মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন। ডাকনাম বাবলা হলেও চট্টগ্রাম নগরের শীর্ষ এই ক্যাডার “শিবির ক্যাডার সরওয়ার” হিসেবেই বেশী পরিচিত। যদিও ইদানীং নিজেকে বিএনপি সমর্থক পরিচয় দিয়ে শিবির ক্যাডার নামটা মুছতে চাইছে সরোয়ার। কারণ শিবিরের ক্যাডার হিসেবে হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় ১৮টি মামলা। দেশে যে কটি একে ৪৭ রাইফেল উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে একটি একে ৪৭ উদ্ধার হয়েছে এই সরোয়ারের কাছ থেকে৷ সেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ আটক হয়ে কারাগারে আটক ছিলেন দীর্ঘ ১০ বছর।
জামিনে বের হয়ে কিছুদিন চলে যান আত্মগোপনে। ভারত হয়ে কাতারে শীর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের আশ্রয়ে ছিলেন দীর্ঘদিন৷ সেখান থেকে গুরু সাজ্জাদের হয়ে দেশে-বিদেশে চালিয়েছেন ব্যাপক চাঁদাবাজি৷ এক সময় স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গুরু সাজ্জাদের সাথে বিবাদে জড়িয়ে কাতার ছাড়া হয়ে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন সরোয়ার। দেশে ফিরে বিমান বন্দরেই গ্রেফতার হন তিনি৷ পরদিন সরোয়ারের আস্তানা থেকে পুলিশ একে২২ ও একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি-কার্তুজ উদ্ধার করে।
সেই সময় কারাগারে বসেও নগরীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করেছে সরোয়ার বাহিনী৷ সেই সময় সরোয়ারের হয়ে চাঁদাদাবীর একাধিক কল রেকর্ড সে সময় প্রকাশিত হয়৷ সর্বশেষ ২০২৩ সালে একাধিক মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন সরোয়ার৷ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স হিসেবে কাজ করে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের ক্যাডারদের গ্রেফতারে ভূমিকা রেখেছেন সরোয়ার৷ ফলে ১৮ মামলার আসামী অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়া শিবির ক্যাডার সরোয়ারের সাথে এখন স্থানীয় থানা পুলিশের বেশ খাতির জন্মে গেছে৷ অনেক পুলিশ নাকি সরোয়ারের তথ্যে উদ্ধার করা অস্ত্র উদ্ধার ও আসামী আটক করে সুনাম কুড়িয়েছে। তাই সরোয়ারের সাথে এখন কতিপয় পুলিশ সদস্যেরও গলায় গলায় ভাব৷ সেই সাথে সরোয়ারের মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছে সরকার দলীয় একাধিক নেতা৷ স্থানীয় কাউন্সিলর এসরারুক হকের নিজ দলীয় কোন্দলকে পুঁজি করে একটি গ্রুপকে শক্তি জোটাতে কাজ করে সরোয়ার। এসব খুঁটির জোরে এক সময় আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের ঘাতক সরোয়ার এখন আওয়ামী সংগঠনের এক পক্ষের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে৷ আর সেই সুযোগে চান্দগাঁও - বায়েজিদ থানা এলাকায় আবারও স্বরূপে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে সাবেক শিবির ক্যাডার, হালের বিএনপি সমর্থক চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ারের৷ একাধিক কিশোর গ্যাং নিয়ে সরোয়ার বাহিনী যখন তখন প্রকাশ্য অস্ত্রসহ নানান শ্রেণী পেশার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। জমি দখম-উচ্ছেদ, চাঁদাবাজি, অপহরণ, অস্ত্র বিক্রি থেকে মাদক আস্তানার নিয়ন্তার এখন সরোয়ারের হাতে৷
নগরীর কন্ট্রাক কিলার হিসেবে চিহ্নিত সরোয়ার এখন কন্ট্রাকে যে কোন অপরাধ সংঘটিত করছে৷ সম্প্রতি সরোয়ার সমর্থিত কিশোর গ্যাং সংক্রান্ত একটি নিউজ নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে সরোয়ার বাহিনীর কঠিন রোষানলে পড়েছে নগরীর চান্দগাঁও থানার হাজীরপুল রাজনগরের মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক হেলাল। নিউজ শেয়ার করার অপরাধে দফায় দফায় হেলালের ওপর হামলা ও তার প্রতিষ্ঠানে লুটতরাজ চালানোর অভিযোগ উঠেছে সরোয়ারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় সরওয়ারসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জিডি করলে সরোয়ার বাহিনীর অত্যাচারের পরিমাণ বেড়ে যায় । আর সরোয়ারের এসব রোষানলের শিকার হয়েছে হেলালের খামারের মাছ৷ ৩০শে জুন রাতে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে হেলালের ইজারা নেয়া নিজস্ব মাছের প্রজেক্ট থেকে ২ লক্ষাধিক টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রসঙ্গে আতঙ্কিত হেলাল বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, আমি শুধু একটি নিউজ ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম৷ এরপর থেকে আমার ওপর হামলা শুরু হয়৷ প্রতিটি ঘটনা সাথে সাথে ৯৯৯ এ জানিয়েছি৷ এরপর বিষয়গুলো চান্দগাঁও থানাকেও জানিয়েছি। তবে রহস্য জনক কারণে চান্দগাঁও থানা পুলিশ সরোয়ারের বিরুদ্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।" উলটো প্রতিদিন সরোয়ার বাহিনীর হুমকির মধ্যে দিন পার করছেন বলে জানান হেলাল৷
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে সরওয়ার হোসেন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, 'হেলাল একটি অংশীদারি পুকুর জবরদখল করে রেখেছিল। পরে পুকুরের অংশীদাররা একত্রে গিয়ে সেই পুকুরে মাছ ধরেছিল। আমি একজন সাধারণ দর্শকের মতো সেই মাছ ধরা দেখতে গিয়েছিলাম মাত্র। আমি কোনো মাছ ধরিনি। আর তার বাড়িতে গিয়ে হামলার বিষয়টি একেবারে মিথ্যা।" নিজের অতীত কর্মকান্ডের অভিযোগ গুলোর বেশীর ভাগই সাজানো, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে দাবী করে সারোয়ার আরো বলেন, "আপনারা যা দেখেছেন সব সত্যি নয়। আমি পরিস্থিতির শিকার৷ বর্তমানে আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি। কোন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে আমি জড়িত নই, কিছু মহল আমাকে বিপদে ফেলতে বারংবার বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আমাকে বিপদে ফেলার পায়তারা করছে।"
এই ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এসরারুল হক বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, "অভিযোগটি আমার কাছেও এসেছে৷ আমি যতটুকু জেনেছি পুকুরের মালিকদের দুটি পক্ষ আছে৷ আমি তাকে জিগ্যাস করেছিলাম পুকুরের মাছ কি মালিকরা তুলেছিলো কিনা? হেলাল জানিয়েছে, বহিরাগত লোকজন দিয়ে রাতের আঁধারে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাছ তুলে নিয়ে গেছে৷ এভাবে একজনের সাথে চুক্তিবদ্ধ পুকুর থেকে এভাবে জোর পূর্বক মাছ উত্তোলনের বিষয়টি স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি৷ আমি থানা পুলিশকেও বিষয়টি অবিহিত করেছি৷"
এই বিষয়ে জানতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, হেলালের অভিযোগ আমরা তদন্ত করে দেখছি৷ আমরা সেখানে সরোয়ারের সম্পৃক্ততা আছে কিনা সেটি আগে খতিয়ে দেখছি৷ তদন্তে যাদের যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
এদিকে সরোয়ারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর সরোয়ার বাহিনীর একাধিক সদস্য গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে নেবে বলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘোষণা দিতে শুরু করেছে। সরোয়ারের ফেসবুক আইডিকে ট্যাগ ইমান খান আজিজ নামের এক যুবকের এমন স্ট্যাটাস কপি প্রতিবেদক কাছে সংরক্ষিত আছে৷ বিষয়টি চট্টগ্রাম পেট্রোলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবিহিত করা হয়েছে৷