জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রবাহে সৃষ্ট তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জের জনজীবন।
নতুন করে আরো ৩ দিনের 'হিট অ্যালার্ট' জারির পর শংকিত হয়ে পড়েছে সর্বস্তরের জনগণ। বিশেষ করে হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ ক্রমশ অসুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি আগুন ঝরা বাতাসে নারী শিশুসহ কর্মজীবী মানুষ দিন দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহন ও যাত্রী চলাচল শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। জরুরী কাজ ছাড়া কাউকে বাইরে বের হতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ দূরপাল্লার কোচ ও লোকাল গাড়ি যাত্রীর অভাবে পার্কিং করে রাখা হয়। দুপুর বারোটায় মানিকগঞ্জের তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
পাটুরিয়া ঘাটের পরিবহন নেতা মোঃ লিটন হোসেন জানান, গত কয়েকদিন যাবত তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে গেছে। তাই যাত্রী চলাচল একেবারেই নেই বললেই চলে। গরমে অতিষ্ঠ পরিবহন শ্রমিকদের আয় রোজগার একেবারেই কমে গেছে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছে।
আরিচা ঘাটের বাসচালক হাতেম আলি ও হৃদয় বেপারী বলেন, গরমের কারণে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ (বিটুমিন) উঠে গাড়ির চাকার সাথে লেগে যাচ্ছে।
শহরের কালীবাড়ি এলাকার ভ্যানচালক ইলিয়াস হোসেন বলেন, প্রখর রোদের উত্তাপে মালামাল নিয়ে ভ্যান চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তাই বিশ্রাম নিতে একটু শীতল জায়গা খুঁজছি। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার পরিজনের মুখে দু'মুঠো ভাত তুলে দিতে কষ্ট হবে। তাছাড়া আমার ৬ বছর বয়সী শিশু প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। আজকের রোজগারের টাকা দিয়ে তার চিকিৎসা করাবো।
রিক্সাচালক ইউসুফ আলী বলেন, গত ৪-৫ দিন যাবত আয়রোজগার কমে গেছে। বেলা ১২ টার পর শহরে কোন যাত্রী থাকে না। তাই দীর্ঘক্ষণ কলেজের মাঠে বসে বসে বিশ্রাম করছি। বিকেলে লোকজন বের হলে খেপ দেব। কিছু রোজগার হলে বাজার করে বাড়ি যাবো।
মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, প্রচন্ড গরমে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়া শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তুলনামূল বেশি।হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের দৈনিক শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন এই সময়ে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক।
জেলা তথ্য অফিসার মোহাম্মদ নূর হোসেন বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তারের নির্দেশে জেলার সর্বত্র সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।