মাঠে-ঘাটে, গাড়িতে ও বিমানে… সময় হলেই দাঁড়িয়ে যান নামাজে। কখনো নামাজ কাজা করেন না পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। অথচ দুর্নীতি ও বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন এই নামাজী ব্যক্তিই।
দেশের বেসরকারি গণমাধ্যমে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলী একজন ড্রাইভার হলেও তাঁর কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সামনে আসছে।
প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে, এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার ভেতর তাঁর দুইটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান রয়েছে এমন তথ্যও সামনে আসছে।
সৈয়দ আবেদ আলীর ফেসবুক পেজে নিজের একটি হোটেলের তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি নিজেই। ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।’
এই হোটেলের কাজে গিয়ে কুয়াকাটার সৈকতে তিনি নামাজ পড়ছিলেন। সেই নামাজের ছবি ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। সেটি এখন রীতিমতো ভাইরাল।
এছাড়া সিয়াম ফেসবুকে দুইটা গাড়ির ছবি পোস্ট করেছেন যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ ও ৪০ লাখ টাকা। সামান্য একজন গাড়িচালক কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন সেই প্রশ্নই এখন নেটিজেনদের।
সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন লিখেছেন, ‘আমার অফিসের গাড়ির ড্রাইভার যদি কামায় কোটি কোটি টাকা, তাহলে আমি তো কামিয়েছি বিলিয়ন বিলিয়ন!’
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, ‘পিএসসির প্রশ্নফাঁস করে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করা পিশাচ এই আবেদ আলী জীবন। প্রশ্ন বিক্রি করা টাকায় গড়ে তুলেছে নিজের সাম্রাজ্য। এই কুলাঙ্গারের ছবি ছড়িয়ে দিন। এরাই এই জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। সবাই চিনে রাখুক এই কুলাঙ্গারকে।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১২ বছরে বিসিএস পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের পেছনে জড়িত পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা হলেন, পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর, উপ-পরিচালক জাহাঙ্গির আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান। বিপিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁস করে অর্থ লোপাটে মেতে উঠতো সংঘবদ্ধ চক্রটি।