পৃথিবীতে প্রচলিত খেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমর্থক ফুটবলেরই। তাই খেলাটিকে ঘিরে ভক্তদের আবেগ-ভালোবাসাও অনান্য খেলার সমর্থকদের চেয়ে বেশি। ফুটবলারদের রীতিমতো নায়কের চোখে দেখে ভক্তরা। তাই খেলার মাঠে মাঝে মধ্যেই এই নায়কদের দর্শন পেতে ঢুকে পড়ে ভক্ত সমর্থকরা।
মাঝে মধ্যেই খেলোয়াড়দের সাথে তাদের এই ক্ষণিক মিলনে ধরা পড়ে আবেগঘন কিছু দৃশ্য। তবে এবার এই কাজ করে এক ইরানি ফুটবলারকে বিপদে ফেলে দিয়েছেন তার এক নারী ভক্ত।
গত ১২ এপ্রিল ইরানের ফুটবল লিগের এক ম্যাচে একজন তরুণী বাধ্যতামূলক হিজাব না পরে গ্যালারি থেকে নেমে দৌড়ে মাঠে গিয়ে খেলোয়াড়দের কাছে যাচ্ছিলেন। তখন তাকে কয়েকজন বাধা দেন। সেই ম্যাচে মুখোমুখি হয় ইরানি দল অ্যালুমিনিয়াম আরাক বনাম ইসতেগলাল এফসি। উৎসুক ওই নারীকে মাঠে আসতে দেখে এগিয়ে যান এসতেগলালের গোলকিপার হোসেইন হোসেইনি। তিনি ওই নারীকে জড়িয়ে ধরেন।
মাঠের এমন দৃশ্য মানতে পারেননি গ্যালারির আরেকপ্রান্তে উপস্থিত পুরুষ সমর্থকরা। তারা প্রতিবাদ জানালে ম্যাচ অফিসিয়ালরা হোসেইনকে মাঠ থেকে বের করে দেন। তখন আরেক ফুটবলার এসে ওই নারী ভক্তকে তার জার্সি খুলে উপহার দেন। সেই জার্সি পেয়ে ওই নারী ভক্ত খুশিতে মাঠ ত্যাগ করে গ্যালারিতে গিয়ে উল্লাস করেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশটিতে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে স্পর্শ করা ইসলামি রীতি অনুসরে হারাম। নীতি-বহির্ভূত এমন কাজ করায় হোসেইন হোসেইনিকে আইনের আওতায় আনার জন্য ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন দেশটির নারী ও পারিবারিক বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এনসিয়ে খাজালি।
ইরানের সংবাদপত্র দৈনিক ‘খবর ভার্জেশি’ তাদের করা প্রতিবেদনে জানায়, ১২ এপ্রিল দুই দলের মধ্যকার ম্যাচ চলার সময় ইরানের হয়ে ১১ ম্যাচ খেলা গোলকিপার “ম্যাচের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রতি খারাপ আচরণ” করার জন্য তাকে এক ম্যাচের জন্য বরখাস্ত করেছে এবং ৪.৪০০ ইউরো জরিমানাও করেছে।
ইসতেগলালের হয়ে সুপার কাপ ও পারসিয়ান গালফ প্রো লিগজয়ী (ইরানের শীর্ষ লিগ) হোসেইনি ২০১২ সাল থেকে এই ক্লাবের গোলপোস্ট সামলাচ্ছেন। ৩৮টি ট্রফিজয়ী ইসতেগলাল ইরানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাবগুলোরও একটি। ইরানের একমাত্র ক্লাব হিসেবে একাধিকবার আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতেছে ইসতেগলাল।
পারসিয়ান গালফ প্রো লিগের এবারের মৌসুমে হাতে ৬টি করে ম্যাচ রেখে দ্বিতীয় পার্সেপোলিসের সঙ্গে ১ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ইসতেগলাল (২৪ ম্যাচে ৫৩ পয়েন্ট)।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর ফুটবল ম্যাচে নারী দর্শকের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ছিল। ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়নশিপের এক ম্যাচে গত ৪০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো নারী দর্শকদের উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হয়।