২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলায় স্তব্ধ করেছিল গোটা দেশকে। নব্য জেএমবির হামলায় সেদিন প্রাণ যায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনের। নারকীয় সেই জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আজও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।
প্রথমে সাত জনের ফাঁসির আদেশ হলেও আসামিদের আপিল ও রায় পর্যবেক্ষণে সাজা কমিয়ে গত বছর আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলার তদন্ত করে ঢাকার সিটিটিসি। ২১ জনের সম্পৃক্ততা পায় তদন্ত সংস্থাটি।
" align=
এর মধ্যে পাঁচ জঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অভিযানে নিহত হয় আরও আটজন। জীবিত বাকি আটজনকে আসামি করে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এক বছর পর মামলার রায়ে, আট আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
এ মামলায় বিচারিক আদালতে পাঁচ বছর আগে দেওয়া রায়ে নব্য জেএমবির সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডও বহাল থাকেনি হাইকোর্টে। গত বছর সাত সদস্যকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করবে কি না রাষ্ট্রপক্ষ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
" align=
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, মামলার দুর্বলতার কারণে বিচারিক আদালতের রায় উচ্চ আদালতে টেকেনি। তবে আপিল করা হবে কি না প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলছে, রায়ের কপি পেলে তারা আপিল করবে।
মামলার দুর্বলতা ও দীর্ঘসূত্রতাকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি আলোচিত মামলা। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। অনেক সময় সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে প্রকৃত আসামিরা পার পেয়ে যায়। তাতে মামলার আসল উদ্দেশ্য সফল হয় না।
সেদিন যারা হামলার শিকার হয়েছিলেন
বিচারিক আদালত কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসাবে পরিচিত। ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে মামলার বৃত্তান্ত প্রস্তুত করতে হয়। ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
অন্যদিকে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর একসঙ্গে গত বছরের ১১ অক্টোবর শুনানি শেষ হয়। ৩০ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্স নামঞ্জুর করে আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।
" align=
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।
যা ঘটেছিল সেই রাতে
গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে লেকের ঠিক পাশেই হলি আর্টিজান বেকারি। গুলশানে বসবাসরত বিদেশি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী কিংবা চাকরিজীবীরা সেই রেস্তোরাঁয় হামেশাই যেতেন।
রোজার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে সেই রাতে অস্ত্র নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকে নৃশংসতা শুরু করে পাঁচ জঙ্গি। খবর পেয়ে ছুটে যান গুলশান থানা পুলিশের সদস্যরা। এর মধ্যেই জবাই করে এবং গুলি চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে।
নব্য জেএমবির সদস্যরা
হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা গুলি চালানোর পাশাপাশি গ্রেনেড ছোড়েন। তাতে আহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
কমান্ডো অভিযানে জঙ্গিদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অবসান হয় ভয়ংকর সেই রাতের। সেনা কমান্ডোদের নেতৃত্বে অপারেশন ‘থান্ডারবোল্ট’ এর মধ্য দিয়ে হলি আর্টিজানের জিম্মিদের মুক্ত করা হয়। অভিযানে নিহত হয় হামলায় অংশ নেয়া পাঁচ জঙ্গি।
এর ২৫ দিন পরেই রাজধানীর কল্যাণপুরে একটি ভবনে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় সিটিটিসি। সেখানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। এরপর একে একে পরিচালিত হয় নারায়নগঞ্জে অপারেশন হিট স্টর্ম-২৭, গাজীপুরের পাতারটেকে অপারেশন স্পেড-৮, সিলেটে অপারেশন টোয়াইলাইটসহ অনেক অভিযান।