বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০ বৈশাখ ১৪৩২
বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫
‘অরোরা’ বা ‘নর্দান লাইটস’: আকাশজুড়ে নানা রঙের ছটা
মশিউর অর্ণব
প্রকাশ: শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৩:২৫ PM আপডেট: ১৮.০৫.২০২৪ ৯:০১ PM
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে শক্তিশালী সৌরঝড়ের আঘাতে উত্তর গোলার্ধের আকাশজুড়ে তৈরি হয়েছিল রংবেরঙের আলোকচ্ছটা নর্দান লাইটস। সাধারণত অরোরায় নীল-সবুজ আলোকচ্ছটা দেখা গেলেই এবার দেখা গিয়েছিল নানা রঙের ছটা; যা অতি বিরল।

সৌরঝড়ের প্রভাবে ইউরোপ, অস্ট্রেলেশিয়া অঞ্চলের অনেক দেশে রাতের আকাশে মহনীয় এ দৃশ্য তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি সূর্যের পৃষ্ঠে এক বিস্ফোরণের পর একটি শক্তিশালী সৌরঝড় পৃথিবীর বুকে আঘাত করে। 
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ঝড়ের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ সৌরকণা প্রতি সেকেন্ডে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে।  এ ঝড়ে সাধারণত মানুষের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে ঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ ও স্যাটেলাইট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে এবং বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে তারা বলছেন। 
গত দুই দশকে যতগুলো সৌরঝড় পৃথিবীকে আঘাত করেছে, এবারের ঝড়টি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। এই ঝড়ের একটি প্রভাব উত্তর গোলার্ধে লক্ষ্য করা গেছে; তা হলো নর্দান লাইটস বা অরোরা বোরিয়ালিস। বাংলায় মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা। এ ঝড়ের ফলে আরও দক্ষিণের এলাকা থেকে দেখা যেতে পারে।
সম্প্রতি মেরুপ্রভার বিরল ঝলক দেখেছে বিশ্বের বড় অংশ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে একটি শক্তিশালী সৌরঝড়ের আঘাতে উত্তর গোলার্ধের আকাশজুড়ে এ দৃশ্য তৈরি হয়। শেষবার ২০০৩ সালে এত শক্তিশালী ঝড় হয়েছিল। সৌরঝড়ের প্রভাবে ইউরোপ, অস্ট্রেলেশিয়া অঞ্চলের অনেক দেশে রাতের আকাশে দেখা গেছে রংবেরঙের আলোকচ্ছটা নর্দান লাইটস। 
সাধারণত অরোরায় নীল-সবুজ আলোকচ্ছটা দেখা যায়। এবার দেখা গেল নানা রঙের ছটা; যা অতি বিরল। মাথার ওপর আকাশজুড়ে এমন রঙিন আলোর নাচন, কল্পনা করলে শিউরে উঠতে হয়। ছবি দেখে এই সৌন্দর্যের পুরোটা বোঝা বা অনুভব করা সম্ভব নয়।
উত্তর ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে পোস্ট করা অরোরার ছবিতে সোশ্যাল মিডিয়া আলোকিত। ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডের ইয়ান ম্যানসফিল্ড বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বাচ্চাদের জাগিয়েছি পেছনের বাগানে মেরুজ্যোতি বা নর্দান লাইটস দেখতে যেতে!’
সেই একই মাত্রার বিস্ময়ের অনুভূতি ছিল অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপরাজ্য তাসমানিয়ায়। ফটোগ্রাফার শন ও’রিওর্ডান একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘আজ ভোর ৪টায় তাসমানিয়ায় একেবারে বাইবেলের আকাশ।’
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) এ ঝড়কে ‘অতি প্রচণ্ড’ ভূ-চৌম্বকীয় (জিওম্যাগনেটিক) ঝড় হিসেবে উল্লেখ করেছে। ২০০৩ সালের অক্টোবরে হ্যালোইন ঝড়ের পর পৃথিবীতে এ ধরনের ঝড় এবারই প্রথম আঘাত করল। ২০০৩ সালের সৌরঝড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সুইডেনে বিদ্যুৎ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আরও বেশি মাত্রায় সৌরঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে এনওএএ। যুক্তরাষ্ট্রের এ সংস্থাটি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কক্ষপথে থাকা মহাকাশযানগুলোকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য সতর্ক করেছে। কবুতর এবং অন্যান্য প্রজাতি, যাদের অভ্যন্তরীণ জৈবিক কম্পাস আছে তারাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি জানিয়েছে, কবুতর পালনকারীদের তথ্যমতে, ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের সময় বেশকিছু পাখি বাড়ি ফিরে আসতে পারেনি।
ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের সঙ্গে যুক্ত চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের ওঠানামা দীর্ঘ বিদ্যুতের তারকে প্রভাবিত করে, যা সম্ভাব্য ব্ল্যাকআউটের কারণ হতে পারে। দীর্ঘ পাইপলাইনগুলোও বিদ্যুতায়িত হতে পারে, যা প্রকৌশল বা ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে। মহাকাশযান উচ্চ মাত্রার বিকিরণের ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও বায়ুমণ্ডল এটিকে পৃথিবীতে পৌঁছাতে বাধা দেয়।
সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটেছে। সৌর শিখার ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় কণা পৃথিবীর পরিমণ্ডল ভেদ করে মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। তবে বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে জিপিএস এবং যোগাযোগের রেডিও তরঙ্গ প্রবাহিত হয়, আঘাত করে সেখানে। রেডিও তরঙ্গকে বাধাগ্রস্ত করে।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা–নাসার একাধিক ক্যামেরায় সৌরঝড়ের মুহূর্ত ধরা পড়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ১৪ মে শক্তিশালী আগুনের ফুলকি নির্গত হয়েছে সূর্য থেকে। বিস্ফোরণের ঘনত্ব ছিল এক্স ৮.৭। এর আগে ১১ মে এবং ১৩ মে সূর্যের একই জায়গায় দুটি বিস্ফোরণ হয়েছিল। ১৪ তারিখ ওই একই জায়গা থেকে তৃতীয় বিস্ফোরণটি হয়। এ জন্যই তৃতীয় বিস্ফোরণের অভিঘাত এত তীব্র ছিল।
পৃথিবীতে প্রথম সৌরঝড় চিহ্নিত করা হয় ১৮৫৯ সালে। প্রায় ১৭ ঘণ্টায় সৌরঝড়টি পৃথিবীতে পৌঁছেছিল। টেলিগ্রাফ নেটওয়ার্কের ক্ষতি করেছিল সে সময়। বৈদ্যুতিক শক অনুভূত হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন অনেক টেলিগ্রাফ অপারেটর। এরপর ১৯২১ সালে সৌরঝড়ে পৃথিবীর ক্ষতি হয়েছিল। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এর নাম ‘ক্যারিংটন এফেক্ট’। তখন ঝড়ের কবলে পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বিশালাকৃতির চৌম্বকক্ষেত্রে বড় বড় ফাটল ধরেছিল।
কয়েকদিন আগে রাতের আকাশে বর্ণিল আলো দেখার সুযোগ যারা হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য ‘সুখবর’। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই আবারও পৃথিবীর দিকে আসছে শক্তিশালী সৌরঝড়। এতে করে আবারও পৃথিবীতে দেখা যাবে নর্দান লাইটস বা অরোরা বোরিয়ালিস। খবর বিবিসি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, সৌরঝড়টি সম্ভবত এবার আরও বড় এবং জটিল হবে যার ফলে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে আঘাতের কারণে আরও বেশি অরোরা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) এ ঝড়কে ‘অতি প্রচণ্ড’ ভূ-চৌম্বকীয় (জিওম্যাগনেটিক) ঝড় হিসেবে উল্লেখ করেছে। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  নর্দান লাইটস   অরোরা   সৌরঝড়  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত