ফেসবুকে সমালোচনার মুখে পড়েছেন জনপ্রিয় শিল্পী তাহসান। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসকাণ্ডে দেশজুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। এরই মধ্যে হঠাৎ করেই আলোচনা আসে সংগীত-অভিনয়শিল্পী তাহসান রহমান খান ও তার মায়ের নাম। এতে যাচাই না করেই জনপ্রিয় এ গায়ককে নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করছেন তারা।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার আলোচিত গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীর সঙ্গে পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান জিনাতুন নেসা এবং তার ছেলে সংগীতশিল্পী তাহসান খানকেও তোলা হয়েছিলো একই পাল্লায়। চলছিলো ফেসবুক ট্রায়াল। বলা হচ্ছিলো, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাহসানের মা, কারণ আবেদ আলী ছিলেন তার গাড়ি চালক। শিল্পী নিজেও নাকি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন তার মায়ের সুবাদে! পরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ওই পরীক্ষা বাতিল হলে নতুন করে নেওয়া মৌখিক পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন!
তাহসানের মা সাবেক পিএসসি চেয়ারম্যান ড. জিনাতুন নেসার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিসিএসে তাহসান প্রথম হয়েছেন এমন দাবিও করা হয়। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তাহসান। সম্প্রতি এক গণমাধ্যমকে তাহসান জানান, তার বিসিএস দেওয়ার বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।
তাহসানের কথায়, ‘আমি কখনোই বিসিএস দেইনি। ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়া তো প্রশ্নই আসে না।’ আরও জানালেন, ‘প্রথম হওয়া তো দূরের কথা তিনি কখনও বিসিএস পরীক্ষাতেই অংশ নেননি!’
মায়ের নাম জড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এই তারকা বলেন, ‘এখানে একটা ভুল হচ্ছে। এই ড্রাইভার অফিসের অন্যান্য ড্রাইভারদের মতোই একজন। তিনি আমার মায়ের ড্রাইভার নন।’ তাহসান এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন ব্যক্তিগত কাজে। সেখান থেকে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কিন্তু কোনও দিন বিসিএস পরীক্ষা দিইনি। আর যেই গাড়িচালকের (সৈয়দ আবেদ আলী) কথা বলা হচ্ছে, তিনি কোনও দিন আমার আম্মার গাড়িচালক ছিলেন না।’
বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত রয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তিন কর্মকর্তা ও সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মূল আলোচনায় গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। সেই আবেদ আলীর সূত্র ধরেই সামাজিক মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নাম চলে আসে তাহসানের।
ফেসবুকে রিউমার স্ক্যানার জানিয়েছে ২৪তম বিসিএসে ভাইভায় তাহসানের বাদ পড়ার বিষয়টি সত্য নয়। সেখানে বলা হয়েছে, মূলত ২০০৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৪তম বিসিএস’র প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ৩ মার্চ পরীক্ষাটি বাতিল করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)। পরবর্তী সময়ে পুনরায় ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং লিখিত পরীক্ষা ও ভাইবার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়।
তাহসানের মা অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ২০০২ সালের মে মাস থেকে ২০০৭ সালের একই মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ছিলেন। আর সৈয়দ আবেদ আলী ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পিএসসির গাড়িচালক ছিলেন। সৈয়দ আবেদ আলী প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার ঘটনায় ২০১৪ সালে পিএসসি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, আবেদ আলী যত দিন পিএসসির চাকরিতে ছিলেন, তত দিন তিনি সংস্থাটির কোনও চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন না। তিনি একজন যুগ্ম সচিবের গাড়িচালক ছিলেন।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই তাহসানের বিরুদ্ধে প্রচারিত এই গুজবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফেসবুকে। তথ্য প্রমাণ দিয়ে তাহসানের সহপাঠীরাও দাবি করেছেন, তাহসান বিসিএস পরীক্ষা দেননি। তবে অনেক শিল্পী ও সাধারণ মানুষ মনে করছেন, আবেদ আলীদের থেকে সবার নজর অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এসব ‘ভুয়া’ খবর সামনে আনা হচ্ছে।