লিওনেল মেসিকে অনেকেই বলে থাকেন 'ভিনগ্রহের ফুটবলার', আবার অনেকেই তাঁকে 'ফুটবলের জাদুকর' উপাধিতে সম্মানিত করেন।
আবার, অনেক ফুটবল ভক্তই তাঁকে ভালোবেসে ডাকেন 'লিটল ম্যাজিশিয়ান' বা 'ক্ষুদে জাদুকর'।
১৯৮৭ সালে আজকের দিনে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন পৃথিবী নামক গ্রহের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি।
উপাধি যেটাই হোক না কেন- নিঃসন্দেহে বলা যায়, গত প্রায় দুই দশক ধরে ফুটবল বিশ্বকে নিজের নৈপুণ্যে মুগ্ধ করে রেখেছেন আর্জেন্টাইন এই তারকা।
'বাঁ পায়ের জাদু' ও অসাধারণ ফুটবলশৈলী দিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তের মনে জায়গা করে নিয়েছেন স্থায়ীভাবে।
জর্জ মেসি ও সেলিয়া কুচেত্তিনির সংসারের তৃতীয় সন্তান হিসেবে জন্ম নেন লিওনেল মেসি। এখন যে মেসির পায়ের জাদুতে মুগ্ধ পুরো বিশ্ব, সেই মেসির শৈশবটা ছিল খুব কঠিন।
১১ বছর বয়সে তার শরীরে গ্রোথ হরমোনজনিত জটিলতা দেখা দেয়। সমস্যা আরও বাড়ে কারণ তার বাবা মার চিকিৎসা করার সামর্থ্য না থাকায়। সেই চিকিৎসার জন্যই বার্সেলোনা পাড়ি দেয় মেসির পরিবার।
মেসির সুপারস্টার হওয়াটা সেই বার্সাতেই ছিল বলেই হয়তো সৃষ্টিকর্তা স্পেনের এই শহরে নিয়ে যান তাঁকে। ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বার্সেলোনার মূল স্কোয়াডে সুযোগ পান ফুটবলের এই বিস্ময় বালক।
এরপরের গল্পটা সবারই জানা। গত দুই দশক ধরে নিজের ফুটবল জাদু দিয়ে গোটা বিশ্বকে সম্মোহিত করে রেখেছেন ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসি।
২০০৭ সালে কোপা ডেল রে সেমিফাইনালের পর থেকে বিশ্বের ক্রীড়া মাধ্যম মেসিকে 'ফুটবল ঈশ্বর' ডিয়াগো ম্যারাডোনার সাথে তুলনা করতে শুরু করে।
সেই সাথে, স্পেনীয় সংবাদমাধ্যম তাঁকে ‘মেসিডোনা’ উপাধিতে ভূষিত করে।
ম্যারাডোনার মত মেসিও প্রায় ৬২ মিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে গোলরক্ষকসহ ছয় জনকে কাটিয়ে একই স্থান থেকে গোল করেছিলেন এবং কর্ণার ফ্লাগের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন।
২১ বছর আগে মেক্সিকো বিশ্বকাপে যেমনটি করেছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়াগো ম্যারাডোনা।
ফুটবল বিশ্ব ততদিনে ম্যারাডোনার সাথে মেসির তুলনা শুরু করে দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ফুটবল ভক্তদের অনেকেই তখন লিওনেল মেসিকে 'নতুন ম্যারাডোনা' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
কোচ ম্যারাডোনার তত্ত্বাবধানে ২০১০ বিশ্বকাপ খেলেন তাঁরই 'যোগ্য শিষ্য' লিওনেল মেসি।
২০১২ সালে ক্লাব ও দেশের হয়ে ৯১টি গোল করেন মেসি। এক পঞ্জিকাবর্ষে এত বেশি গোল শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে আর কেউ করতে পারেননি। ১৯৭২ সালে ৮৫ গোল করে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন জার্মান কিংবদন্তি জার্ড মুলার।
বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে মেসির দখলে আছে অনন্য একটি রেকর্ড। ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার 'গোল্ডেন বল' (বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়) জেতার কীর্তি আছে তার।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে আর্জেন্টিনা হারলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার যায় মেসির ঝুলিতে।
এরপর আর্জেন্টিনাকে ২০২২ বিশ্বকাপ জিতিয়ে দ্বিতীয়বার এই পুরস্কার জেতেন তিনি।
মেসি ব্যালন ডি'অর জিতেছেন ৮ বার। মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার জেতার ক্ষেত্রে তার কাছাকাছি আছেন কেবল পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (৫ বার)।
বার্সেলোনার হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল আর পিএসজির হয়ে ৭৫ ম্যাচে ৩২ গোল করেছেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার।
জাতীয় দলের (আর্জেন্টিনা) হয়ে ১৭৫ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ১০৩ গোল করেছেন মেসি।
ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলিয়ে ১০২৮ ম্যাচে ৮০৭ গোল করেছেন ক্ষুদে এই জাদুকর।
বার্সেলোনার হয়ে ক্লাব ইতিহাসে সর্বাধিক ৩৫টি ট্রফি জিতেছেন মেসি।
তার মধ্যে ১০টি লা লিগা, ৮ স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৭টি কোপা দেল রে, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি ক্লাব বিশ্বকাপ ও ৩টি ইউরোপিয়ান সুপার কাপের ট্রফি।
পিএসজির হয়ে ফরাসি লিগ সহ ৩টি ট্রফি জিতেছেন মেসি।
২০০৫ সাল বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন প্রথম লা লিগা। সেই বারের জন্মদিনটা নিশ্চয়ই বিশেষ ছিল মেসির জন্য।
২০০৬ সালের মে মাসে জিতেছেন প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। সেই বার মেসি উদযাপন করেছেন ১৯তম জন্মদিন।
এরপর সময়ের পরিক্রমায় এমন অনেক শিরোপা জয়, এমন অনেক 'বিশেষ জন্মদিন' চলে গেছে লিওনেল মেসির।
২০২১ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছেন ৩৪তম জন্মদিন পালনের ঠিক পরের মাসেই।
২০২২ সালে ইতালিকে হারিয়ে লা ফিনালিসিমা জিতে পালন করেছেন নিজের ৩৫তম জন্মদিন।
এতগুলো 'বিশেষ জন্মদিন' কাটানো মেসি অপেক্ষায় ছিলেন একটি 'অতি বিশেষ জন্মদিন' পালনের। সেটি হচ্ছে- বিশ্বকাপ জয়ের পরের নিজের প্রথম জন্মদিনটি।
স্বপ্নের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর গতবছর ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির প্রথম জন্মদিন ছিল সেটি৷
বছর ঘুরে এসেছে আরও একটি জন্মদিন, কোপা আমেরিকা চলাকালীন আজ (২৪ জুন) নিজের ৩৭তম জন্মদিন উদযাপন করছেন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি।
শুভ জন্মদিন 'লিটল ম্যাজিশিয়ান' মেসি। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে থাকা কোটি কোটি অনুরাগী এবং 'মেসি পাগল' এক ভক্তের (লেখক) পক্ষ থেকে ফুটবল জাদুকরের জন্মদিনে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
অবসরের আগ পর্যন্ত নিজের বাঁ পায়ের জাদু দিয়ে বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখুক আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা।