রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫
এলডিসি ও ডাচ ডিজিজের ঝুঁকি
ড. মো. আইনুল ইসলাম
প্রকাশ: সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪, ৫:৪৬ PM
ভয়াবহ বৈশ্বিক ভাইরাস করোনার ২০২০-২১ সময়ের বিপর্যয়কাল বাদ দিলে দুই দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫-৬ শতাংশ বা তার বেশি হারে বৃদ্ধির (প্রবৃদ্ধি) প্রবণতা বজায় রেখেছে। 

নানা সংকট-শঙ্কার পরেও বাংলাদেশের অর্থনীতির এই উত্থান বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ নীতি প্রণয়নে ভুল ও ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীলতার কারণে এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতি বৈশ্বিক আগ্রহে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। 

দেশি-বিদেশি বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আসলে নড়বড়ে, তাই একটু টোকা দিলেই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। আর এমনই এক অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ গরিব বা স্বল্পোন্নত দেশের এলডিসির (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি) কাতার থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে, যা ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা এনে দেবে।

তবে ২০২১ সালের এলডিসি উত্তরণযাত্রার পরবর্তী তিন বছরের কর্মধারা বিশ্লেষণ করে অনেকের আশঙ্কা বাংলাদেশ তার উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় সাবলীল অবতরণ পরিকল্পনা বা স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস) সময়মতো বাস্তবায়ন করতে পারবে না, যা বাংলাদেশকে ‘মধ্য আয়ের দেশের ফাঁদে’ বন্দি করে ফেলতে পারে, যেখানে গরিব দেশের নাগরিক না হয়েও জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে গরিবি হালেই জীবন কাটাতে হবে। 

সময়মতো এসটিএস অর্জনে ব্যর্থতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ‘ডাচ ডিজিজ’ বা ডাচ রোগে আক্রান্ত করতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের ডাচ ডিজিজের মূল অনুষঙ্গ রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অন্যতম তিন উপসর্গ যথা অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি, মাত্রাতিরিক্ত আয়বৈষম্য এবং ক্রমবর্ধমান আমদানি প্রবণতা বাংলাদেশে ভালো করেই উপস্থিত আছে।

এসডিজি ও ডাচ ডিজিজের ঝুঁকি পর্যালোচনার আগে বলে নেওয়া প্রয়োজন, মূলত এলডিসি ও এসডিজিকে (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ডাচ ডিজিজের প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। 

ডাচ ডিজিজের উপসর্গ দীর্ঘদিন ধরে এখানে উপস্থিত থাকলেও গরিব (এলডিসি) রাষ্ট্র হওয়ায় বাণিজ্য, মেধাসহ আরো কিছু ক্ষেত্রে সুবিধার কারণে তা প্রকাশ পায়নি। এখন অর্থনীতির নানামুখী সংকট এবং এলডিসি-পরবর্তী মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদার লাভক্ষতির নানা বাধ্যবাধকতায় ডাচ ডিজিজের ঝুঁকির বিষয়টি জোরেশোরে সামনে এসেছে।

সংক্ষেপে বলা যায়, ১৯৭৭ সালে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ ম্যাগাজিন ডাচ ডিজিজ শব্দের প্রথম প্রয়োগ করে ১৯৫৯ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল এলাকা আবিষ্কৃত হওয়া, গাসের ওপর অতিনির্ভরশীলতা এবং গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার পর দেশটির অর্থনীতিতে নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব ব্যাখ্যা করতে। কোনো দেশের অর্থনীতি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ বা অন্য কোনো খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে উঠলে বুঝতে হবে নিকট ভবিষ্যতে সেখানে নেতিবাচক প্রভাবেরই প্রসার ঘটছে। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক সম্পদ বা কোনো খাতে চমৎকার নৈপুণ্য প্রদর্শন পাওয়া সৌভাগ্যের, কিন্তু তার ওপর নির্ভরশীলতা দুর্ভাগ্যের।

বাংলাদেশের ডাচ ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আলোচনায় প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, মনুষ্য শ্রমে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য ও সেবাকে বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশের জিডিপির অন্যতম দুই উৎস তৈরি পোশাকশিল্প এবং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স ডাচ ডিজিজের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। 

