সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৮ বৈশাখ ১৪৩২
সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫
নেছারাবাদে নার্সারির রাজ্য অলংকারকাঠিতে বদলে গেছে মানুষের জীবন ধারা
নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৪, ২:০৭ PM
নেছারাবাদে নার্সারি বিপ্লবে কর্মস্থান ঘটছে হাজার হাজার মানুষের। দিন দিন এ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই বদলে যাচ্ছে উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনধারা। এখানকার প্রায় সব মানুষই নার্সারি করে বারো মাস ফল,ফুল ও কাঠের চারা উৎপাদন করছেন। এ থেকে তারা সাবলম্বি হওয়ার পাশাপাশি ক্রমেই হয়ে উঠছেন সচ্ছল। স্থানীয় নার্সারি ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, এ মৌসুমে তারা প্রায় শতকোটি টাকার নার্সারিতে উৎপাদিত ফুল ও ফুলের চারা বিক্রি করেন। তারা নার্সারি দিয়ে নিজে সচ্ছল হয়ে পাশাপাশি অন্যজনকে দিয়েছেন কর্মের সন্ধান। যে কারনে নার্সারি সমৃদ্ধ এলাকায় কমে গেছে বেকার ও দারিদ্রতার সংখ্যা।

উপজেলার স্বরূপকাঠি-বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য নার্সারি। রাস্তার যেদিকেই চোখ যাবে কেবল ফুল ফল কাঠের চারার নার্সারি। উপজেলার ৩৮টি গ্রামে ৫০০ হেক্টর জমিতে কয়েক শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে। তবে নার্সারি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে স্বরূপকাঠি সদর ইউনিয়নের অলংকারকাঠি গ্রাম। এ গ্রামের নার্সারি সমৃদ্ধ এলাকায় গেলে দেখে যেকারো মনে হতে পারে এযেন নার্সারি গ্রাম। নভেম্বর থেকে পুরো মার্চ মাস পর্যন্ত নার্সারিতে ফোটা বাহারি ফুলে ঢেকে যায় শতাধিক নার্সারি। দেখে মনে পারে যেন ফুলের গালিচায় চাপা পড়েছে পুরো গ্রাম।

অলংকারকাঠি গ্রামের বাসিন্দা হাসি বেগম(৪০) বলেন, স্বামীর একার আয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হত। এজন্য পূর্বে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। এখন আমি এখানকার নার্সারিতে কাজ করি। প্রতিনিয়ত দুইশত টাকা মজুরি পাই। 

জানাগেছে একসময় এখানকার মানুষ নেশার বসে হাতে গোনা কয়েক প্রকারের দেশি ফুল,ফল ও কাঠের চারার বীজ দিয়ে নার্সারি তৈরি করেছিল। এখন কয়েক দশকে তারা সেই নেশা থেকে নার্সারি বাগানকে পেশায় রূপান্তর করে ফেলেছেন। এ ব্যবসায় তেমন কোন পরিশ্রম নেই বিধায় গ্রামের বেশির ভাগ পরিশ্রমি মানুষই জড়িয়ে গেছেন নার্সারি ব্যবসায়। অনেকে প্রথমে নিজের জমিতে নার্সারি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। দিন দিন এ পেশা লাভজনক হওয়ায় এখন অনেকে নিজের জমির সাথে বর্গা জমি নিয়ে দিন দিন পরিধি বৃদ্ধি করেছেন নার্সারির। বাগানে উৎপাদন করছেন দেশি বিদেশি বাহারি প্রজাতির ফুল,ফল ও কাঠের চারা।

স্থানীরা জানান, প্রতিটি নার্সারি মালিক নিজে এবং সহায়ক শ্রমিক কাজে লাগিয়ে কাজ করছেন নার্সারিতে। এভাবে কাজ করে ভাগ্য বদলে ফেলেছেন অনেকে। কেউবা আবার স্বপ্ন বুনছেন ভাগ্য উন্নয়নে। মালিকের পাশাপাশি শ্রমিকরাও কর্মসংস্থান পেয়েছেন এখানে কাজের মাধ্যমে। কয়েকজন শ্রমিক জানান, অন্য কাজের চেয়ে নার্সারির কাজে কষ্ট কম। তাছাড়া সারা বছরই কাজ থাকে এখানে। বেকার হয়ে বসে থাকার ভয় নেই এখানে।একারনে নার্সারির কাজে স্বচ্ছন্দবোধ করেন অনেকে। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীরাও অবসরে কাজ করেন এখানে। শ্রমিকদের অনেকে জানান, নার্সারির কাজে তেমন কোন প্রশিক্ষনের প্রয়োজন হয়না। অভিজ্ঞদের কাজ দেখেই যে কেউ সহজে রপ্ত করে নিতে পারেন একাজ।

নার্সারি ব্যবসায়ি মাইনুদ্দীন সিকদার সুজন বলেন, তিনি বিশ বছর যাবত নার্সারি পেশায় যুক্ত। একসময় অন্যর নার্সারিতে তিনি কাজ করতেন। এখন নিজে অন্যর জমি বর্গা নিয়ে নার্সারি তৈরি করেছেন। তার নার্সারিতে ১৫-২০ ধরনের ফুল,ফল ও কাঠের চারা আছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ভরা ফুলের মৌসুম। এ পাচ মাস নার্সারি থেকে তিন লক্ষাধিক টাকার ফুল সহ চারা বিক্রি করার আশা প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে নার্সারি গ্রাম অলংকারকাঠিতে রাস্তার দু'ধারে মাঠজুড়ে সারি সারি বিস্তৃিত নার্সারি। সব নার্সারিতে রয়েছে ফুল,ফল,কাঠ ও ঔষধি গাছের চারা। তবে বছরের এ মৌসুমে প্রতিটি নার্সারি থাকে ফুলে ফুলে সজ্জিত। দেখে মনে হয় এ যেন ফুলের চাদরে ঢাকা একটি গ্রাম। তাই এসময়ে নার্সারিতে বেচা বিক্রির ধুম পড়ে। প্রতিনিয়ত স্থানীয় লোকজন সহ দূর-দূরান্ত থেকে নার্সারি দেখতে আসে সব বয়সি মানুষ। কেউ ছবি তুলে। কেউবা আবার ঘুরে ঘুরে দেখে ফুল ও ফলের চারা কিনে যান গন্তব্যে। চলে খুচরা পাইক্রারি কেনা বেচা।

নার্সারিতে বেড়াতে আসা তাহমিনা ফ্লোরা নামে এক ফুল প্রেমি আমেরিকা প্রবাসি বলেন, আমেরিকায় তার বাসার সামনে বাগান আছে। তবে ওখানে নির্দিষ্ট কয়েকটি ফুল ছাড়া আর কোন ফুলের চারা পাওয়া যায়না। তাই ফুল চারা কেনার জন্য তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকায় অনেক দাম। শুনেছি ফুলের রাজ্য নেছারাবাদের অলংকারকাঠি গ্রাম। তাই নিজের মত করে বাগান ঘুরে ফুল চারা কিনবেন। তিনি বলেন বাগানের পরিবেশ খুবই সুন্দর। চারা দামেও অনেক সস্তা।

স্থানীয় নার্সারি ব্যবসায়ি মো: জাহাঙ্গির সিকদার বলেন, তার দুই বিঘা জমিতে ফুল ফলের নার্সারি করেছেন। তার নার্সারিতে সব ধরনের ফুল,ফল,ঔষধি চারা সহ কাঠের চারা রয়েছে। বাগানে তিনি সহ পাচ জন শ্রমিক কাজ করেন। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফুল সহ ফুলের চারা বিক্রির ধুম পড়ে। তিনি বলেন এই পাচ মাসে তিন লক্ষাধিক টাকার ফুল চারা বিক্রি হবে।

মো: শাওন (৪৫) নামে এক নার্সারি ব্যবসায়ি বলেন, অলংকারকাঠি গ্রাম জুড়ে স্বরূপকাঠি বরিশাল সড়কের এপাড় ওপাড় মিলিয়ে দেড়শতাধিক নার্সারি রয়েছে। প্রতিটি নার্সারিতে ৫-৭ জন শ্রমিক প্রতিনিয়ত কাজ করে। এখন ফুলের মৌসুমে সব নার্সারিতেই কর্মব্যস্ততা বেশি। সব মিলিয়ে একটি গ্রামে এসব নার্সারিতে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে বেকারত্বের হার অনেক কম। তবে নার্সারি ব্যবসায় সরকারি সুযোগ সুবিধা আসলে এ পেশায় মানুষ অল্পতে সাবলম্বি হতে পারে।

নেছারাবাদ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ জানান, নেছারাবাদ উপজেলায় মোট পাঁচশত হেক্টর জমিতে নার্সারি রয়েছে। সব মিলিয়ে এ পেশায় ৬-৭ হাজার লোক যুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি এসব নার্সারিতে অনেক নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, তারা নার্সারি মালিকদের সাথে থেকে অনেক প্রশিক্ষন ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত