গত ৮ জুন বগুড়ার কাহালুতে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু নিয়ে চলছে এলাকায় নানা গুনঞ্জন। তা হলে কি ঐ স্কুলছাত্র বিদ্যুৎপৃষ্টে মৃত্যু হয়েছে না কি পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, কেন মোবাইল নিয়ে লুকো-চুরি কি ছিল ঐ মোবাইলে ।
ঐ রাতে কাহালু উপজেলার সিন্দুরাইল গ্রামের কুয়েত প্রবাসী এরশাদুল ইসলাম টুকুর ছেলে কাহালু মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র আবু মুছা ওরফে ফাহাদ (১৫)সহ আরো ১৩/১৪ জন সমবয়েসী কিশোর একই গ্রামের প্রবাসী জহুরুল ইসলামের (কাহালু-মালঞ্চা রাস্তার পার্শ্বে) নির্মানাধীন একটি বিল্ডিং বাড়ীতে পিকনিক করে।
পিকনিক শেষে বিল্ডিং মালিক জহুরুল ইসলামের ছেলে রাফিউল (১৩) সহ অন্যরা বাড়ীতে চলে যায়। ফাহাদ সহ ৩/৪ সেখানে থেকে যায় এবং সেখানেই গভীর রাতে বিদ্যুৎতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হলে তার পরিবারের কাউকে না জানিয়েই ফাহাদকে হাসপাতাল নেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং পথেই তার মৃত্যু হয় বলে জানাগেছে।
এরপর সংবাদ পেয়ে কাহালু থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যান এবং গ্রামবাসী নিকট হতে ঘটনা শুনে মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন। তবে সে সময় নিহত ফাহাদ এর বাবা কুয়েত থাকায় পরিবারের পক্ষ হতে কোন মামলা করা হয়নি। তবে দিন যতই যাচ্ছে ফাহাদের মৃত্যু নিয়ে ততই বাড়ছে গুনঞ্জন।
বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলা হলে ফাহাদের মৃত্যু বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়েছে বলে জানানোর পাশা-পাশী অনেকে আবার এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মন্তব্য করেন। আর এ হত্যাকান্ডের সাথে নির্মানাধীন বাড়ীর মালিকের স্ত্রী আরেফা ও অতিসম্প্রতি প্রবাস থেকে আসা এক যুবকের নাম উঠে এসেছে। ঐ সব লোকজন আরো জানান যে,জহুরুল ইসলাম ও তার বাবা বুলু দীর্ঘদিন যাবত বিদেশ খাকায় জহুরুলের স্ত্রী আরেফা বেপরোয়া ভাবে চলা ফেরা করতে থাকে।
জহুরুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ও টুকুর ছেলে ফাহাদ প্রায় সমবয়েসী হওযায় তাদের মাঝে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে ফলে ঐ বাড়ীতে ফাহাদের অবাদ যাতযাত ছিল।
ঘটনার ২/৩ দিন আগে বাড়ীতে কোন মানুষ না থাকার সুয়োগে প্রবাস ফেরৎ ঐ যুবকের সাথে জহুরুলের স্ত্রীর অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে, বিষয়টি ফাহাদ দেখে ফেলে এবং তার মোবাইলে দৃশ্যটি ধারণ করে, এনিয়ে গ্রামে কানাঘুষা শুরু হলে বিষয়টি ধামা-চাপা দিতে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হতে পারে। যার কারণে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত উদ্ধারের জন্য ফাহাদের মোবাইলের সন্ধান করেও সেটি সে সময় উদ্ধার করতে পারেনি কারণ মোবাইলটি তখন জহুরুলের স্ত্রী আরেফার নিকট ছিল।
মোবাইলটি যে আরেফার কাছে ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিবেশী জনৈকা মহিলার কাছ থেকে।তিনি জানান, ঘটনার পরপররই জহুরুলের স্ত্রী আরেফা ও জহুরুলের মা জোহুরা বেগম ঐ রাতে আমার বাড়ীতে আশ্রয়ের জন্য আসে, তখন আমি তাদের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানালে, ফাহাদের মোবাইলটি রাতে আমার নিকট রাখার জন্য অনুরোধ করেন কিন্তু তাতেও আমি রাজি না হলে তারা মোবাইলসহ পার্শ্বে আর একটি বাড়িতে ঐ রাত যাপন করে ঘটনার।
২/৩ দিন পর নিহত ফাহাদ এর বাবা এরশাদুল ইসলাম টুকু প্রবাস থেকে বাড়ীতে এসে ছেলের মোবাইলের খোঁজ করে বাড়ীতে না পেয়ে তার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য আজিজার রহমানসহ জহুরুলের স্ত্রী আরেফাকে মোবাইল বের করে দিতে বলে, প্রথমে মোবাইলের কথা অস্বীকার করে। পরে চাপের মুখে কয়েকদিন পর জহুরুলের স্ত্রী আরেফা মোবাইলটি ফাহাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে।
এখন প্রশ্ন হলো ঘটনার রাতেই কি ভাবে ফাহাদের মোবাইল আরেফার নিকট পৌছালো? কেনই বা মোবাইলের কথা আরেফা পুলিশের নিকট গোপন করলেন? ঘটনার পরপরই ঐ রাতে কেন আরেফা ও তার স্বাশুড়ি বাড়ি থেকে ঐ মোবাইল সহ পালিয়ে থাকলেন। তা হলে কি মোবাইলে থাকা তথ্য-আলমত নষ্ট করতেই কি হত্য কান্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এইসব প্রশ্নসহ আরো অনেক প্রশ্নের কোন উত্তর মিলাতে পারছেনা গ্রামবাসী।
এমতবস্থায় বিষয়টি সঠিক ভাবে তদন্ত পূর্বক সত্য উদঘটনে সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থার প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি নিয়ে আরেফার সাথে কথা বলা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।
বিষয়টি নিয়ে কাহালু থানা অফিসার ইনর্চাজ সেলিম রেজা এর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন এব্যাপারে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না পাওযায় মামলা করা সম্ভব হয়নি তবে আমাদের সন্দেহ হওযায় মৃতদেহ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছিল। তবে ফাহাদের মৃত্যু বিদ্যুৎপৃষ্টে হয়েছে না তাকে হত্য করা হয়েছে সেটি পোষ্ট মর্টাম রির্পোট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।