বিশ্বের সবচয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরনের আয়তন কমতে কমতে এখন ১০ হাজার বর্গ কিলেমিটারে এসে ঠেকেছে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে গত ১০০ বছরে সুন্দরবনের আয়তন ৪৫৩ বর্গ কিলোমিটার কমেছে।
সুন্দরবনের আগুন নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। স্থানীয়দের ধারণা, এটি নাশকতা। পরিকল্পিতভাবেই কেউ আগুন দিয়েছে। এর পিছনে নানা স্বার্থান্বেষী মহলের হাত থাকতে পারে।
জানা যায়, সুন্দরবনে গত ২৪ বছরে ২৬ বার আগুন লেগেছে। সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির কাছের গভীর বনে শনিবার (৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে ওই আগুন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নজরে আসে। ফায়ার সার্ভিস একদিন পর রোববার ভোর ৬টার দিকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। রোববার (৫ মে) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় তারা আগুন নেভানো কাজ স্থগিত করে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের খুলনা বিভাগের উপ পরিচালক মামুন মাহমুদ।
তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ভলান্টিয়ার ও স্থানীয় লোকজন কাজ করছে। আগুনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বুশ ফায়ার। ঝোপঝাড়ে কোনো কারণে আগুন লেগেছে। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
সুন্দরবনের ওই এলাকাটি বাগেরহাট জেলার মেড়েলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়ি ইউনিয়ন এলাকায়। ওই ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু তাহের বলেন, আমরা শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা- ১২টার দিকে আগুনের খবর পাই। এরপর আমরা সাধারণ মানুষ ও বনবিভাগের স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। আমরা বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। এখন চারপাশে ঘেরাও দিয়ে, আশপাশের গাছপালা কেটে আগুন যাতে না ছড়াতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তার কথায়, এটা গভীর বন। এখান থেকে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে পানি আছে। আর খাল শুকিয়ে গেছে। এ বনে বাঘ, হরিণ, বানর, সজারু ও শূকরের মতো বন্য প্রাণীদের বসবাস। গত বছর বনের এ এলাকায় বাঘের আক্রমণে একজন নিহত ও একজন আহত হন। এখানে সুন্দরি, গরান, গেওয়া, পশুর, ছৈলাসহ নানা ধরনের গাছ আছে। সেগুলো পুড়ে গেছে। বনে এখনো আগুন জ্বলছে। এই আগুনের কারণে অনেক বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মো. নুরুল আলম শেখ সুন্দরবনের যে এলাকায় আগুন লেগেছে সেই এলাকা পরির্দশন করেছেন। তার বাড়ি বাগেরহাট। তিনি জানান, ওটা সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও ওই এলাকায় চোরা শিকারি, কাঠ পাচারকারীসহ সাধারণ মানুষের অবাধ আনাগোনা। আমার কাছে কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চল মনে হয়নি। রোববার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস খবর পেলেও আগুন আরো দুইদিন আগে লেগেছে বলে স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছে। তারপরও ফায়ার সার্ভিস (রোববার) সকালে গিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ আগুনের পিছনে যারা মাছ ধরেন, তাদের হাত থাকতে পারে। এর আগেও ওই বনে আগুন লেগেছে। আগুনে গাছ পুড়ে গেলে মাছের জাল পাততে সুবিধা। আবার পোড়া কাঠের গন্ধে খালে অনেক মাছ আসে। কাছেই লতিফের ছিলায় মাছ ধরেন স্থানীয়রা। তাদেরও হাত থাকতে পারে। যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে বাঘের কবলে পড়ে গত বছর একজন চোরা শিকারি মারা যান। বনে আগুন লাগার কারণ হলো ওইসব চোরাশিকারি, মৎস্যজীবী ও মৌয়ালদের নিয়ন্ত্রণ না করা। তারা বনে রান্নাবান্না করে। ধুমপান করে সেখান থেকেও আগুল লাগে। আসলে বনে কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। এক শ্রেণির বনকর্মকর্তা তাদের স্বার্থে বনকে লোকালয়ে পরিণত করেছেন।
তিনি জানান, গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৬ বার আগুন লেগেছে। আমি মনে করি অধিকাংশ আগুনই মানবসৃষ্ট। এর পিছনে স্বার্থান্বেষী মহলের হাত আছে। এর ফলে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে।