মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
মাদ্রাসাছাত্রীকে ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস খাওয়ান সভাপতি, অতঃপর...
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪, ২:০৫ PM
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির বিরুদ্ধে। গত ৮ জুলাই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম পলাতক রয়েছেন। এমন কাণ্ডে মাদ্রাসাটি বন্ধ করে তালা ঝুলিয়েছেন স্থানীয়রা ।

জানা গেছে, ২০১১ সালে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় উপজেলার ধর্মগড় ভরনিয়া গ্রামে ‘ভরনিয়া দারুল হাদীস ওয়াদ দাওয়াহ্ আস্-সালাফিয়্যা’ মাদ্রাসাটি গড়ে উঠে। মাদ্রাসাটির দুটি শাখা রয়েছে। একটি ছাত্রীদের জন্য আবাসিক এবং অপরটি ছাত্রদের জন্য অনাবাসিক। আবাসিকে ১০-১৫ জন ছাত্রী থাকনে। 

মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম মিলার মাদ্রাসা পরিদর্শনের নাম করে রাতের বেলা প্রায় আবাসিকে যাতায়াত করতেন এবং ছাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে জুস খাওয়াতেন। জুসে মেশানো থাকত চেতনানাশক ওষুধ বা ঘুমের বড়ি। আর যে ছাত্রীকে তিনি টার্গেট করতেন তাকে গভীর রাতে গিয়ে ধর্ষণ করতেন।

ধর্ষণের দিন সব ছাত্রীদের ছুটি দেওয়া হলেও তিনজনকে সভাপতির নির্দেশে ছুটি দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম ওই রাতে তাদের ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস খাওয়ান। তারা ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করে একজনকে ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন।

এসময় পাশে থাকা এক ছাত্রীর হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে সে বিষয়টি টের পেয়ে চিৎকার করে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনার সত্যতা দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ জানান। পরের দিন সকালে আব্দুল করিমের বাড়ি ঘেরাও করেন স্থানীয়রা। কিন্তু তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

মাদ্রাসার এক ছাত্রী বলেন, সভাপতি আব্দুল করিম প্রায় মাদ্রাসায় আসতেন এবং মাঝেমধ্যে ছাত্রীদের জুস খাওয়াতেন। মনে হয় জুসের মধ্যে ঘুমের ওষুধ থাকত। কারণ যেদিন তিনি জুস খাওয়াতেন সেদিন অনেক বেশি ঘুম পেত। সবাই যখন ঘুমিয়ে যেত তখন সভাপতি সুযোগ বুঝে একজনকে টার্গেট করে পাশবিক নির্যাতন চালাতেন।

এক ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে কয়েকদিন ধরে মাদ্রাসা যেতে চায় না, কেন যাবে না জানতে চাইলে সে বলে ওখানকার সভাপতি আপত্তিকর মন্তব্য করে। তাকে যেন অন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেই সেই শর্তও জুড়ে দিয়েছে।

ধর্ষণের প্রসঙ্গে মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সপাল আব্দুল মানান বলেন, আমি ঘটনাটি শুনে তাৎক্ষণিকভাবে এর সত্যতা জানতে পারি। তবে ঘটনার পর থেকে সভাপতিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

রাণীশংকৈল থানার ওসি জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, গতকাল বুধবার রাতে মেয়ের বাবা লিখিত অভিযোগ করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সভাপতির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, খবর পেয়ে আমি মাদ্রাসা পরিদর্শনে করেছি। শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল মান্ননের কথা অনুযায়ী ফলের জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সভাপতি আব্দুর করিম একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা পাওয়া গেছে। বর্তমানে মাদ্রাসাটি বন্ধ রেখে তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত