শুক্রবার বাদ ফজর মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় পর্ব একদিন আগেই শুরু হয়েছে মাওলানা সা’দ কান্ধলবী অনুসারী নিজামুদ্দিন মারকাজের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। বৃহস্পতিবার বাদ যোহর পাকিস্তানের মাওলানা হারুনের বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক সায়েম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার বাদ আসর বয়ান করেন তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি ভাই ওয়াসিফুল ইসলাম সাহেব, মাগরিবের পরে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার সাহেব।
শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে দেশের বৃহত্তর জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জুমার আগে জুমার ফাজায়েল বয়ান করবেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ সাহেব। জুমার জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ। জুমার পরে আরবী ভাষায় বয়ান করবেন শেখ মোফলে, বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ মনসুর, বাদ আসর বাংলায় বয়ান করবেন মাওলানা মোশাররফ সাহেব, বাদ মাগরিব বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ, বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাশেম।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে বুধবার রাত থেকেই জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। কোন জেলার মুসল্লি কোন খিত্তায় অবস্থান করবেন সে দিকনির্দেশনাও ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। ময়দানে মুসল্লিদের অবস্থানও জেলাওয়ারি নির্দিষ্ট খিত্তায় (ভাগে) বিভক্ত করা হয়েছে। খিত্তা পরিচালনার জন্য রয়েছেন খিত্তার জিম্মাদাররা।
দ্বিতীয় পর্বে শতাধিক দেশের প্রায় ১০-১২ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বিরা। দেশি-বিদেশি ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামগণ ছয় উসুল যথা-ঈমান, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমীন, তাসহীহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক মূল্যবান বয়ান রাখছেন। মূল বয়ান সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করা হচ্ছে। এছাড়াও বিষয় ও পেশাভিত্তিক আলোচনা, নতুন জামাত তৈরি, চিল্লায় নাম লেখানো এবং যৌতুকবিহীন বিয়ের মতো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে দ্বিতীয় পর্বেও।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহাবুব আলম বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আইন-শৃঙ্খলা অবনতির আশংকা নেই। সবপক্ষের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। আশা করি শান্তিপূর্ণ ভাবে ইজতেমা সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্বের মত দ্বিতীয় পর্বের জিএমপির পক্ষ থেকে ৬ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, এপিবিএন, নৌপুলিশ মোতায়ন আছে। এক প্রশ্নের উত্তরে জিএমপি কমিশনার বলেন, মাওলানা সাদ আসবেন কি না, সে বিষয়ে কোন তথ্য নেই আমার কাছে। তবে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা চেষ্টা করি। আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কিছু করতে দেয়া হবে না।
দ্বিতীয় পর্বে বিদেশি মেহমান
বিদেশি মুসল্লিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় বিদেশীদের প্রতিটি খিত্তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৫৩টি দেশের ৩ সহস্রাধিক বিদেশি মুসল্লি ময়দানে অবস্থান করছেন।
দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমায় ২ মুসল্লির মৃত্যু
বিশ্ব ইজতেমায় বৃহস্পতিবার বিকেল বিকেল পর্যন্ত ২ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, শেরপুর জেলা সদরের মৃত মহেজদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম (৬৫) ও নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামের মৃতু সুলতানের ছেলে আব্দুল হেলিম (৬২)। তারা উভয়ে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়।
ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প
টঙ্গীর অলিম্পিয়া স্কুল মাঠ এলাকায় মুসল্লিদের জন্য হামদর্দ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিভিল সার্জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ইউনানী হারবাল মেডিক্যাল সোসাইটি, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জনকল্যাণ ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প, ইবনে সিনা, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প বৃহস্পতিবার থেকে মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠান্ডা ও পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত।