পবিত্র ঈদুল আজহা ঘনিয়ে এলেও রংপুরের গঙ্গাচড়ায় কোরবানির পশুর হাটবাজারে বেচাকেনা জমে ওঠেনি। গরু-ছাগল বিক্রি হচ্ছে কম। এবার দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হাটবাজারের ইজারাদার, খামারমালিক ও পশু বিক্রেতারা আশা করছেন, ঈদের কয়েক দিন আগে গবাদিপশুর বিক্রি বাড়বে।
প্রাণিখাদ্যের দামের উত্তাপে পুড়ছেন খামারিরা। মিলছে না এই বাড়তি দামের যোগ-বিয়োগ। গত দুই বছরের মতো এবারও খামারিদের হাল 'ঘরপোড়া গরু'র মতো। তাই তাঁরা দেখছেন 'সিঁদুরে মেঘ'। কোনো কোনো উদ্যোক্তা এরই মধ্যে খুলেছেন লাভের বদলে লোকসানের খাতা। টিকতে না পেরে অনেক খামারি আগেভাগেই পশু বিক্রি করে দেওয়ার পথে হাঁটছেন। এবার গরু বেশি, কিন্তু ক্রেতা কম।
খামারিরা জানিয়েছেন, প্রান্তিক চাষিরা গরুকে খাবার হিসেবে দেন তৈরি ক্যাটেল ফিড, গমসহ কয়েক রকম ভুসি, সরিষার খৈল, খড় ও কাঁচা ঘাস। এর মধ্যে প্রতিটি প্রাণিখাদ্যের দামই বেড়েছে ৪০ থেকে ৮৭ শতাংশ। বড় খামারিরা খাদ্য উপাদান কিনে নিজেরা তৈরি করে পশুকে খাওয়ান। গত এক বছরে এসব খাদ্য উপাদানের দামও বেড়েছে ৪০ শতাংশের ওপরে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচও বাড়তি গুনতে হবে খামারিদের।
গঙ্গাচড়া উপজেলার খামারি সুজন আহম্মেদ বলেন, কোরবানির জন্য সাতটি গরু তিনি প্রস্তুত করেছেন। প্রতিটি গরুর পেছনে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু দাম কম হওয়ায় তিনি গরুগুলো এখনো বাজারে ওঠাননি।'
গঙ্গাচড়ার আরেক খামারি মিলন মিয়া বলেন, তিনি কোরবানির উপযোগী সাতটি গরু পুষে ইতিমধ্যে তিনটি বিক্রি করে দিয়েছেন। খরচ বাদ দিয়ে ওই তিন গরুতে তাঁর লাভ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বোরো ধান কাটা-মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। অনেকে ধারদেনা করে আবাদে লাগিয়ে ধান বেচে তা পরিশোধ করছেন। সামনে আমন মৌসুমের খরচ জোগাতে আগাম চিন্তায় দিন কাটছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার পরিচালনায় কৃষকসহ সাধারণ মানুষ হিমশিম পোহাচ্ছেন। এ কারণে অনেকেই কোরবানির চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়েছেন।
নোহালী চর গ্রামের কৃষক সালেক বলেন, 'প্রতিবছর একটা করি গরুত ভাগ (কোরবানি) দেছনো। এবার তা পারোছি না। ধান বেচেয়া ইন (ঋণ) শোধ করছি। ফির আবাদ কইরবার নাগবে। এবার সংসার চলাটায় মুশকিল হইছে।'
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাখাওয়াৎ হোসেন ওই তথ্য দিয়ে বলেন, উপজেলায় এবারে কোরবানির পশুর সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে।