যহন একটু সুখের মুখ দেখলাম তহন ওরে নিয়া গেল, কেডা মোর সন্তানকে দেখবে। মোর কপালে সুখ সইল না, মোরে নিয়া ঢাকায় আইয়া কত কষ্ট করছে, যহন একটা চাকুরী পাইল হেই সময় আল্লা অরে নিয়া গেল। মুই এ্যাহন কি নিয়া বাঁচমু, কে মোর ছোট সন্তানকে মানুষ করবে। মুই ওর অফিসের লেইগা রাইতের খাবার রেডি কইরা বইয়া আছি, কই ও তো আহে না।
বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) রাজধানীর উত্তর বাড্ডার শাহজাদপুর বাজারে এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের কালনা গ্রামের নজরুল ইসলামের একমাত্র ছেলে ইমরান খলিফার বিধবা স্ত্রী শান্তা আক্তার (২৬)।
চারুলতা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকুরী করত ইমরান খলিফা। গত রোববার রাতে নিজ গ্রামের বাড়িতে তার লাশ দাফন করা হয়।
নিহত নিরাপত্তা কর্মী ইমরান খলিফার স্ত্রী শান্তা আক্তার (২২) জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে স্বামী ইমরান খলিফা তাকে এবং পুত্র ইয়াজ খলিফাকে (১৫ মাস বয়সী) নিয়ে ঢাকায় আসেন। প্রথমে ফুটপাতে জুতার দোকান দেন, ২-৩ মাস ব্যবসা করার পরে সেখানে টিকতে না পেরে লেবার থেকে শুরু করে যখন যে কাজ পান তা-ই করে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে আসছিলেন।
স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ইমরান খলিফা শাহজাদপুরের খিলবাড়িটেক নামক স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছি্লেন। খুবই কষ্টের মধ্যে চলতো তাদের সংসার। গত ৩ জুলাই গুলশান-২ এ চারুলতা এ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকুরী পান ইমরান খলিফা।
নিহতের স্ত্রী আরও জানান, ঘটনার দিন শুক্রবার (১৯ জুলাই) স্বামী ইমরানের অফিসে ডিউটি ছিল সকাল ৮টা থেকে কিন্তু সে অসুস্থ হওয়ার কারণে আগের দিন রাতে অফিসের বড় স্যারেরে ফোন দিয়ে সময় পরিবর্তন করে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ডিউটি করার অনুমতি নেন।
শুক্রবার দুপুরে অফিস থেকে একজন (স্যারে) ফোন দিয়ে ইমরানকে বলে, যদি পরিস্থিতি ভালো থাকে তাহলে অফিসে এসো, আর যদি পরিস্থিতি খারাপ থাকে তাহলে অফিসে আসার দরকার নাই। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ইমরান নিজের স্ত্রীকে অফিসে নেয়ার জন্য রাতের খাবার প্রস্তুত করতে বলে বাইরের পরিস্থিতি দেখতে ও তার জন্য ওষুধ কিনতে ঘর থেকে বের হলে, বিকেল পৌনে ৬টার দিকে শাহজাদপুর বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
নিহত ইমরানের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে ইমরানের ফোন থেকে কল আসে। ডাক্তার পরিচয়ে একজন বলে- ইমরান খুবই অসুস্থ, ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে। পরে আমি ছেলের বউকে জানালে বউমা হাসপাতালে গিয়ে দেখে অনেক লাশের সঙ্গে পড়ে আছে আমার সন্তানের লাশ।
পরে সে ফোনে আমাকে জানায়, ইমরান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ইমরানের বাম পাজর দিয়ে গুলি ঢুকে ডান পাজর দিয়ে নারিভূড়িসহ বের যায়।
ইমরান খলিফা সম্পর্কে জানতে চাইলে কালনা গ্রামের মোঃ জালাল সরদার (৭০) বলেন, ইমরানকে ছোটবেলা থেকেই চিনি-জানি, সে খুবই নীরিহ প্রকৃতির মানুষ। জোরে একটা কথাও বলতে শুনিনি কিংবা কোনো রাজনীতি করতে দেখিনি। এভাবে ছেলেটি মারা যাবে ভাবতেও পারিনি।