বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০ বৈশাখ ১৪৩২
বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫
‘মিঞা ভাই’ না থাকার এক বছর আজ
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ৯:৩৩ PM
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ফারুকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২৩ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

বাংলা চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা ছিলেন ফারুক। খুব অল্প সময়েই গ্রামীণ, সামাজিক ও রোমান্টিক সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকহৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রাঙ্গনে তার অভাব অপূরণীয়।

১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। তার বাবা আজগার হোসেন পাঠান। এই নায়কের শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। স্কুলজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন ফারুক। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং সে সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ছাত্রজীবনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাড়া-মহল্লায় নাটকে অভিনয় করতেন তিনি।

অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, পরিচালক এইচ আকবর এবং ফারুক নামে এক বন্ধু মিলে তার নাম দিয়েছিলেন ফারুক। অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত ফারুক। চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে তিনি সবার প্রিয় ‘মিঞা ভাই’।

১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক। ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।

এরপর ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ দুটি ব্যবসাসফল ও আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সে বছর ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন নায়ক ফারুক। তার অভিনীত বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই ব্যবসা সফল হয়। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৬ সালে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ অনুষ্ঠানে তাকে আজীবন সম্মাননার পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ ও ‘নয়নমণি’, ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’, আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’সহ বেশকিছু সিনেমায় ফারুকের অভিনয় প্রশংসিত হয়। সবশেষ ২০০৮ সালে ‘ঘরের লক্ষ্মী’ সিনেমায় অভিনয় করেন ফারুক। তার অভিনীত প্রায় নব্বই ভাগ চলচ্চিত্র ব্যবসা সফল হয়েছে।  

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘সারেং বৌ’, ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘মিয়া ভাই’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’ ইত্যাদি। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন বহু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে খ্যাতি পান। অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

ববিতার স্মৃতিচারণ
দেখতে দেখতে চলে গেল সবার প্রিয় অভিনেতা নায়ক ফারুকবিহীন একটি বছর। মনে হয়, এইতো সেদিন তিনি চলে গেলেন। অথচ একটি বছর পার হলো। স্মৃতিতে অম্লান আমাদের এই কিংবদন্তি। আমাদের সুদীর্ঘকালের বন্ধু, প্রিয় নায়ক ফারুক আর পৃথিবীতে নেই– এটি বিশ্বাস করে ওঠা আসলেই কষ্টকর। 

নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় তাঁর সঙ্গে ছিল আমার প্রথম অভিনয়। সিনেমায় ফারুক ভাইয়ের ছোট একটি চরিত্র ছিল। সেটেই হয়েছিল দু’জনের পরিচয়। প্রথমে ততটা চেনাজানা ও বন্ধুত্ব না থাকলেও চলচ্চিত্রে কাজের সুবাদে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এরপর ৪০টির মতো সিনেমায় তাঁর বিপরীতে কাজ করেছি। বেশিরভাগ ছবিই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘লাঠিয়াল’, ‘মিয়াভাই’, ‘সূর্য সংগ্রাম’, ‘প্রিয় বান্ধবী’, ‘এতিম’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’সহ অসংখ্য সুপারহিট সিনেমায় দর্শক ববিতা-ফারুক জুটি দেখেছেন। 

মনে পড়ে, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমার দৃশ্যধারণ হয়েছিল মানিকগঞ্জের ফকিরবাড়ি, নবগ্রাম, ঝিটকা এলাকার নদীর পাড়ে। খুব শীতের মধ্যে শুটিং করতে হতো। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম, কখন আমাদের শট আসবে। কত শত স্মৃতি! সবই মাঝে মাঝে মনে পড়ে। ওই সিনেমায় তাঁর অভিনীত মিলন চরিত্রটি দর্শক আজও মনে রেখেছে। ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামের সিনেমাই বেশি করেছি। গ্রামভিত্তিক সিনেমায় তিনি ছিলেন অনবদ্য। 

১৯৭৬ সালে ‘নয়নমনি’ এ দেশের প্রেমের সিনেমার মধ্যে ধ্রুপদি হয়ে ওঠে। এ সিনেমার পর ফারুক-ববিতা জুটি মানেই বিশেষ কিছু হয়ে ওঠে। মাসের পর মাস সিনেমাটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছে। কয়েক যুগ পর আজও এ সিনেমার কথা মানুষ মনে করেন, কালজয়ী বোধহয় একেই বলে! আমাদের অভিনীত সিনেমার প্রেম, বিরহ আজও দর্শকহৃদয়ে মুগ্ধতাভরা হাহাকার জন্ম দেয়। ফারুক ভাইয়ের নিজের প্রডাকশনের সিনেমাও করেছি। 

তাঁকে নিয়ে আমার একটা আফসোস আছে। তাঁর মরদেহ যখন দেশে এলো, আমি তখন কানাডায় যাচ্ছি। এ কারণে শেষ দেখাটাও তাঁর সঙ্গে হলো না। এটি আমার জন্য কষ্টের। অভিনেতা ফারুকের অভিনয়গুণ সম্পর্কে সবাই জানেন। এ নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না। নায়ক ফারুকের ব্যক্তিত্ব ছিল অনুসরণীয়। 
ব্যক্তি ফারুককে বাইরে থেকে দেখলে মনে হতো খুব রাগী, জেদি, ভয়ংকর। আসলে তিনি মোটেও সেরকম ছিলেন না। কোনো কোনো সময় খুব রেগে কথা বলতেন, তাই বলে অনেকেই ভাবতেন তিনি একজন রাগী মানুষ। নরম মনের মানুষটি আমাদের সব শিল্পীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। সবারই একদিন চলে যেতে হবে। আজ অথবা কাল। 

ফারুক ভাই যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন– এটি এখনও বিশ্বাসই হয় না।সিঙ্গাপুরে তাঁর চিকিৎসা চলাকালীন শেষের দিকে মনে হচ্ছিল তিনি বোধহয় সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবেন। সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে চলে গেলেন তিনি! 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত