<
শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৯ ভাদ্র ১৪৩১
শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বাকরখানি
জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪, ১০:৫৫ AM
বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত খাবার বাকরখানি।বাকরখানির  ঐতিহ্য থেকে মুগ্ধ হয়ে  কবি প্রতুল মুখোপাধ্যায় তার কবিতায় লিখেছেন-

আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাকরখানি 
বেচো না বেচো না বন্ধু তোমার চোখের মণি। 
ঝিঙে বেচো পাঁচ সিকেতে হাজার টাকায় সোনা 
হাতের কলম জনম দুঃখী তাকে বেচো না। 

ঢাকার ইতিহাসে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ দখল করে আছে বাকরখানি। এটি হচ্ছে ময়দা দিয়ে তৈরি বিস্কুটজাতীয় এক প্রকার খাবার। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সকালের নাশতা হিসেবে বাকরখানি অতি প্রিয় একটি খাবার। ময়দার খামির থেকে বিস্কুট বানিয়ে তা মচমচে বা খাস্তা করে ভেজে তৈরি করা হয় বাকরখানি।

ছোটবড় বিভিন্ন আকারের বাকরখানি পাওয়া যায় পুরান ঢাকায়। বাকরখানিতে সাধারণত ময়দার সঙ্গে স্বাদবর্ধক আর কিছু দেওয়া হয় না। তবে চিনি দেওয়া বাকরখানিও একেবারে বিরল নয়। এটি এতই প্রসিদ্ধ  ছিল যে, একসময় উপহার হিসেবেও স্বজন আর প্রতিবেশীদের বাড়িতে পাঠানো হতো।

বাকরখানির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঢাকার ইতিহাস। ঢাকার নায়েব নাজিম মীর লুৎফুল্লাহ এর জামাতা ছিলেন মির্জা আগা বাকের। নবাব সিরাজদ্দৌলার অনুরক্ত বাকের ছিলেন বুজর্গ উমেদপুর ও সালিমাবাদ নামে দুটি পরগনার জমিদার। আগা সাদিক ছিলেন তাঁর পুত্র।

লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, আগা বাকের ও তাঁর স্ত্রী খানি বেগমের নামানুসারেই মচমচে এর নাম রাখা হয় ‘বাকরখানি’।  প্রথমে নবাব পরিবারের প্রিয় খাবার হিসেবে থাকলেও পরে এর বিস্তৃতি ঘটে এলাকাবাসীর মধ্যে।

সেই থেকে আজও আছে বাকরখানির রমরমা ব্যবসা । পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় তৈরি হয় বাকরখানি।  মুঘল শাসনামলে লালবাগ কেল্লার কাছে ঢাকায় সর্বপ্রথম বাকরখানির দোকান গড়ে ওঠে। পৌনে তিন শ বছরে  বাকরখানির এর বিচরণ এখন পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, চানখাঁরপুল, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, নাজিমউদ্দিন রোড, সাতরওজা, কলতাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। বাকরখানি এখনো অনেক পরিবারের  সকালের নাশতার প্রধান অনুষঙ্গ। আধুনিকতার এই সময়ে নানা রকমের ফাস্টফুডের ভিড়ে বাকরখানি এখনো অক্ষুণ মর্যাদায়। কলতাবাজারে প্রসিদ্ধ মায়ের দোয়া  বাকরখানি দোকান। স্বাদে ও মানে এ দোকানটির বাকরখানি শীর্ষস্থানীয় দোকানগুলোর মধ্যে একটি। দোকানের কর্মচারী বাদাল মিয়া জানান, মিষ্টি, মিষ্টিছাড়া, তিলে  ও ঘিয়ের- এ চার ধরনের বাকরখানি তাদের দোকানে পাওয়া যায়। আর স্বাদ ও মান ভেদে তাদের দোকানে ১৮০ থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি বাকরখানি পাওয়া যায়। প্রতিদিন  নাস্তার অন্যতম অনুষঙ্গ  বাকরখানি।

প্রতিদিন এ দোকানে দেড়  থেকে দুই মণ বাকরখানি বিক্রি হয়। বিক্রি ও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বাকরখানি তৈরিতে  যোগ হয়েছে   বাকরখানি প্রস্তুতকারক  আধুনিক মেশিন। আধুনিকতার জাঁতাকলে নানা রকমের লোভনীয় ফাস্টফুডের ভিড়ে ঐতিহ্যবাহী ঢাকাইয়া খাবার বাকরখানি এখনো সমাদৃত রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের কাছে। ঢাকার নবাব, মসলিন সহ অনেক ঐতিহ্যের বিলুপ্তি ঘটলেও বাকরখানি টিকে আছে দেশের মানুষের ভালোবাসায়।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক আউয়াল সেন্টার (লেভেল ১২), ৩৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত