ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি এলাকায় কালি মন্দিরে আগুন দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে দুই মুসলিম নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জরিত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯ টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী উপজেলার আকশুকনা গ্রামের বিশ্বেশ্বর গ্রামের উজ্জ্বল কুমার মিত্র (৩৩), একই উপজেলার পুষআমলা গ্রামের বীরেন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে বিশ্বজিৎ মল্লিক (৫২), পাশের সাধুখালী এলাকার নানক বিশ্বাসের ছেলে কনক বিশ্বাস (২৭), ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জিনিস নগর এলাকার ফুলচরণ কুমার মণ্ডলের ছেলে তপন কুমার মণ্ডল (৪০), একই উপজেলার তারাপুর এলাকার ভানু রায়ের ছেলে অনুপ রায় (৩১), একই গ্রামের গিরিশ চন্দ্র মণ্ডলের ছেলে টুটুল চন্দ্র মণ্ডল (৩০), মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার মদনপুর এলাকার দিলিপ সরকারের ছেলে প্রসেনজিৎ সরকার (২০) ও একই উপজেলার বড়ালীদহ এলাকার কুমারেশ বিশ্বাসের ছেলে সুজয় বিশ্বাস (১৬)।
এসময় পুলিশ সুপার আরও জানান, এর আগে ১৯ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বিনয় সাহা (৬০), উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস (৪১), গোবিন্দ সরকার (২৮) ও অনয় ভাদুড়ী (১৯) নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর (সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন, ডিবির ওসি আব্দুল মতিন সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭টার দিকে মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লিতে একটি কালি মন্দিরে আগুন দেওয়ার সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা বাঁশ, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে মুসলিম আপন দুই সহোদরকে হত্যা এবং আরও পাঁচজনকে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে মধুখালীর ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক এবং ওসি মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে হতাহতদের উদ্ধারে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও জিম্মি করে রাখে হামলকারীরা।
পরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব এনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পুলিশ।
এ ঘটনার পরে মন্দিরে আগুন, নির্মাণ শ্রমিক হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় মধুখালী থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে ।