মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৯ বৈশাখ ১৪৩২
মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
নালিতাবাড়ীতে বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪, ৯:০৫ PM
শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলায় গরিবের ‘এসি বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর।

রুচিবোধের পরিবর্তন, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সচ্ছলতার কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘরে থাকতে চায় না। বর্তমান বিত্তশালী প্রজন্ম বাপ-দাদার ঐতিহ্য বহনকারী মাটির ঘর ভেঙে রড-সিমেন্টের বিলাসবহুল বাড়ি বানাচ্ছে। আর যাদের অর্থবিত্ত একটু কম, তারা টিনের চালা আর বেড়া দিয়ে বানাচ্ছে ঝকঝকে ঘরবাড়ি।

অথচ পাকা ভবন কিংবা টিনের ঘরের তুলনায় মাটির ঘর বেশি আরামদায়ক। শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই এসব ঘরে নিশ্চিত থাকে আরামদায়ক বাসস্থান। কারণ প্রচণ্ড গরমেও ঘরের ভেতর থাকে তুলনামূলক ঠান্ডা। আবার তীব্র শীতে মাটির ঘরের ভেতরটা বেশ উষ্ণ থাকে। 

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, আগের দিনে মানুষ মাটির ঘর বানাতে আগ্রহী ছিল বেশি। মাটির সহজলভ্যতা, হাতের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়া ও শ্রমিক খরচ কম হওয়া ছিল এ আগ্রহের প্রধান কারণ। 

শেরপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাটির ঘর ছিলো। এর ব্যতিক্রম ছিলনা ভারত সীমান্তঘেঁষা নালিতাবাড়ী উপজেলাও। একসময় উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতে ছিল মাটির ঘর। প্রায় ৯০ শতাংশ ঘরই ছিল মাটির। কিন্তু এখন মাটির ঘর বিলুপ্তর পথে।
উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, প্রতিটি গ্রামে ছিল মাটির ঘর। বর্তমানে ওইসব গ্রামের হাতে গোনা কিছু বাড়িতে মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে দালান ও সেমি-পাকা টিনের ঘর। উপজেলার যেসব জায়গায় লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পাওয়া যেত সেসব এলাকার লোকজনই বাড়িতে মাটির ঘর তৈরি করতো। 

স্থানীয় প্রবীণ ব‍্যাক্তিরা বলেন, লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে পাঁক করা হতো। পরে সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। প্রতিবার ১-২ ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করে ৫-৬ দিন রোদে শুকানো হতো। পর্যায়ক্রমে ১০-১২ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হতো। পরে দেয়ালের ওপর টিন বা ছন দিয়ে চালা (ছাউনি) দেয়া হতো। 

তারা আরো জানান, একটি ঘর নির্মাণ করতে সময় লাগত ২-৩ মাস। পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরের ভেতরের দেয়ালে ধানের তুষ (কুঁড়া) দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। বাইরের দিকে দেয়া হতো চুনের প্রলেপ বা আলকাতরা। চুনের প্রলেপ দিলে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পেত, তেমনি ঝড়বৃষ্টি থেকেও রক্ষা পেত। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতবছর টিকে থাকতো। মাটির ঘর নির্মাণের কারিগরদের বলা হতো ‘দেওয়ালি’।

মাটির ঘর তৈরির কারীগর নন্নী পুর্বপাড়া গ্রামের দেওয়ালী মুন্তাজ আলী জানান, মাটির ঘর তৈরি করার উপযুক্ত সময় কার্তিক ও অগ্রহায়ন মাস। কারণ এসময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্রতি হাত ১/২-হাজার টাকা চুক্তিতে ঘর নির্মাণ করতেন। মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করেনা, যার জন্য এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সাংবাদিক এম সুরুজ্জামান বলেন, আগে আমাদের উপজেলার প্রতি বাড়িতেই মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে মাটির ঘর নেই বল্লেই চলে। লাল মাটি ও এঁটেল মাটির অভাব, আধুনিকতা,ও কারিগর সংকটে মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করতে চায় না। এছাড়া গ্রামের মানুষ এখন অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে। তাদের রুচি বদল হচ্ছে। আবার প্রবাসীরা দেশে এসে পরিবারের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যের কথা ভেবে মাটির ঘর ভেঙে পাকা ভবনসহ বহুতল ভবন তৈরি করছে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত