
২০২১-০৪-০৬ ১৩:১১:০৫ / Print
ফুল কে কে না ভালোবাসে। আর এমন ফুলের অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখতে কে না আসে। হাজারো মানুষ প্রতিদিন ছুটে আসেন এই সুন্দর দৃশ্য দেখতে। কেউ আসে কিনতে আবার কেউ আসে দেখতে আর, কেউ আসে চাষ করতে, আবার কেউ তার সৌন্দর্য দেখতে। এজন্য সবাই ফুলের কাছে ছুটে যান। আর এ ফুল যদি হয় শস্য ক্ষেতের সুন্দর হলুদ সূর্যমুখী, তাহলে তো কথাই নেই।
এমনই এক অপরূপ চিত্র দেখা যায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরশিলাসী এলাকায়। যেখানে ফুলপ্রেমী মানুষ প্রতিদিন জড়ো হন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য দেখতে। ‘সূর্যমুখীর বৈজ্ঞানিক নাম হলো হেলিয়ান্স অ্যানুয়াস। সূর্যমুখী ফুল অল্প পরিশ্রমে চাষ করা যায়। রোগবালাই খুব কম হয়। ফুলের বীজ থেকে তেল তৈরি হয়। এতে থাকা লিনোলিক এসিড ভালো রাখে হৃদপিন্ডকেও।
তাছাড়া কোলস্টেরলমুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী সূর্যমুখীর তেল। ব্রহ্মপুত্রের নদের পাড়ে অনাবাদি ও পতিত জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করে সাড়া ফেলেছেন যুবলীগ নেতা তাজমুন আহাম্মেদ ও মফিদুল ইসলাম টিপু নামে দুই তরুন। মনোরম সুন্দর পরিবেশ শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করেত চাইছেন না কেউ। সেইসঙ্গে সেলফি, গ্রুপ ছবি তো আছেই। নদের পাড়ের এই হলুদ রঙ ছবিতে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সূর্যের ঝলকানিতে হলুদ রঙে ঝলমল করছে চারপাশ সূর্যের দিকে মুখ করে আছে ফুল, সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে হাসলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আবর্তনে তার দিক পরিবর্তন হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষি প্রণোদনার আওতায় চলতি মৌসুমে গফরগাঁওয়ে এ বছরই প্রথম ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। রোগবালাই রোধে ও পরিপক্ক বীজ পেতে জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রয়োগ করতে হয় ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার। সূর্যমুখী ফুলের বীজের রঙ কালো। প্রতিটি মাথায় বীজের সংখ্যা থাকে ৫০০-৬৫০টি। বীজ রোপণ থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিন লাগে ফসল সংগ্রহ করতে। আবহাওয়া ও মাটি ফুল চাষের উপযোগী হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। আর সূর্যমুখী দেখতে সুন্দর হওয়ায় দর্শনার্থীরাও বাগানে গিয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় আগামীতে সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহী হবেন বলে কৃষি অফিস ধারনা করছেন ।
ব্রহ্মপুত্রের নদের পাড়ে সূর্যমুখী ফুলের বাগান মালিক যুবলীগ নেতা তাজমুন আহম্মদ বলেন, শখ থেকেই কৃষির প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। তাই মূলত এ বছর ৩২ কাটা জমিতে পরীক্ষামূলক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন। পরীক্ষামূলকভাবে সফল হলে আগামীতে আরও অধিক পরিমান জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করার আশা রয়েছে। ফুল দেখতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করছেন। তিনি আরও বলেন তার এই সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন সূর্যমুখী চাষ করার। সূর্যমূখী ফুল থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য এ তেল খুবই উপকারী। এছাড়া ফুলের গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং যে খৈল পাওয়া যায় তা মাছ ও গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসা এক দর্শনার্থী শাবানা আক্তার বলেন, ঘরবন্দী থাকতে থাকতে আর ভালো লাগেনা ব্রহ্মপুত্রের নদের পাড়ে এত সুন্দর একটা ফুলের বাগান দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায় এমন একটু মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে ও বাগান ভরা ফুল দেখতে এখানে আসা। তবে এখানে ব্রহ্মপুত্রের নদের পাড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর লাগছে। তাই পরিবারের সবাই মিলে এ মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন বিকালবেলা চলে আসি। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষে রোগবালাই খুব কম হয়। এ ফুলের বাগান তৈরিতে খরচ বিঘা প্রতি কম । সূর্যমুখী ফুলের বাগান যাতে আরও বৃদ্ধি পায়, সে জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
বাবু/জেআর