বিশ্ব দরবারে আমাদের ফুটবল মান এখনও হতাশাজনক। এই হতাশার মধ্যে দেশের মেয়েরা গৌরবময় সাফল্য বয়ে এনছে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারী ফুটবলের উত্থান একটি ইতিবাচক বিপ্লবসাধন। আর এই বিপ্লবের কারিগররা হলেন এ দেশের অদম্য মেয়েরা। তারা প্রমাণ করেছেন বাঙালি মেয়েরা কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। তাদের পক্ষে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঘটনা ঘটানো খুবই সম্ভব। নারী ফুটবলাররা বাঙালির ফুটবলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়েদের ফুটবল খেলাটা কখনোই সহজ ছিল না। সমাজের নানা বাধা পেরিয়ে, নেতিবাচক সমালোচনা সহ্য করে এবং ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে হিমালয় জয় করলেন সাবিনা ও কৃষ্ণারা।
গত সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে চারবারের ফাইনালিস্ট নেপালকে উড়িয়ে ৩-১ গোলে দিয়ে প্রথমবার সাফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। পুরুষ ও নারীদের সাফের ইতিহাসে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ১৯ বছর আগে ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। তারও আগে ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) ফুটবল ইভেন্টে এই রঙ্গশালা স্টেডিয়ামেই নেপাল জাতীয় পুরুষ দলকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের হাজার বিশেক দর্শককে নিস্তব্ধ, নিঃসাড় করে দিয়ে লাল-সবুজের কেতন উড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সেরার মুকুট মাথায় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলার বাঘিনীরা।
নিঃসন্দেহে এই মেয়েরাই আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের শ্রেষ্ঠ সাফল্যের দূত। ভবিষ্যতে আমাদের ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার কারিগর। অর্থনৈতিকভাবে সংকটগ্রস্ত সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে অধঃপতিত এই দেশে মেয়েরাই বাংলাদেশের স্বপ্ন। শক্তি তো মাঠেই প্রমাণ হয়েছে। সেই শক্তিপরীক্ষায় আমাদের মেয়েরা বিজয়ী। সেই সঙ্গে বিজয়ী হয়েছে দেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। অবশ্যই তাঁদের পাশে আমাদের সকলের দাঁড়াতে হবে।