এ দুই খাতের চাহিদা বিশ্ববাজারে কমে গেলে আয় কমে যাবে। এমন অবস্থায় নির্দিষ্ট ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত দ্রব্যসেবা বাদে বাকি দ্রব্যসেবাগুলোর জন্য আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা আরো বাড়বে। এতে করে রপ্তানির ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হবে, যার প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য উচ্চ বেকারত্ব দেখা দেবে এবং তা চক্রাকারে অর্থনীতির সব খাতে ছড়িয়ে পড়বে।

এমন এক জটিল পরিস্থিতির সঙ্গে যদি অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি, মাত্রাতিরিক্ত আয়বৈষম্য এবং আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মিশ্রণ ঘটে, তাহলে ডাচ ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ডাচ রোগের উপসর্গ খতিয়ে দেখলে ঝুঁকির পরিমাণ ও প্রভাব কমানো সহজ হতে পারে। যদিও হাতে সময় আছে খুব অল্প।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ২০২৪ সালের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সূচকে এলডিসি উত্তরণের সবশেষ মূল্যায়নেও বেশ ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। 

মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অবস্থায় রয়েছে। তবে সামনে চারটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, যথা—বৈশ্বিক সংকট, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এবং বিদেশি সহায়তা বৃদ্ধি। বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের মতে, সিডিপির সুপারিশ এবং দুই দশক ধরে টানা প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতির কাঠামোতে অনেক দুর্বলতা আছে, যা বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশের ফাঁদে বন্দি ও ডাচ ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, যার পরিণতি দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ হতে পারে। 

কারণ, এ পর্যন্ত বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু এলডিসি থেকে উত্তোরিত হয়েছে। এসব দেশের অর্থনীতি বাংলাদেশের তুলনায় বেশ ছোট এবং একটি ছাড়া সবার অর্থনীতিই পৃথিবীব্যাপী সৃষ্ট যাবতীয় অবৈধ অর্থ ও কালোটাকা সাদা করার মূল ঘাঁটি। এ ছাড়া এসব দেশ উত্তরণ পর্বে ডাচ ডিজিজ এড়াতে রপ্তানিতে মৎস্য ও মানবসম্পদ খাতের ব্যাপক সহায়তা পেয়েছে।

অন্যদিকে ডাচ ডিজিজের প্রেক্ষাপট তৈরির নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ তার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানি এবং রেমিটেন্স খাত নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কৃষিসহ বাকি খাতগুলো উন্নত করার ক্ষেত্রে মনোযোগ দেয়নি। কাজেই এসব দেশের আলোকে বাংলাদেশের এলডিসি-পরবর্তী পর্ব পর্যালোচনা করলে ভুল হবে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্থিরমূল্যে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ৩৭.৫৬ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩৬.৯২ শতাংশ। জিডিপিতে অবদানের নিরিখে অন্যতম আরেকটি খাত প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স, যার অবদান ৪.৩৭ শতাংশ। 

দশকভর ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি প্রবণতায় এ দুই খাত নেতৃত্ব দিয়েছে। যেকোনো অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তবে কোভিড-১৯-পরবর্তী সময়কালে বাংলাদেশকে কৃষি ও কৃষকসমাজই রক্ষা করেছে, পরে রেমিট্যান্স এগিয়ে এসেছে। মূলত এ সময়ই পোশাক খাতের বিপর্যয় ডাচ ডিজিজের প্রভাব কেমন হতে পারে, তার কিছুটা নমুনা দেখিয়েছে। 

বৈদেশিক মুদ্রা আয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্যবিমোচন, এই খাতের ভূমিকা অসামান্য। এই খাতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জড়িত, যার ৫০ শতাংশই নারী। গত কয়েক দশকে ইউরোপে বাংলাদেশে নির্ভরশীলতা বেড়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে কিছুটা কমেছে। আর অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়লেও তা প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট পোশাক রপ্তানিতে অপ্রচলিত বাজারের হিস্যা ছিল ৬.৮৭ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছে ১৮.৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ, ১৫ বছরে বাংলাদেশের অপ্রচলিত বাজার ধরার সক্ষমতা বেড়েছে মাত্র ১১.৮ শতাংশ বা বার্ষিক ০.৭ শতাংশ। অপ্রচলিত বাজারের এই রপ্তানি ক্ষমতার সঙ্গে ডাচ ডিজিজের গভীর সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হলেও পণ্য ও রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণ ও মূল্য সংযোজনে বাংলাদেশের যোগ্যতা খুবই সীমিত। যেমন—মোট পোশাক রপ্তানির ৭৩ শতাংশই আসে শস্তা মূল্যের টিশার্ট, ট্রাউজার, সোয়েটার, জ্যাকেট ও কটন শার্ট থেকে। ৭৫ শতাংশ পণ্যই কটনের তৈরি অথচ বিশ্বে বস্ত্র ও পোশাক বাজারের কটনের হিস্যা মাত্র ২৫ শতাংশ। বৈশ্বিক বাজারে নন-কটন পণ্যের চাহিদা ক্রমাগত বাড়লেও ৪০ বছরেও বাংলাদেশ রপ্তানিতে কটননির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। 

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল অফিসের (ওটেক্সা) তথ্য অনুসারে, দেশটিতে মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে ভোক্তাসামর্থ্য কমে যাওয়ায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ২৪.৯১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৭৯ বিলিয়ন ডলারে। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক একসঙ্গে মেলালে রপ্তানি ২৫.৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৯৫ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে আরেক মূল বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১.২৪ শতাংশ কমে ১.১৩৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে এসব বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক বসবে।

তৈরি পোশাক বাজারের পাশাপাশি জিডিপির অন্যতম আরেক খাত রেমিট্যান্স ও অভিবাসন চিত্রও খুব একটা সুখকর নয়। গত জুনে, অর্থাৎ কোরবানির মাসে রেকর্ড ২৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, বিদ্যমান বিনিময় হার মূল্যে যা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.৬৬ শতাংশ। 

রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি থাকলেও এই খাতেও ডাচ ডিজিজের প্রবল ঝুঁকি আছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় রেমিট্যান্স ও অভিবাসন খাতের বৈশ্বিক প্রবণতার দিকে তাকালে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ অনুসারে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নীতির কারণে বাংলাদেশ কালোবাজারের সুবিধা নিতে এবং অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ লেনদেন করতে উৎসাহিত করছে, যে কারণে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়েও রেমিট্যান্স আয় কমছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরাই স্বীকার করছেন, বাংলাদেশ যে পরিমাণ লোক বিদেশে পাঠাচ্ছে, তার তুলনায় রেমিট্যান্সের আয় বেশ কম। অনেক দেশ এর চেয়ে কম লোক পাঠিয়ে বেশি রেমিট্যান্স পায়। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া লোকদের অদক্ষতাই কম রেমিট্যান্স আয়ের কারণ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানির প্রবণতা এবং রেমিটেন্স ও অভিবাসন পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পর্যালোচনা করলে অনুমিত হয়, জিডিপির অন্যতম দুই খাতের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ ভালো নয়। বিশ্বজুড়ে গার্মেন্টস শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলো উঠে আসছে, উচ্চমূল্যের পোশাক বাজারে বাংলাদেশের দুর্বল অবস্থার পাশাপাশি নতুন বাজার ধরাতেও ঘাটতি রয়েছে। 

অন্যদিকে একসময় অনেক দেশে বৈধভাবে কর্মসংস্থানের জন্য কর্মীরা গেলেও কয়েক বছর ধরে তার গতি কমে আসছে। একই সঙ্গে রোবট, এআই এবং উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি মানুষের কর্মসংস্থান সংকোচিত করছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে মন্দাভাব, ভূরাজনৈতিক সংকট এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ধীরগতি, অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং বিরূপ জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশে দেশে অভিবাসীদের প্রতি ক্ষোভ ও সহিংসতা বাড়ছে এবং ইউরোপ জুড়ে কট্টর ডানপন্থি সরকারের আবিভার্ব ঘটছে, যাদের নির্বাচনি ইশতেহারে মূল এজেন্ডাই হচ্ছে বিদেশিদের আসা ঠেকানো এবং অবৈধদের জোর করে বিতাড়িত করা।
  
এই অবস্থায় বাংলাদেশকে এলসিডি-পরবর্তী ক্ষতি ও ডাচ ডিজিজের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে, দক্ষতা বাড়িয়ে অভিবাসী পাঠাতে হবে, মুদ্রার রিয়াল এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঘাটতি বাজেট থেকে উদ্বৃত্ত বাজেটে নিয়ে যেতে হবে, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে এবং বৈদেশিক মূলধনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবে এসবের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন হবে দেশে জবাবদিহি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, যা দুর্নীতি ও অপকর্ম করে অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ করে দেশের উন্নয়নকে টেকসই করবে।

লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত