বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০ বৈশাখ ১৪৩২
বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫
ভাঙ্গায় ভাঁট ফুলের সৌরভে মাতোয়ারা গ্রামীণ জনপদ
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪, ২:১৮ PM আপডেট: ২৩.০৩.২০২৪ ৪:১৪ PM
শীতের জীর্ণতাকে পিছনে ফেলে চলছে বসন্ত। দক্ষিনা ঝিরি ঝিরি বাতাসে প্রকৃতিতে জানান দিচ্ছে যে বসন্ত  এসেছে। আর বসন্তের যৌবনের পূর্ণতা দিতে গ্রামীন জনপদে নজরকাড়া সৌন্দর্য আর সৌরভ ছড়াচ্ছে ভাঁট ফুল। 

গ্রামীণ সড়কের পাশে অবহেলা অনাদরে বেড়ে ওঠা এই ফুল কর্মে ছুটে চলা পথিকের মনে মুগ্ধতা ছড়িয়ে অজান্তেই চোখে পড়ছে এর নজরকাড়া সৌন্দর্য। আনমনে সৌরভ আর মৌমাছির গুঞ্জন শুনে পথিক থমকে দাড়ায়,, আহা বসন্ত!  এ দৃশ্য এখন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মেঠোপথ কিংবা রাস্তার ধারে।

চৈত্রের প্রথম থেকেই  দেখা মিলছে এই ভাঁট ফুল। ভাঁট ফুলের আরেক নাম বনজুঁই। এলাকা ভেদে এই ফুলের আরও ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। যেমন: ভামোট ফুল, ভাইটা ফুল, ভাত ফুল, ঘেঁটু ফুল, ঘণ্টাকর্ণ ইত্যাদি। ২-৪ মিটার দন্ডায়মান এই গাছের পাতার আকৃতি খসখসে ও কিছুটা পানপাতার মতো।

সাদা পাপড়ির সাথে বেগুনি রংয়ের মিশ্রণে ভাঁট ফুল আরও নান্দনিক হয়ে উঠেছে। ফুল ফোটার পর ভাঁট ফুলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌমাছিরা। এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গা সরকারি কেএম কলেজের অধ্যাপক মিজানুর রহমান  বলেন, ভাঁট ফুলের গাছ আগের মত দেখা মেলে না।  

বন্য এ ফুল আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। স্থানীয় প্রবীনরা জানান, রাস্তার ধার ও জমির আইল সংস্কার করার জন্য এই গাছ কেটে ফেলা হয়। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ভাঁট ফুল ফোটে। রাতের বেলা এই ফুলের সৌরভ পাওয়া যায়। স্থানীয় কয়েক জন  কবিরাজ ও উদ্ভিদ বিষারদ জানান, নানান রকমের ঔষধি গুণসম্পন্ন এই ভাঁট গাছ। কৃমি, চুলকানি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার ও উদরাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে ভাঁট গাছ ও ফুল উপকারী।

স্হানীয় বয়োবৃদ্ধরা জানান, বন্য যে ফুলটি মানুষের নজর কাড়ে তা হলো বনজুঁই বা ভাঁট ফুল। এই ফুলটি ফরিদপুর অঞ্চলে ‘ভাটি ফুল’ বা ভাঁটফুল নামেই বেশি পরিচিত। সনাতন ধর্মালম্বীরা ভাটি পূজায় এই ফুল ব্যবহার করে থাকে।ভাটি ফুল বাংলাদেশের মানুষের একেবারে চোখের সামনে থাকা একটি ফুল। এটি বুনো ফুল। ঋতুরাজ বসন্তে  ঝোপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে, রাস্তার ধারে, এখানে-সেখানে নিজের সুন্দর রূপ ছড়িয়ে থাকে ভাটি ফুল বা বন জুঁই।  একে বলা হয় হিল গেন্টারি বোয়ার ।

এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্লোরোডেনড্রাম ভিসকোসাম. ভারবেনাসেই গণের এই ফুল ল্যামিয়াসেই পরিবারভুক্ত। এটি ইনফরচুনাটাম প্রজাতির এবং বাংলাদেশের আদি ফুল।

বাংলাদেশের মাটিতে এই ফুলের গাছ অত্যন্ত অনাদর আর অবহেলায় জন্মে এবং বেড়ে ওঠে। গাছ গুল্ম জাতীয়। ছোট আকৃতির ও বেশ ঝোপালো হয়। সবুজ বহুপত্রী ভাটি গাছের ফুল ধবধবে সাদা। ফুল ফোটে থোকায় থোকায়। দেশের সর্বত্রই দেখা যায় এই ফুল। তবে ভাওয়াল গড় ও মধুপুর গড় এলাকায় ভাট গাছ প্রচুর জন্মায় বলে জানা গেছে এবং ফুলে ফুলে একেবারে ছেয়ে থাকে।

ভাটি ফুলের পাপড়ি পাঁচটি এবং পাপড়ির গোড়ার দিকটা হালকা বেগুনি রঙের। প্রতি ফুলে ৪টি করে পুংকেশর সামনের দিকে বেরিয়ে আসে। পুংকেশরের অগ্রভাগ হয় স্ফীত ও কালো। রাতে বেশ গন্ধ ছড়ায় এই ফুল।

উদ্ভিদ ও প্রকৃতি  প্রেমীরা বলেন  ভাটিফুল প্রকৃতির অহংকার। এটা ঔষধি গাছ ও বটে। এই গাছগুলো সংরক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত