ময়মনসিংহে আবহাওয়ার মারাত্মক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে রাতের বেলায় ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এতে শীত অনুভূত হচ্ছে। আবার সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গিয়ে বাড়ছে তাপপ্রবাহ।
এমন আবহাওয়ায় বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন বিভাগে বাড়ছে রোগী। বেশিরভাগ শিশু জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বয়স্করা পড়েছেন স্ট্রোকজনিত সমস্যায়।
গত ৫০ বছরেও এমন বিরূপ আবহাওয়া দেখেননি বলে জানালেন ময়মনসিংহ নগরীর দিগারকান্দা গ্রামের প্রবীণ কৃষক সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়ে মাঠে কৃষিকাজ করতে গেলে দেখি ঘন কুয়াশা। রাতে শীত অনুভূত হয়। আবার সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গিয়ে বাড়তে থাকে তাপপ্রবাহ। এমন আবহাওয়া গত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। আমার জীবনে বৈশাখ মাসে এমন আবহাওয়া দেখিনি। গরম ও কুয়াশাজনিত এই আবহাওয়ার কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রাতে ঠান্ডা ও দিনে গরম পড়ায় মাঠে গিয়ে কৃষকরা শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমি নিজেও অসুস্থ হয়েছি।’
একই গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ‘রাতে ঘন কুয়াশায় চারদিক ঢেকে যায়। যা সকাল পর্যন্ত থাকে। দেখে মনে হয় শীতকাল। কিন্তু সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গিয়ে তীব্র গরম অনুভূত হয়। মাঠে বোরো ধান। গরমের কারণে কৃষকরা ধান কাটতে পারছেন না। কিছু ধান কাটার পর শ্রমিকরা কৃষিজমিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকে অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক পান না। এই পরিস্থিতিতে সময়মতো ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা।’
তাপমাত্রার এই অস্বাভাবিকতার কারণে কৃষকরা অসুস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। সকালে সূর্য ওঠার পর কুয়াশা কেটে যাচ্ছে। এতে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলেই এই পরিস্থিতি কেটে যাবে।’
ময়মনসিংহ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ তাপস চন্দ্র আচার্য বলেন, ‘এবার আবহাওয়ার তারতম্য অনেক বেশি। হঠাৎ করে রাতে তাপমাত্রা পড়ে যায়, আবার দিনে বেড়ে যায়। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুতে যে পরিবর্তন হচ্ছে, তার আলামত স্পষ্ট। শনিবার ময়মনসিংহে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; গরম অনুভূত হয়েছে ৪২ ডিগ্রির মতো। সন্ধ্যার পর থেকে ৩০-৩২ ডিগ্রিতে নেমেছে। মধ্যরাতে তা আরও কমে গিয়ে ২৮ ডিগ্রিতে নেমে আসে। তখন বাতাসের আর্দ্রতাও কমে যায়। ফলে রাতে ঘন কুয়াশা দেখা দেয়; শীত অনুভূত হয়। আবার সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এর প্রভাবে মানুষের নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।’
এর প্রধান কারণ যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তন; তা কিন্তু নয় উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদ তাপস চন্দ্র আচার্য আরও বলেন, ‘বর্তমানে যানবাহন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেশি পরিমাণ নির্গত হচ্ছে। এর ফলেও রাতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে।’