রায়পুরায় ট্রেনে কাটা পড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মেইল ট্রেন কাটা পরে তাদের মৃত্যু হয়। রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেইট এলাকায় দুই কিলোমিটার অদূরে পলাশতলী ইউনিয়নের খাকচর কমলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ। নিহত সবাই পুরুষ। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সবগুলো মরদেহ কাছাকাছি হওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রায়পুরা একটি টেঁটা প্রবণ এলাকা। কিছু দিন পর পরই এই অঞ্চলের চরাঞ্চলে ভয়ংকর টেটা যুদ্ধসহ সংর্ঘষ বাঁধে। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে সুমন মিয়া নামে এক ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিদন্দ্বি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী ও তার সমর্থরা। এই নিয়ে পুরো রায়পুরায় অস্থিরতা বিরাজ করছিল।
এরই মধ্যে সুমন হত্যা মামলা অন্যতম অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া অপর প্রতিদন্দ্বী ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী আবিদ হোসেন রুবেল জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসে। এলাকার আধিপত্ব ফিরে পেতে ওই সময় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায় রুবেল ও তার সমর্থকরা। ওসময় এলাকায় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। একাধিক হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো পক্ষ নিহতদের হত্যার পর লাশ রেল লাইনে ফেলে গেছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেইট এলাকায় পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুরে রেল লাইনের পাশে ছিন্নবিচ্ছিন্ন ৫টি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে নিহতদের মরদেহ উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তবে কি কারণে বা কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি রেল পুলিশ ও রেল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও রেল কর্তৃপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা হলেও ৫ জন মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। সর্বশেষ স্টেশনে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। ভোরে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মেইল ট্রেনটি মেতিকান্দা স্টেশন অতিক্রম করার সময় সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ট্রেনটির ছাদে কয়েকজন যাত্রী ছিল। তবে এই যাত্রীরাই কি মারা গেছে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) আফসান আলম জানিয়েছেন, ৫ জন নিহতের ঘটনায় বিভিন্ন দিক সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। তারা কি ট্রেন থেকে পরে মারা গেছেন নাকি মেরে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে, সেসব দিকও বিবেচনা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী সোহেল রানা বলেন, সকালে রেল লাইনের পাশে লোকজনের ভিড় দেখে এগিয়ে আসি। এসে দেখি রেল লাইনে মানুষের শরীরের বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ ও রক্ত দেখতে পাই। একটু সামনে এগুতেই একটি মরদেহ দেখা যায়। পরে আরও একটু সামনে গেলে আরও ৪টি লাশ দেখা যায়।
তিনি বলেন, এটি পারাপারের জন্য কোন রাস্তা নয়। তাই্ এই মৃত্যুগুলো রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
এলাকাবাসী রতন হাওলাদার বলেন, ৫ জন লোক মারা গেছে শুনে এখানে দেখতে এসেছি। যে জায়গাটিতে মারা গেছে। এটি চলাচলের রাস্তা নয়। এমনকি তারা এলাকার লোকও নয়। তারা কিভাবে এখানে এসেছে একমাত্র আল্লাহই বলতে পারবে।
রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা শরীরগুলো একত্র করেছি। এরপরই পরিচয় শনাক্তের জন্য নরসিংদীর পিবিআই সদস্যদের খবর জানিয়েছি।
স্টেশনমাস্টার আশরাফ আলী বলেন, তারা ট্রেনের ছাদ থেকে পিছলে পড়ে কাটা পড়েছেন, নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত ব্যক্তিরা স্থানীয় কেউ নন বলে জানা গেছে। লাশ উদ্ধারের আগে ওই রেললাইন দিয়ে আরও তিনটি ট্রেন চলাচল করেছে।