আন্দোলনের চলাকালীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া পুলিশের গুলিতে মারা যাননি বলে ধারণা তার বন্ধু সিরাজুল ইসলাম নিঝুমের। সংঘর্ষের মাঝে হৃদয় যেখানে গুলিবিদ্ধ হন সেখানে তিনিও ছিলেন। সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় নিঝুম বলেছেন, তার ধারণা আন্দোলনকারীদের ভেতর থেকেই কেউ হৃদয়কে গুলি করে হত্যা করেছে!
গত ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হৃদয় তরুয়া। তার আগে ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
হৃদয় চবির ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার। দুই ভাইবোনের মধ্যে হৃদয় ছিলেন ছোট। তার বড় বোন মিতু রানীর বিয়ে হয়েছে। হৃদয়ের বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি। টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন হৃদয়।
এক ভিডিও বার্তায় সেদিনের রোমহর্ষক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন হৃদয়ের বন্ধু ও প্রত্যক্ষদর্শী নিঝুম। নিজের রেকর্ড করা একটি ভিডিওতে নিঝুম জানান, ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হৃদয়সহ তারা বেশ কয়েকজন বন্ধু আন্দোলনে যোগ দিতে বহদ্দারহাট যান। শান্তিপূর্ণভাবেই তারা আন্দোলন করছিলেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ, বিজিবির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘এসময় আন্দোলনকারীদের মধ্যে একাংশের অ্যাপ্রোচ অন্যরকম ছিল। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়লে আমরা সবাই পালাতে ব্যস্ত হলেও তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ভয় দেখা যায়নি। তারা বেশ আগ্রাসী ছিল, টি-শার্ট দিয়ে নিজেদের মুখ ঢেকে রেখেছিল।’
নিঝুমের ভাষায়, পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছুঁড়লে তারা দৌড়ে ১৫০-২০০ মিটার দূরে চলে যান। ঠিক এই সময় বন্ধু হৃদয়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তিনি।
‘এরই মধ্যে ভিড়ের ভেতর থেকে বিকট আওয়াজ হয়। তখন আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি হৃদয় মাটিতে পড়ে রয়েছে এবং হাত তুলে সাহায্যের জন্য ডাকছে। আমি কাছে গিয়ে দেখি, ওর বুকের কাছ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আরও দুটি ছেলের সাহায্যে সেখান থেকে তাকে তুলে রিকশায় করে পার্ক ভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে ঢামেকে রেফার করা হয় এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে হৃদয়।’ বলেন নিঝুম।
নিঝুমের ধারণা হৃদয়ের শরীরে লাগা গুলি পুলিশের ছোঁড়া ছিল না। কারণ পুলিশের কাছ থেকে তাদের যে দূরত্ব ছিল, তার মাঝে কমপক্ষে এক-দেড়শ মানুষ ছিল।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে ক্রস করে হৃদয়ের বুকে গুলি লাগার বিষয়টা স্বাভাবিক না। এটা আন্দোলনকারীদের মাঝ থেকেই কারো কাজ হতে পারে। আশপাশের অনেকেই আহত হলেও তাদের শরীরে রাবার বুলেট লেগেছিল, কিন্তু হৃদয়ের লেগেছিল মেটাল গুলি। পুলিশ সেদিন রাবার গুলি ব্যবহার করছিল।’
‘আমি এখন বলবো, আমাদের আন্দোলন আর আমাদের ভেতর নেই। একটা শ্রেণি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। কারণ, সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল। তারা কোনো ভাঙচুর করেনি। এখানে কোনো স্বার্থান্বেষী তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিচ্ছে।’