প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ছয়-সাত লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসতসকদে মতে, প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নারী-পুরুষ চাইলেই নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত দিতে পারে।
চার মাস পরপর একজন সুস্থ মানুষ ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দিতে পারে। তাই রক্ত দিলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই নেই। তবে রক্ত নেওয়ার আগে এর সঠিক পরীক্ষা জরুরি।
একজন সুস্থ মানুষের শরীর থেকে একবারে এক ইউনিট রক্ত নেয়া হয়। এই রক্তদাতার দেহে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় তৈরি হয়ে যায়। তাই রক্তদানের ফলে দাতার কোনো ক্ষতি হয় না; বরং তার সুস্থতার হার বাড়ে দ্বিগুণ। তবে একজন রোগীকে বাঁচিয়ে তুলতে কোনো চিকিৎসকই আরেকজনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চান না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জটিলতা এড়াতে রক্তদানের আগে অবশ্যই কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। এ নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বয়স, ওজন, শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি।
রক্ত দেয়ার আগে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জেনে নিই-
১. বয়স: রক্তদানের পর জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে এমন মানুষকে রক্তদানে নিরুৎসাহিত করা হয়। সাধারণত ১৮-৬৫ বছরের মধ্যে সব সুস্থ মানুষই রক্ত দিতে পারবেন।
২. কম ওজন: রক্ত দিতে হলে নারীদের ৪৫ এবং পুরুষের ৪৮ কেজি ওজন থাকা বাধ্যতামূলক। তবে সবদিক বিবেচনা করে দেখা যায় ৫০ কেজির নিচে ওজন হলে আপনার কাউকে রক্তদান থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ।
৩. জ্বর বা সর্দি-কাশি: জ্বর, গলাব্যথা, সর্দি, কাশি, পেটের সমস্যা অথবা অন্য যেকোনো সংক্রমণে রক্তদান করা যায় না। তাই সম্পূর্ণ সুস্থসবল থাকলে তবেই রক্তদান করুন।
৪. জটিল রোগ: এইডস, যক্ষ্মার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হলে কোনো রোগীকে রক্তদান করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। হৃদরোগ, ক্যানসার, এপিলেপ্সি, হাঁপানি, অ্যালার্জি, কিডনির অসুখ থাকলেও রক্তদান করা যায় না। কারণ, এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত রোগীর জীবনের ঝুঁকি যেমন বাড়ায়, তেমনি বাড়ায় ওইসব জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।
৫. উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ থাকলে আপনার রক্তদানে নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের লো ব্লাড প্রেশার আছে, তারা রক্তদানের পর অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
৬. অন্তঃসত্ত্বা নারী: চিকিৎসাশাস্ত্রে অন্তঃসত্ত্বাদের রক্তদানের অনুমতি দেয়া হয় না। কারণ, বেশির ভাগ নারীই গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভোগেন। এ অবস্থায় রক্তদান করলে তাদের আয়রনের ঘাটতির ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
৭. সম্প্রতি রক্ত দিয়েছেন এমন ব্যক্তি: বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত একজন ব্যক্তির ২ মাস বা ৫৬ দিনে একবার রক্ত দেয়া উচিত। রক্তদাতার সুস্বাস্থ্য ও সেফটির জন্য এ নিয়ম মানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই এ সময়ের মধ্যে কোনো ব্যক্তি একবার রক্ত দিয়ে থাকলে দ্বিতীয়বার তাকে রক্তদান করার জন্য অনুমতি দেয়া হয় না।
৮. ট্যাটু: যদি সম্প্রতি আপনার শরীরে ট্যাটু অথবা শরীরের কোনো অংশে ছিদ্র (নাক, কান, ভ্রু, নাভি ফোটানো) করে থাকেন, তবে সেই তারিখ থেকে আগামী ছয় মাস রক্তদান করতে পারবেন না।
৯. গর্ভপাত হয়েছে এমন নারী: গর্ভপাত হয়েছে এমন নারীর ছয় মাস অতিক্রম না হলেও রক্তদান করা যাবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১০. টিকা: হেপাটাইটিস বি, রেবিজ টিকা নেয়ার পর ছয় মাস রক্তদান করা উচিত নয়। তবে কোভিডের টিকা নেয়ার দু-তিন সপ্তাহ পর রক্তদান করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, রক্তদান করার আগের ২৪ ঘণ্টায় মদপান করা চলবে না। সেই সঙ্গে কারও যদি ধূমপান করার বদভ্যাস থাকে, তবে রক্তদান করার দুই ঘণ্টা আগে ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে। আর তা না হলেই রক্তদানের পর শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে ।