সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫ ৮ বৈশাখ ১৪৩২
সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫
কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে যা বললেন প্রধান বিচারপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪, ১২:২০ PM আপডেট: ১১.০৭.২০২৪ ১২:৩০ PM
কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিন তাদের জন্য আদালতের দরজা খোলা, তারা নির্বাহী বিভাগের কথা কেন বলছে-এমন প্রশ্ন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) আপিল বিভাগে একটি মামলার শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্টের নেতাদের উদ্দেশ্যে করে তিনি এসব কথা বলেন।
 
প্রধান বিচারপতি বলেন,কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদেরকে পরামর্শ দিন, তারা কেন নির্বাহী বিভাগের কথা বলে? নির্বাহী বিভাগের যে কোনও সিদ্ধান্ত তো আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা।

কোটা আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো আইনজীবীদের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন। আমরা সেটি গুরুত্ব সহকারে শুনব। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে জাতীয় সংসদকে ১৬ দফা পরামর্শ দেয়া সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
 
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, দেশের স্বার্থে হাইকোর্ট দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ১৬ দফা পরামর্শ দিয়েছেন।
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সংসদকে পরামর্শ দিতে যাব কেন? আমরা কি সংসদকে পরামর্শ দিতে পারি? হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশনা দিতে পারেন।
 
বুধবার (১০ জুলাই) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের রায়ের ওপর ৪ সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরতে বলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

অ্যার্টনি জেনারেল এ এম আমিন বলেন, আদালতের এ আদেশের পর কোটা নিয়ে আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। আসলে আদালতের এ স্থিতাবস্থার পর কী দাঁড়াল? কোটা আছে, নাকি নেই?

ঘটনার সূত্রপাত ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়কে ঘিরে। রায়ে আদালত বাতিল হওয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখেন। এরপর শুরু হয় কোটাবিরোধী আন্দোলন।
 
বুধবার (১০ জুলাই) সবার নজর ছিলো সর্বোচ্চ আদালতের দিকে। জনাকীর্ণ আদালতে সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হয় রিটের শুনানি। রাষ্ট্র ও দুই ছাত্রের পক্ষের আইনজীবী হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদন জানান। আর বহাল রাখার পক্ষে মত দেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের আইনজীবী। তবে এদিন সবারই সূর ছিলো নরম। তিন পক্ষের শুনানি শেষে কোটা নিয়ে ৪ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এর ফলে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষা হবে। তবে সেটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত।
 
আদালতের আদেশের পর দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা এখন আর বহাল থাকবে না। সবার স্বার্থে আদালত এই স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি যখন হবে, আপিল বিভাগ যে ফয়সালা দেবেন সবাইকে তা মেনে নিতে হবে। 
 
আদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে। আন্দোলনকারীদের কোনো বক্তব্য থাকলে, আদালতে গিয়ে বলার পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি।
 
আপিল বিভাগের আদেশের পর অ্যার্টনি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, কোটা বাতিলের সরকারের সিদ্ধান্ত আপাতত বহাল থাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
 
‘সুপ্রিম কোর্ট বলেন, ‘তাদের (আন্দোলনকারীদের) কোনো বক্তব্য থাকলে আদালতে এসে বলতে পারেন।’ আদেশেই তাদের এই সুযোগ দেয়া আছে। এখন আর আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখন অবশ্যই তাদের ফিরে যাওয়া উচিত। জনদুর্ভোগ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ আর তাদের কাছে নাই, বলেন তিনি।
 
এদিকে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৮ সালের কোটা বাতিল সংক্রান্ত সরকারের পরিপত্র বলবৎ আছে। তাই জনদুর্ভোগ তৈরি থেকে আন্দোলনকারীদের বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। 

ফেসবুকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‌সর্বোচ্চ আদালত শুধু স্থিতাবস্থার আদেশ দেননি। শুধু স্থিতাবস্থার আদেশ দিলে কোটা বিষয়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছিলেন সেটি বলবৎ থাকতো। খেয়াল করতে হবে, সর্বোচ্চ আদালত কোটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ কোটা বিষয়ে সরকারের জারি করা পরিপত্র এখন আবার বলবৎ হলো। ৭ আগস্ট মামলাটি ফের শুনানির জন্য উঠবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।

আদালতে কোন পক্ষ কী চেয়েছিল?
 
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই ছাত্রের পক্ষের আইনজীবী হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদন জানান। আর বহাল রাখার পক্ষে মত দেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের আইনজীবী। তবে এদিন সবারই সূর ছিলো নরম।
 
আদালতে অ্যাটর্নি জেরালের এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখনও হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাইনি। রায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারছি না। কোটা রাখা না রাখা সরকারের নীতিগত বিষয়। যেহেতু গত ৫ বছর ধরে কোটা পদ্ধতিটা বিলুপ্ত ছিলো, তারপরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আপনারা। সে পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চাই।’
 
দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহ মনজুরুল হক বলেন, আমরা কোটা সম্পূর্ণ বাতিল চাই না। তবে চলমান সংকট নিরসনে হাইকোর্টের রায় হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের রায় স্থগিত চাচ্ছি।
 
কোটা বহাল চেয়ে রিটকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‌‘সব কোটা নিয়ে নয়, আমাদের আপত্তি মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল নিয়ে। জাতির পিতা মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা দিয়েছেন। মেধা দিয়েই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। শুধু চূড়ান্ত বিচারে কোটার সুবিধা পায়। বাতিল আন্দোলনের নামে অনেকে এখন মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে কথা বলছেন। মেধা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকুক।’
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত