কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সরকার পতনের টার্গেট ছিল বিএনপির। সেজন্য বড় আন্দোলন করার প্রস্তুতি নিয়েছিল দলটি। বিএনপির অন্যতম মিত্র জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরকেও মাঠে নামতে উৎসাহিত করেন স্বয়ং লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির সঙ্গে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দলসহ গণঅধিকার পরিষদের নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকেও কাজে লাগায় দলটি। এরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢুকে ও উসকানি দিয়ে এটিকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা করে।
বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিশেষভাবে এই দায়িত্বটি দেয়া হয়। কৌশল হিসেবে বিএনপি ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ্যে আন্দোলনকে সমর্থন দেয়। আন্দোলনের শুরু থেকেই সারাদেশে ছাত্রদলের নেতাকর্মী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত আছে বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা যে সড়কে নেমে আন্দোলন করেছে, সেগুলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মী।
এই আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দিতে ও আন্দোলনকে বেগবান করতে রাজধানীতে বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দেন তারেক রহমান। আর এজন্য গত ১ মাসে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় যুবদলকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলেন তিনি। গত ৭ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে ১৩ জুন এই চার মহানগরীর কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। একইদিনে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটিও বিলুপ্ত করে দলটি।
তবে জানা গেছে, এসব কমিটি বিলুপ্ত ও নতুন করে গঠনের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বিশেষ করে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত নেয়া হয়নি। ঘোষিত নতুন কমিটিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় যুবদলের সদ্য সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব ও সদস্য সচিব করা হয় সাবেক ফুটবলার আমিনুল ইসলামকে। আমিনুল আগেও উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব ছিলেন। আর দক্ষিণ বিএনপির নতুন আহ্বায়ক করা হয় যুবদল দক্ষিণের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনুকে। এতে সদস্য সচিব করা হয় তানভীর আহমেদ রবিনকে।
এর দুদিন পর ৯ জুলাই আব্দুল মোনায়েমকে সভাপতি ও নুরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ১৫ জুন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও দলটির জাতীয় কমিটিতে ৩৯ জন নতুন পদ দেয়া হয়। আর এসবই হয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইচ্ছাতেই। উদ্দেশ্য ছিল নতুনদের দিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করা। তাদের দিয়েই করা হয়েছিল সরকার পতন আন্দোলনের নতুন ছক।
চলতি মাসে ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীরা যখন মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, বসুন্ধরা, উত্তরা, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে নেমে আন্দোলন শুরু করে, তাদের আশপাশে দেখা গেছে বিএনপি ও ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খাবার ও পানি সরবরাহ করতেও দেখা গেছে এসব নেতাকে। মোট কথা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তারা সব ধরনের সমর্থন দিয়েছেন।
সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সরকার পতনের যে পরিকল্পনা বিএনপি ও জামায়াত করেছিল তাতে শুধু ঢাকাতেই আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল বিএনপির দুইশর বেশি নেতা। কোথায় কীভাবে আন্দোলন করতে হবে, সেই নির্দেশনারও দায়িত্বে ছিলেন তারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী ভোরের কাগজকে জানান, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে বিএনপির নেতৃত্বে সারাদেশ থেকে জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের ঢাকায় আনা হয়েছিল। যদিও এদের প্রস্তুত রাখা হয়েছিল আগস্ট মাসের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে সফরে গেলেই তখন তারা একটা বড় ধরনের হামলা করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এর আগেই কোটা আন্দোলনে ঢুকে গিয়ে অস্ত্র নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থাপনায় গেরিলা কায়দায় তারা আক্রমণ করে। বিটিভি ভবনে বারবার আক্রমণ করার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিটিভি দখল করে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সরকার পতনের ঘোষণা দেয়া। আর এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল বিএনপিরই দুই শতাধিক নেতা। এসব নেতার বড় অংশটিকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখনই বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।