ঢাকার ইস্যুর নিয়ে শুটিং বন্ধ রেখেছেন টলিউডের নির্মাতারা। ঢাকায় এসে টলিউড ফেডারেশনকে না জানিয়ে শুটিং করার অভিযোগে আগামী তিন মাসের জন্য পরিচালক রাহুলকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখেননি টলিপাড়ার নির্মাতারাও।
পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার (২৯ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যান পরিচালকেরা। রোববার (২৮ জুলাই) রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডিরেক্টর্স গিল্ড এ খবর জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে,‘অধিকাংশ পরিচালক সদস্যের আবেগ ও মতামতকে গুরুত্ব এবং মান্যতা দিয়ে সংগঠনের কার্যকরী সমিতি ২৯ জুলাই থেকে যত দিন পর্যন্ত না পরিচালকদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বাংলা ভাষার সমস্ত শুটিং ফ্লোরে সদস্যদের অনুপস্থিত থাকতে অনুরোধ করছে। বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য ভাষার ক্ষেত্রে এই অনুরোধ প্রযোজ্য নয়।’
সেই সূত্রে আজ সকাল থেকে টলিপাড়ায় ধারাবাহিক থেকে সিনেমা, সব শুটিং বন্ধ।
গতকাল সকাল থেকেই ডিরেক্টর্স গিল্ডের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন। সেখান থেকে জানা গেছে, ‘শনিবার, ২৭ জুলাই রাহুল মুখার্জির পরিচালনায় একটি বাংলা সিনেমার শুটিং টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে ছিল। ফেডারেশনের আওতাভুক্ত কলাকুশলীরা সেই শুটিংয়ে উপস্থিত হননি। ফলে শুটিং করা যায়নি এবং ওখানে উপস্থিত পরিচালক, অভিনয়শিল্পী সকলে অপমানিত হন।’
এ প্রসঙ্গে অগ্রজ পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির হয়, কলাকুশলীরা রাহুলকে নির্দিষ্ট সিনেমার পরিচালক হিসেবে মেনে না নিলে, তার সঙ্গে শুটিং করতে রাজি না হলে পরিচালকেরা ২৯ জুলাই থেকে অসহযোগিতায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান থেকে তারা নড়বেন না।
এ বিষয়ে পরিচালকদের ভাষ্য, ‘আমরা মনে করি, ফেডারেশন একটি ইন্ডাস্ট্রির একচ্ছত্র নিয়ামক সংস্থা হতে পারে না। ভুলভ্রান্তি, সমস্যা যাই হয়ে থাক, তার সমাধান না করে কাউকে জোর করে কর্মবিরতি নিতে বাধ্য করা অসাংবিধানিক।
বিশেষত, ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমাদের ডিরেক্টর্স গিল্ড রাহুল মুখার্জির ওপর আরোপিত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরও যেভাবে বাকি গিল্ডের কলাকুশলীরা অসহযোগিতার পথে হেঁটেছেন তা শুধু রাহুলের জন্য নয়, আমাদের প্রত্যেক পরিচালকের জন্য অপমানজনক এবং ক্ষতিকারক। আমাদের এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ আগামীতে যদি কোনো পরিচালক কোনোরকম সমস্যার মুখে পড়েন, তার পাশে সমস্ত পরিচালকরা দাঁড়াবেন, সেই অঙ্গীকারও আমরা করছি।’
ইতোমধ্যে এই বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালকদের সই সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মতি জানিয়ে সই করেছেন— রাজ চক্রবর্তী, কৌশিক গাঙ্গুলি, অনীক দত্ত, অতনু ঘোষ, দেবালয় ভট্টাচার্য, পরমব্রত চ্যাটার্জি প্রমুখ।
বলা দরকার, টলিউডের এই অচলাবস্থার সূত্রপাত বাংলাদেশ তথা ঢাকা থেকে। গত বছরের ৪ অক্টোবর কলকাতায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তিন বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৩০টি কনটেন্ট নির্মাণ করবে প্ল্যাটফর্মটি। এর মধ্যে ‘লহু’ নামের একটি সিরিজের কাজও শুরু হয়েছিল।
রাহুল মুখার্জির পরিচালনায় সিরিজটিতে চুক্তিবদ্ধ হন বাংলাদেশের আরিফিন শুভ ও পশ্চিমবঙ্গের সোহিনী সরকার। তবে টলিউডের ফেডারেশনগুলোর অতিরিক্ত পারিশ্রমিকসহ বিভিন্ন দাবির কারণে কলকাতায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় চরকি। ফলে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় ‘লহু’-এর শুটিং।
জানা গেছে, সেই সিনেমার বাকি অংশের শুটিং শেষ করতেই কয়েকজন কলাকুশলীসহ বাংলাদেশে এসেছিলেন রাহুল। প্রথমে শুটিংয়ের বিষয়টি আড়াল করলেও পরে বাংলাদেশে শুটিং করার কথা স্বীকার করেন নির্মাতা।
এ ধরনের ঘটনা আগে টলিপাড়ায় ঘটেনি। তাই রাহুলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্ন তুলেছেন অন্য নির্মাতারাও। পরিচালকদের বড় একটা অংশ মনে করছেন, একজন পরিচালকের সমস্যায় বাকিরা না দাঁড়ালে ভবিষ্যতে আরো খারাপ দিন আসতে পারে।
এদিকে এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে এক বৈঠক ডাকা হয় প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জির বালিগঞ্জের বাড়িতে। সেখানেই হাজির হন টলিপাড়ার পরিচালক-প্রযোজকেরা। যাদের মধ্যে ছিলেন রাজ চক্রবর্তী, শিবপ্রসাদ মুখার্জি, গৌতম ঘোষ, বিরসা দাশগুপ্ত, সুদেষ্ণা রায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, সুব্রত সেনসহ অন্যরা।
এই বৈঠক প্রসঙ্গে রাজ বলেন, ‘রাহুলের কী হবে এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে। আমরা পরিচালকেরা এই বিষয় নিয়ে চিন্তিত। আশা করছি, টেকনিশিয়ান বন্ধুদের সহযোগিতা পাব।’