টাকার বিনিময়ে শ্রুতি লেখক দিয়ে দু’দিন পরীক্ষা নেওয়া এবং তৃতীয় দিন টাকা না পাওয়ায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় দায়িত্বের অবহেলায় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সেইসাথে কেন্দ্র সচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বহিস্কৃত শিক্ষার্থীর নাম আল জুমরাত উল হাসান। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩ মার্চ গঙ্গাচড়া উপজেলার-বি (৫১৯) ধনতলা আর .ইউ স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে। এ ঘটনায় গত ৫ মার্চ রংপুরের জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন ওই পরীক্ষার্থীর বাবা এ্যাডভোকেট মো. শামছুল হুদা।
ওই অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরাদহ স্কুল এন্ড কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী আল জুমরাত উল হাসান শরীরিকভাবে অসুস্থ। এই অসুস্থ অবস্থায় সে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। বি (৫১৯) ধনতলা আর .ইউ স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে তার পরীক্ষার রোল নং-১৯৬২৫৩ এবং রেজি নং-২১১৭৬২২৯৪৯। আল জুমরাত উল হাসান চারটি বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর পঞ্চম দিন গণিত বিষয়ে পরীক্ষা চলাকালে দুপুর ১২টায় সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নেওয়া হয় গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে কেন্দ্র সচিব কর্তৃক সিক বেড ও শ্রুতি লেখকের মূল অনুমোদনের কপি অভিভাবকের হাতে এবং ফটোকপি অধ্যক্ষের হেফাজতে এখনো রয়েছে বলে জানা গেছে।
হাসানের বাবা মো. শামছুল হুদা অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা শুরুর ৫ম দিনে আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে শ্রুতি লেখক দিয়ে বাকি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র সচিব রাকিব প্রামানিকের সঙ্গে কথা বলি। এরপর আমার ছেলের অধ্যয়নরত স্কুলের (ঠাকুরাদহ স্কুল এন্ড কলেজ) অধ্যক্ষ মোকছেদুল হকের প্রত্যয়নপত্র নিতে বলেন। আমি সেই প্রত্যয়ন নিয়ে কেন্দ্র সচিবের কাছে গেলে বিভিন্ন নিয়মের দোহাই দিয়ে ৫০ হাজার করে দু’দিনে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে শ্রুতি লেখক দিয়ে আমার ছেলের একক কক্ষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি আইসিটি পরীক্ষা নেন। ৩ মার্চ আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন কেন্দ্রের সচিব। টাকা না দেওয়ায় ৩ মার্চ পরীক্ষা চলার ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট পর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান শ্রুতি লেখককে বের করে দিয়ে প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগ এনে আমার ছেলেকে বহিস্কার করেন।’
ওই পরীক্ষার্থীর বাবা এ্যাডভোকেট মো. শামছুল হুদা প্রশ্ন রেখে বলেন, শ্রুতি লেখক দিয়ে যদি পরীক্ষা নেওয়ার বিধান নাই থাকে তাহলে দু’দিন আমার ছেলের পরীক্ষা নেওয়া হলো কিভাবে? তখন কেন্দ্র পরিদর্শক কোথায় ছিলেন? তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে অত্যন্ত মেধাবী। পরীক্ষা দিতে না পারলে আমার ছেলে আরও অসুস্থ হয়ে যাবে- এমনটাই ভেবে আমি ১ লাখ টাকা অধ্যক্ষর হাতে দিয়ে শ্রুতি লেখকের মাধ্যমে ছেলের বাকি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু হঠাৎ ছেলেকে বহিস্কার করায় সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে ঢাকার বেসরকারী ক্যাপিটাল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তার অবস্থা ভালো না।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে গতকাল শনিবার রাতে মুঠোফোনে অভিযুক্ত কেন্দ্র সচিব মো. আব্দুর রাকিব প্রামানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৩ মার্চ শ্রুতি লেখক দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ওই পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়।’ তাহলে কী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি শ্রুতি লেখক দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কাগজপত্র ছিল ওই শিক্ষার্থীর? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী পরীক্ষায় বাক প্রতিবন্ধী ছাড়া অন্য কেউই শ্রুতি লেখক পাবে না। ওই কেন্দ্রে শ্রুতি লেখক দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আমি প্রথমে জানতাম না। পরে জানার সঙ্গে সঙ্গেই ওই পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সাথে দায়িত্ব পালনের অবহেলায় কেন্দ্র পরিদর্শক আসাদুজ্জামানকে এবং ও কেন্দ্র সচিব আব্দুর রাকিব প্রামানিককে কেন্দ্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়াও কেন্দ্র সচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নোটিশের জবাব পেয়েছি, কিন্তু সন্তুষজনক জবাব না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘ওই ঘটনায় কেন্দ্র সচিব ও এক শ্রেণির শিক্ষকসহ একটি বড় ধরণের সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। আমরা তদন্ত করে সেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো’। অপর প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘শ্রুতি লেখক দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি আমাকে অবগত না করার কারণে সেটি প্রক্সি’র আওতায় পড়ে। সেকারণেই ওই পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়।’
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর স: ম: আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, ‘ওই ঘটনায় দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে কেন্দ্র সচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দু’দিন শ্রুতি লেখক দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্তে করে দেখা হবে।’