মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
মায়ের কোলে ফিরে আসার আনন্দে ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ৫:৪৭ PM
সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে থেকে প্রচন্ড ভয়ে আমাদের দিন কাটাতে হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি ভয় হয়েছে মাকে নিয়ে। কারণ বাবাকে হারানোর একমাস না যেতেই আমি বিপদে পড়েছি। এটি কিভাবে আমার মা সহ্য করছেন, তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। 

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মায়ের কোলে ফিরে এসে কথাগুলো বললেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান৷  

তিনি বলেন, এখন আমি মায়ের কোলে ফিরেছি। এ আনন্দ সকল কষ্ট ও সকল ভয়কে জয় করে দিয়েছে।

আইয়ুব তার পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে বলেন, যে ঈদ আমরা আতঙ্কে কাটিয়েছি। পরিবার-স্বজনদের পেয়ে সেই ঈদ আনন্দ আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। 

আইয়ুব খান রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে। 

মঙ্গলবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বন্দরে এসে আত্মীয়-স্বজনদের দেখে মন উৎফুল্লা হয়ে উঠে আইয়ুবের। বুধবার (১৫ মে) সকালে নিজ বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে। এ সময় ঘটনার আদ্যপ্রান্ত তুলে ধরেন তিনি। 

ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, আক্রমণের পর জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলে দস্যুরা। এরপর তারা আমাদেরকে সোমালিয়ার উপকূলেট দিকে নিয়ে যায়। প্রায় আড়াই দিন লেগেছে সেখানে যেতে। প্রথম কয়েক দিন আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রাখে। সবাইকে একই বাথরুম ব্যবহার করতে হয়েছে। দস্যুরাও আমাদের বাথরুম ব্যবহার করেছে। প্রথম কয়েকদিন তারা আমাদের খাবার খেয়েছেন। সোমালিয়ায় পৌঁছানোর পর তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করে। 

তিনি আরও বলেন, ঈদের দিন নামাজ পড়তে পারলেও আনন্দ ছিল না। কারণ বন্দিদশা থেকে কবে মুক্ত হবো তা নিয়েই দিন গুণতে হয়েছে আমাদের।

বলেন, একজন দো-ভাষির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি- জলদস্যুরা জাহাজ মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে। মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে দস্যুদের সমঝোতা হয়েছে। মুক্তিপণ দিলেই নাবিকরা মুক্তি পাবে। 

১৩ এপ্রিল হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মুক্তিপণের ডলারের ব্যাগ জাহাজে ফেলা হয়। এরপর টাকা নিয়ে ভাগ হয়ে যায় জলদস্যুরা। তিনভাগে জাহাজ ছাড়ে দস্যুবাহিনী। 

তিনি বলেন, হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিপণের অর্থ ফেলার সময় আমাদের সংখ্যা গননা করা হয়। প্রথমে আমরা ২২ জন ছিলাম, আমাদের ক্যাপ্টেন জাহাজের অন্যত্র ছিল। এ কারণে প্রথমে মুক্তিপণের ব্যাগ ফেলা হয়নি। পরে যখন আমাদের ক্যাপ্টেন আসে, হেলিকপ্টার থেকে ২৩ জন গুণে নিশ্চিত হয়ে ব্যাগ ফেলা শুরু করে। তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়। তখন বেলা ১১ টার মতো। এরপর দস্যুরা নিজেদের মধ্যে অর্থ ভাগ করে তিনভাগে জাহাজ থেকে নেমে যায়। বিকেল এক গ্রুপ, সন্ধ্যায় একগ্রুপ এবং বাকীরা রাত ১২ টার পর বিদায় হয়।  

বলেন, সকালের দিকে দুটি জাহাজ আমাদের নিরাপত্তা দিতে আসে। তারা আমাদেরকে সোমালিয়ার 'হাইরিক্স' এরিয়া পার করে দেয়। এরপর আমরা ডুবাইতে যাই। 

আইয়ুবের বড় ভাই ওমর ফারুক রাজু বলেন, দস্যুদের আক্রমণের প্রায় এক মাস আগেই বাবা মারা যান। সেই শোক না কাটতেই আইয়ুবসহ ২৩ নাবিক সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এতে পুরো পরিবারের ওপর অমাবশ্যার অন্ধকার নেমে আসে। তার ফিরে আসা সবার জন্য আনন্দের। 

আইয়ুবের মা হোমায়রা বেগম বলেন, আইয়ুব আমার কোলে ফিরে এসেছে, এটি আল্লাহর কাছে আমার চাওয়া ছিল। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি আল্লাহ যেন আইয়ুবসহ সবাইকে ফিরিয়ে দেয়। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া সবাই সহিহ সালামতে ফিরে এসেছে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। এদিন বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। জাহাজে লক্ষ্মীপুরের আইয়ুব খানসহ মোট ২৩ জন নাবিক জিম্মি ছিল।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত