বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১ বৈশাখ ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫
চাঁদাবাজির ফোনালাপ নিয়ে মুখ খুললেন ভূক্তভোগী নারী
কামরুজ্জামান রনি, চট্টগ্রাম :
প্রকাশ: সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪, ৭:৫৯ PM আপডেট: ০১.০৭.২০২৪ ৮:০৪ PM
গত মে মাসে আমার আকবর শাহ নামক একটি আইডি থেকে একজন কথিত ভূক্তভোগীর ফোনালাপ প্রচার হয়। সেই ফোনালাপটি ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে সড়ক নির্মানের চাঁদাবাজি সংক্রান্ত। যেখানে একজন নারীর সাথে একই এলাকার একজন পুরুষ প্লট মালিকের সাথে কথা বলতে শোনা যায়। সেই ফোনালাপে তাদের প্লটের রাস্তা নির্মানের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর জসিমকে প্লটের কাঠা প্রতি ১০ হাজার টাকা দিতে হবে মর্মে কথা বলতে শোনা যায়। 

সেই ফোনালাপের সূত্র ধরে বাংলাদেশ বুলেটিন হাজির হয় কথিত সেই ভূক্তভোগী মহিলার কাছে। কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এবার পুরো বিষয়টি ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেন। ডলি নামের সেই নারী এখন দাবী করছেন, তার কাছে কাউন্সিলর জসিম কখনো চাঁদা চাওয়া তো দূরের কথা কাউন্সিলরের সাথে তার নাকি কোনদিন সরাসরি সাক্ষাতও হয়নি। তাঁকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ফোনে কথা বলেছিলেন এক ব্যক্তি। কিন্তু প্রচার হওয়া সেই ফোনালাপটি এডিট করে প্রচার করা হয়েছে বলেও পালটা অভিযোগ তুলেন ডলি। 

পূর্ব ফিরোজশাহ গাউসিয়া লেকসিটি নাছিয়া ঘোনা এলাকার সেই কথিত ভূক্তভোগী নারী ডলির নিজ বাড়িতে ফোনালাপের বিষয়ে কথা হয় প্রতিবেদকের সাথে। এসময় ডলির বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল হারুন ও পার্শ্ববর্তি আরেকটি প্লট মালিক মো: শামিম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

ফোনালাপে ওঠা রাস্তা নির্মানের জন্য কাউন্সিলর জসিমের চাঁদাদাবির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডলি বলেন, “যার সাথে আমার ফোনালাপ প্রচার করা হয়েছে তাকে আমি চিনি না। তবে ঐ লোক কল করার আগে স্থানীয় নুরু আমাকে কল করে বলে, আপা আপনারা দশ হাজার করে যে টাকা দিচ্ছেন সেটি একজন নতুন প্লট মালিক বিশ্বাস করছে না। উনাকে আপনার নাম্বারটি দিলাম, সেই প্লট মালিক আপনাকে ফোন দিলে আপনি বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলিয়েন। এরপর আমাকে শফিকুল ইসলাম খান নামের এক ব্যক্তি নিজেকে আমাদের এখানেরই একটি প্লটের মালিক পরিচয়ে কল করেন। 

তিনি জানতে চেয়েছিলেন, আমরা ১০ হাজার টাকা করে যে টাকা দিচ্ছি এটা কিসের জন্য দিচ্ছি? তখন আমি বলছি যে না আমরা তো দশ হাজার করে টাকা দিচ্ছি না। আমার কথা গুলো সম্ভবত তিনি কেটে দিছে। আমি বলেছিলাম, আমরা তো কমিশনারকে (কাউন্সিলর জসিম) দিচ্ছিনা। এটা আমরা প্লট মালিকরা বসে স্বীদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতি প্লটে কাটা প্রতি ১০ হাজার করে টাকা নিয়ে নিজেদের ফান্ডে রেখে পরে লাগলে দেখা যাবে। অথচ উনি (শফিকুল ইসলাম খান) আমাকে বার বার খুচিয়ে খুচিয়ে জিজ্ঞাস করছিলো এটা কি ঘুষ? সিটি কর্পোরেশন কাজ করাচ্ছে আমাদের কেন টাকা দিতে হচ্ছে?  আমার পাঁচ কাটা জায়গা আছে আমার তো তাহলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে।”

