রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার চরাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে মানুষের একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। চরগুলোতে মানুষের চলাচলসহ নিত্যপণ্য ও কৃষিপণ্য পরিবহনে অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় ঘোড়ার গাড়ি হচ্ছে বিকল্প ব্যবস্থা। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে রাস্তাঘাট না থাকায় নদীর হাঁটুপানি ও বালু চরে পণ্য পরিবহন, অসুস্থ রোগীকে বহন এবং যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ঘোড়ার গাড়িকে ব্যবহার করা হয়।
গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা, মর্নেয়া, কোলকোন্দ , আলমবিদিতর ও নোহালী ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। শুকনো মৌসুমে অসংখ্য চরে কখনো হাঁটুপানি ভেঙে ও বালুচরে মানুষের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। চরাঞ্চলে যান্ত্রিক যানবাহন না থাকায় আগের দিনের মানুষ প্রচণ্ড গরমে উত্তপ্ত বালুতে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতেন এবং নিজেদের উৎপাদিত পণ্যগুলো মাথায় অথবা লাঠিতে করে ঘাড়ে নিয়ে বহন করতো।
কিন্তু ঘোড়ার গাড়ি চালু হওয়ায় পর চরাঞ্চলের মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনসহ ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গাড়িটি ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। বর্ষার সময়ে তিস্তা নদী তার চিরোচেনা রুপ-যৌবন ফিরে পায়, পানিতে তলিয়ে যায় প্রত্যন্ত চরের নিম্নাঞ্চল।
এসময় চরবাসীর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে থাকে নৌকা। তবে শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র প্রধান মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি। আর প্রত্যন্ত এসব চর এলাকার অনেক মানুষ ঘোড়ার গাড়ি দিয়েই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
স্থানীয়রা জানায়, তিস্তার চরাঞ্চালে শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি কমে যায় এবং বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে উঠে। চরে যাতায়াতের জন্য যান্ত্রিক গাড়ি, ভ্যান, রিকশা, অটো, মাইক্রো চলাচল একেবারেই অসম্ভব। তাই এই এলাকার যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ঘোড়ার গাড়ির ব্যপক ব্যবহার হয়। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট না থাকায় এখানে যান্ত্রিক গাড়ি না চলায় চরবাসীকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। এসব সমস্যাকে উপেক্ষা করে তাদের নিত্য দিনের কাজ পরিচালনার জন্য তারা ব্যবহার করেন ঘোড়ার গাড়ি।
উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ঘোড়াগাড়ি চালক শফি বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে সবসময় বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়েই থাকে। বর্তমান আলুর চাষ হয়েছে। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে ঘোড়ার গাড়ি করে বস্তা প্রতি ৩০ টাকা দরে ঘাট পাড়ে পৌঁছে দেই। এভাবে দিনে প্রায় ৫০ বস্তা পর্যন্ত ঘাট পাড়ে নিয়ে আসা যায়। তাতে প্রতিদিন আয় হয় ১ হাজার থেকে ১৫'শ টাকা। ঘোড়ার খাদ্যে প্রতিদিন খরচ হয় ২শ ৫০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে আমার সংসার ভালোই চলে।
উপজেলার তিস্তা পাড়ের ঘাটের মালিকরা জানান, এখন তিস্তা নদীতে পানি অনেক কম। চর ভেসে উঠেছে যেখানে বালু আর বালু। এই চরাঞ্চলে কৃষি পণ্য বহন করার জন্য একমাত্র উপায় ঘোড়ার গাড়ি। নদীতে পানি এসে যখন নদী জীবন ফিরে পায় তখন নৌকা দিয়ে পারাপার করা হয়। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে কৃষি পণ্য ঘোড়ার গাড়িতে বহন করা হয়। তিস্তায় পানি কমে যাওয়ায় সামান্য পানির ওপর দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি মালামাল পার করছে।