ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক ছাত্রলীগ কর্মীকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে ধাওয়া দিয়ে ক্রিকেট মাঠে নিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম জাকি ইসলাম। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ও বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাকি বিকালের দিকে তার এবং বন্ধু সাদীদ খান সাদি (অর্থনীতি ১৯-২০), সাজ্জাদ সাকিব (ফিন্যান্স ১৯-২০) এবং বড় ভাই আকিবুর রহমান আদরের (ইংরেজি ১৮-১৯) হলের রুমে থাকা জিনিসপত্র নিতে আসেন। এর মধ্যে, জাকি ব্যতীত বাকিরা ইবি ছাত্রলীগের পদধারী নেতা।
বিষয়টি জানার পর শিক্ষার্থীরা সাদ্দাম হোসেন হল থেকে ‘স্বাধীন এই বাংলায়, ছাত্রলীগের ঠাঁই নাই' স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে এসে তাকে ঘেরাও করে এবং স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে জাকির বন্ধু আইন বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সাফওয়ান সাজভীকে চড়-থাপ্পড় দেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকালে জাকি রুম থেকে নিজের এবং বঙ্গবন্ধু হলের ইন্টারন্যাশনাল ব্লকের আরও দুই ছাত্রলীগ নেতার জিনিসপত্র নিতে আসেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে যাবতীয় জিনিসপত্র পিকআপ ভ্যানে উঠালেও বের হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জাকি ও তার বন্ধু সাজভীর বাগবিতণ্ডা হয়৷ এক পর্যায়ে সাজভীর গায়ে হাত তুললে আতঙ্কিত হয়ে বঙ্গবন্ধু হল গেট থেকে দৌঁড়ে পুকুরের মাঝ দিয়ে ক্রিকেট মাঠের দিকে চলে যান জাকি।
পুকুরের অপর পাশ থেকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল তাকে ধাওয়া দিয়ে টিএসসিসির দিকে নিয়ে যায়। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক সজীব ইসলাম ও পারভেজ হাসান চয়ন, আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ জাকারিয়া, মুজাহিদুল ইসলাম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফরহাদ রেজা ওসামাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জাকিকে মারধর করেন।
পরবর্তীতে তাকে টিএসসিসির ১১৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, তানভীর মন্ডলসহ কয়েকজন কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। সেইসঙ্গে হলের জিনিসপত্র ক্যাম্পাস থেকে নিরাপদে বের করে নিতে সাহায্য করেন।
হলে থাকাকালীন ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ছাত্র আন্দোলনের সময়ে জাকি হল ছেড়ে কুষ্টিয়া শহরে মেসে থাকতেন বলে একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘আজকের ঘটনাটি একদমই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এমন ঘটনা মেনে নেওয়ার সুযোগ নাই। যদি এই ঘটনায় আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেলের কেউ জড়িত থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেব আমরা।’
ভুক্তভোগী জাকি বলেন, ‘আমি যা করেছি সব প্রকাশ্যে করেছি। লুকিয়ে কিছু করি নাই৷ আমি আমার জিনিসপত্র নিতে আসছিলাম। হলে থাকতে হইলে সবাইকেই ছাত্রলীগ করতে হতো, আমিও সেরকম একজন ছিলাম। পদপদবি না থাকলেও আমাকে মারধর করা হয়েছে। এভাবে কেন হেনস্তা করা হলো? আমি ক্যাম্পাসে থাকাকালীন ভালো কাজ করেছি। কখনও কারও ক্ষতি করি নাই। আমি এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আর কিছু বলতে পারছি না।’