ-তাল-লয় বেজে উঠে, বিরামহীন এ ছন্দ, বিনাশেই এ ছন্দের মরণ...।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত