আন্ত:নগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে ট্যুায়ার্ডম্যানদের অসাধারণ, অবৈধ যাত্রী পরিবহন, যাত্রীদের নিকট থেকে অবৈধভাবে দ্বিগুণ টাকা নিয়েও নির্ধারিত সিট না দেয়া ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হওয়া ঘটনার প্রতিবাদে ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনে বৃহস্পতিবার (২০ জুন/২০২৪) রাতে বিক্ষুব্দ যাত্রী ও তাদের স্বজন বিক্ষোভ করে।
এ সময় ট্রেনের ট্যুায়ার্ডম্যান ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম যাত্রীদের নিকট অবৈধভাবে টাকা নেয়া ট্যুায়ার্ডম্যানকে বাঁচাতে ট্রেনের ভিতরে ঢুকিয়ে দেন। এতে যাত্রীরা ট্যুায়ার্ডম্যান ম্যানেজারের ওপর বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেলওয়ে পুলিশ ও স্টেশন মাস্টারের হস্তক্ষেপে দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা টাকা ফেরত পান।
এদিকে ট্রেনের যাত্রী সুরাইয়া তাবাসসুম জানান, সে চট্টগ্রাম বিশা্দ্লয়ের শিক্ষার্থী। নির্ধারিত সময়ের দু’ঘন্টা অতিক্রম করলেও ট্রেনের কোনো খবর নেই! এ যাত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে গৌরীপুর পৌর শহরে উত্তরবাজার এলাকার শফিকুল ইসলাম অপু জানান, আন্ত:নগর বিজয় এক্সপ্রেসের এখন আর কোনো টাইম-টেবুল নেই; ঘন্টার পর ঘন্টা স্টেশনে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়।
নতুন বাজারের ব্যবসায়ী ইদ্রিছ আলী জানান, এ ট্রেনের আসারও ঠিক নাই, যাওয়ার ঠিক নেই। বিক্ষুব্দ যাত্রী শ্যামগঞ্জের আবু সালেহ জানান, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্টেশনে আসছি, বসারও ঠাঁই নেই, ট্রেনের খবর নেই। স্টেশনে টিকেট পাওয়া যায় না, অথচ বছর শেষে শোনা যায় রেলওয়ে খাতে লোকশান; ভুতুড়ে সব হিসাবনিকাশ! গৌরীপুর পৌর শহরের বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মাহমুদা আক্তার জানান, রাতের ট্রেন ভোরেও আসে, আর এ ট্রেনের নাম বিজয় এক্সপ্রেস!
অপরদিকে রেলওয়ে সূত্র জানায়, আন্ত:নগর বিজয় এক্সপ্রেস ৭৮৬নং ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় রাত ১০টা ৩৫মিনিট আর ৭৮৫নং আন্ত:নগর বিজয় এক্সপ্রেস আপ-ট্রেনটি জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার সময় বিকাল ৫টা ২৫ মিনিট।
গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. সফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ২০টি ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। আর ওইদিন বিকাল ৬টা ৪৫মিনিটে জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ মাসের ১০জুন ছেড়ে গেছে রাত ১২টা ৪০মিনিটে, ১৫জুন ছেড়ে গেছে ১২টা ৫০মিনিটে, ১৬জুন ছেড়ে গেছে রাত ১.১০মিনিটে, ১৮জুন ১২টা ২০মিনিটে, ১৯জুন ১২টা ২২মিনিটে।
এদিকে আন্ত:নগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নামাজখান, খাবারের কোচ ও বিপদজ্জনক চিহ্ন সম্বলিত টাঙানো পাওয়ারকার কোচেও অবৈধভাবে যাত্রী উত্তোলন করতে দেখা যায় বৃহস্পতিবার। আর এসব অবৈধ যাত্রী উত্তোলনের পুরো নেতৃত্ব দেন এ ট্রেনের টুয়ার্ডম্যান ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম। তার নেতৃত্বে ট্রেনটি থামার সঙ্গে সঙ্গে ট্যুায়ার্ডম্যানরা যেখানে যাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়, তারাই অবৈধ যাত্রী খোঁজতে নেমে পড়েন।
একজন টুয়ার্ডম্যানের শার্টেও নেই নেইমপ্লেড, শুধু আছে সবুজ। এক্সটা ফাইভ নং কোচের নামে প্রকাশ্যে যাত্রী উত্তোলন করছিলেন সবুজ মিয়া। তিনি চট্টগ্রামী ৩জন যাত্রীর নিকট থেকে ১হাজার টাকা নেন। তবে সেই যাত্রীদের সিট না দেয়ায় শুরু হয় বাক-বিতন্ডা। এক পর্যায়ে এ প্রতিনিধিও সেখানে হাজির হন, ক্যামেরা দেখেই সটকে পড়তেও চান তিনি। যাত্রীদের তোপের মুখে আবারও ট্রেন থেকে নেমে আসতে হয়। টাকা ফেরত ও এসব অনিয়ম বন্ধের দাবিতে উত্তেজিত এবং বিক্ষুব্দ যাত্রীরা স্লোগানও দেন। এরমধ্যে হাজির হন তাদের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম।
শতশত যাত্রীদের সামনে দুর্ভোগের শিকার যাত্রী ওই স্টুয়ার্ডম্যানকে টাকা দেয়ার বিষয়টি বলেন এবং স্ট্যায়ার্ডম্যানও স্বীকার করেন। তারপরেও ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এই স্টুয়ার্ডম্যানকে ট্রেনের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে দম্ম করে বলেন, কোনো অভিযোগ নেই, ও টাকা নেয়নি। এতে আবারও যাত্রীরা বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও স্টেশন মাস্টার ঘটনাস্থলে আসলে ওই যাত্রীকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে স্ট্যায়ার্ডম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি কাউকে টাকা নিতে দেখি নাই। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নিবো।
অপরদিকে বিপদজ্জনক চিহ্ন সম্বলিত পাওয়ারকার কক্ষে পাওয়া গেলো কোমলমতি এক শিশু, অবৈধভাবে টাকা দিয়ে বাবার সঙ্গে সেই উঠেছে বিপদজ্জনক এ কোচে। শিশুটি জানা তার নাম আদিল মিয়া, বাড়ি চৈয়ারকান্দা। তার অভিভাবক রাহুল মিয়া, পিতা সাদেক মিয়া, বাড়ি ভৈরবে। তিনি জানায়, শিশুটিকে নিয়ে ভৈরব যাচ্ছেন। বিপদজ্জনক কক্ষে এ শিশুটি কেন? এ প্রসঙ্গে কোচের দায়িত্বে থাকা লুৎফর রহমান জানান, টিটি আসলে টিকেট করে নিবে, এ কক্ষে কেন- এবিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নাই।
এদিকে ট্রেনের ভিতরে যাত্রীদের বসার স্থানগুলো ছিলো নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত। বার্থরুমে সাবান-টিস্যু নেই। প্রত্যেকটি বার্থরুম অপরিচ্ছন্ন। এ প্রসঙ্গে ট্রেনের যাত্রী ইয়াসিন রহমান জানান, দুর্গন্ধে ভিতরেই প্রবেশ করা যায় না। ট্রেনের অপরযাত্রী গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের ফুলহর গ্রামের আরশেদ আলী জানান, স্টুয়ার্ডম্যান যাত্রীদের কোনো কাজেই আসে না, আমার সিটে অন্যজন বসা, তাদেরকে ভিতরে খোঁজেও পাওয়া যায়নি।
বাবু/সীমা