আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নওগাঁয় জমে উঠতে শুরু করেছে ভোটের ডামাডোল। কে হচ্ছেন, কোন দলের প্রার্থী তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ও সাধারণ জনগণের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা। জেলার ৬টি আসন দখলে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। তাই এবারও সব আসন ধরে রাখতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ; আর হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। বড় দুই দলেই রয়েছে প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী। সব আসনেই জয়ের স্বপ্ন দেখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে জাতীয় পার্টি একটি আসন ছাড়া তেমন কোনো প্রভাব নেই। এদিকে ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতে রয়েছেন ৪ জন হেভিওয়েট প্রার্থী। নওগাঁ-১ আসনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ আসনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৪ আসনে সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মুহা. ইমাজ উদ্দীন প্রামানিক এবং নওগাঁ-৬ আসনে সাবেক গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রী আলমগীর কবির।
নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) : অতীতে এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও বিগত ২০০৮ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত সংসদ সদস্য রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি এলাকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পর পর তিনি দুইবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় এলাকায় রয়েছে বেশ সুনাম রয়েছেন। এছাড়াও এ আসনে নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এনামুল হকের ছেলে উপজেলা কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা রেজাউল হাসান রানার নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে রয়েছেন বেশ কয়েকজন তারা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরী, নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ আহমেদ মোজাম্মেল চৌধুরী, পোরশা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লায়ন মাসুদ রানা, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর নূর। অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা সভাপতি আকবর আলী কালুর নাম শোনা যাচ্ছে।
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব শহীদুজ্জামান সরকার। এছাড়াও মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ড. ইঞ্জিনিয়ার এইচ.এম আখতারুল আলম, জেলা কৃষক লীগের সাবেক উপদেষ্টা বিএম আব্দুর রশিদ। বিএনপি থেকে সাবেক ৩ বারের সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী। আর জাতীয় পার্টি থেকে রয়েছেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জেলা সভাপতি অ্যাড. তোফাজ্জল হোসেন।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী): এ আসনে রয়েছেন মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগে শক্তিশালী প্রার্থী হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও সাবেক সিনিয়র সচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেন। এছাড়াও রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সখিনা সিদ্দিক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সচিব এনামুল কবীর। এদিকে বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা রবিউল আলম বুলেট এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও সাবেক এমপি মরহুম আকতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক বিএস হুমায়ন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
নওগাঁ-৪ (মান্দা): জেলার সবচেয়ে বড় আসন এটি। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। একটি উপজেলায় একটি সংসদীয় আসন। এখানে আওয়ামী লীগের ৬ষ্ঠ বার মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রমানিক। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়াও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল বাকী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এস এম ব্রহানী সুলতান মাহমুদ গামা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নাহিদ মোর্শেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল লতিফ শেখ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মির্জা মাহাবুব বাচ্চু। অপরদিকে, ৩ বারের সাবেক সংসদ সদস্য সামসুল আলম প্রামানিকের কয়েক মাস আগে তার মৃত্যুতে বিএনপির অনেক ক্ষতি হয়েছে। তারপরও বিএনপি থেকে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মতিন। এছাড়াও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকরামুল বারী টিপু। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন মন্ডল রয়েছেন।
নওগাঁ-৫ (সদর): ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় প্রথম বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে মরহুম আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সব সময় মাঠে রয়েছেন ও কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি শাহীন মনোয়ারা হক, জেলা আওয়ামী লীগর সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাড. খোদাদাদ খান পিটুর নাম শোনা যাচ্ছে। এদিকে বিএনপি থেকে রয়েছেন গত নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু। সাবেক মেয়র আলহাজ্ব নজমুল হক সনি ও যুগ্ম আহবায়ক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপনের নাম শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে জেলা কমিটির সদস্য সচিব ইফতারুল ইসলাম বকুল রয়েছেন।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর): পর পর দুইবার আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত ইসরাফিল আলমের মৃত্যুর পর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রানীনগর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন হেলাল। তিনি বর্তমানে সংসদ সদস্য রয়েছেন। এছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের সহধর্মির্ণী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পারভীন সুলতানা বিউটি। এছাড়াও রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহিন মনোয়ারা হক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ওমর ফারুক সুমন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নওশের আলী। এ আসন বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন সাবেক মন্ত্রী আলমগীর কবির। তিনিও এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। এদিকে বিএনপি থেকে গত নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস.এম রেজাউল ইসলাম রেজু। এছাড়া জেলা তাঁতীদলের সভাপতি এছাহক আলী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলুর নাম শোনা যাচ্ছে। এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে রানীনগর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসান আলীর নাম শোনা যাচ্ছে।
বাবু/জেএম