প্রচার হওয়া সেই ফোনালাপটিকে এডিট কিংবা কাট ছাট করে প্রচার করা হয়েছে উল্লেখ করে ডলি বলেন, আমি সেটি শুনে নিজেও অবাক হয়েছি এবং বিব্রত বোধ করছি। কারণ আমি সেভাবে কথা গুলো বলিনি। এখন কথা গুলো এমন ভাবে প্রচার করা হচ্ছে যাতে। 

এই যে কাঠা প্রতি দশ হাজার টাকার কথা ফোনালাপে শোনা গেছে এই টাকার বিষয়টা তাহলে কোত্থেকে আসলো এই প্রশ্নের জবাবে জলি বলেন, আরো বছর খানেক আগে আমাদের এখানে প্লট মালিকরা বসে রাস্তা নির্মানের বিষয়ে একটি ফান্ড করা স্বীদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন কথা হয়েছিল আমরা প্রতিটা প্লট মালিক কাঠা প্রতি ১০ হাজার করে টাকা জমা করবো। সেই বৈঠকে কাউন্সিলর জসিম উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে জলি বলেন, না তিনি কেন থাকবেন। সেটা আমরা আমরাই বসেছিলাম। আমার সাথে আজ পর্যন্ত কাউন্সিলর জসিম ভাইয়ের সাথে কখনো কথা হয়নি। 

সেই ফান্ডে কত টাকা জমা দিয়েছিলেন জানতে চাইলে ডলি বলেন, আসলে আজ অব্দি আমরা কেউ একটা টাকাও জমা করিনি। একই কথা বললেন ডলির ভাই আব্দুল্লাহ আল হারুণ। তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ছোট্ট একটা আবাসিক। এটার উন্নয়ন আমরা নিজেরাই করতে পারবো। তাই নিজেরা একটি ফান্ড গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এখানে কাউন্সিলর জসিম সাহেবের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এই আবাসিকের আরেক ভূমি মালিক মো: শামিম জানান, ডলি আপাকে যে প্লট মালিক পরিচয়ে ফোনে কথা বলেছিল সেরকম কোন প্লট এখানে নেই৷ রাস্তা নির্মানে কাউন্সিলরকে চাঁদা দেয়ার প্রসঙ্গে শামিম বলেন, আমি আমার প্লটের সামনে নিজের টাকায় নিজে ঢালাই করে রাস্তা বানিয়েছি। কেন কাউন্সিলর চাঁদা চাইবে আর আমরাই বা কেন চাঁদা দিব। 

খোঁজ নিয়ে যানা গেছে কথিত সেই শফিকুল ইসলাম খান নামের কোন প্লট মালিক সেখানে বসবাসই করে না। তবে নুরু নামের যে ব্যক্তি ডলিকে কল দিয়ে কথিত প্লট মালিক পরিচয় দিয়ে শফিকুল ইসলাম খানের সাথে কথা বলতে বলেছিলেন তিনি একজন চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। নুরুর বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। নুরুর সাথে কাউন্সিলর জসিমের কোন বিরোধের জেরে পরিকল্পিত ভাবে ৩য় কোন পক্ষকে ব্যবহার করে এই ফোনালাপ রেকর্ড করে প্রচার করা হচ্ছে। 

কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম জসিম বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, আমি স্থানীয় একাধিকবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। সিটি কর্পোরেশন যেসকল পরিকল্পনা আমার ওয়ার্ডে নেবে আমি সেগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করবো এটাই আমার কাজ। অনেকে নিজেদের উদ্যোগে আবাসিক গড়ে তুলেছে যেগুলো আমাদের সিটি কর্পোরেশনের রাস্তার হিসেবে আওতা ভূক্ত হয়নি। সুতরাং সেখানে চসিক রাস্তা নির্মাণ করে দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। এসব পরিকল্পিত অপপ্রচার, আমি আইনী ব্যবস্থা নিবো। 

এভাবে কারো অনুমতি ছাড়া মিথ্যা পরিচয়ে কারো কথা রেকর্ড করে সেটিকে এডিট করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার করা আইনত অপরাধ বলছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট অশোক কুমার দাশ। তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, সেই নারী যদি মনে করেন তার বক্তব্যকে এডিট বা কাট ছাট করে বিনা অনুমতিতে প্রচার করা হচ্ছে তাহলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন এবং আদালত এটিকে আমলে নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এই বিষয়ে স্থানীয় নুরু ও কথিত প্লট মালিক শফিকুল ইসলাম খানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত