আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর পুলিশ সদর দপ্তরসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ২০টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা ও শেরপুর জেলা কারাগারে হামলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ সদরদপ্তর ও ঢাকার ১৩টি থানায় এবং ঢাকার বাইরে ৭টি থানায় হামলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আন্দোলনকারীরা পুলিশ সদর দপ্তরের প্রধান ফটক ভেঙে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এ সময় অনেক পুলিশ কর্মকর্তা সদরদপ্তরের কার্যালয়ে আটকা পড়েন। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সদরদপ্তরের পূর্ব দিকের দেয়াল টপকে নগর ভবনের ভেতরে যান। এরপর সেখান থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান তারা।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, গতকাল রাতে রাজধানীর মিরপুর ও মোহাম্মদপুর থানায় আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পল্লবী থানায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলেছে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটারা থানা ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী ও রূপনগর থানায় হামলার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গতকাল বিকেলের দিকে মিরপুর মডেল থানা ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা। থানা থেকে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। রাতে মোহাম্মদপুর থানায় আগুন দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটারা থানা ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বাড্ডা থানা ঘিরে রাখেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেখানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। বাড্ডা থানায় আটকা পড়েছেন পুলিশের অন্তত ৭০ সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এক পর্যায়ে বিকেল চারটার দিকে চারদিক থেকে বাড্ডা থানা ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় মসজিদের মাইক থেকে পুলিশ সদস্যদের আত্মসমর্পণ করার অনুরোধ করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। পুলিশ আত্মসমর্পণ করে গুলি করা বন্ধ করলে ছাত্র-জনতা রাস্তা থেকে সরে যাবেন। এরপরও গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে সেনাবাহিনী বাড্ডা থানায় গিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে উদ্ধার না করে তাঁরা ফিরে যান।
জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভকারীদের হামলার মুখে পল্টন থানার পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যান। পরে আন্দোলনকারীরা থানায় লুটপাট করে বলে পুলিশ জানায়। এ ছাড়া রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিক্ষোভকারীরা মিরপুরের শাহ আলী থানায় ঢুকে আগুন দেন। সেখানে তারা অস্ত্র লুটপাট করেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। খিলগাঁও থানায় সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা হামলা চালান। দুর্বৃত্তরা থানায় লুটপাট চালায়। বিকেল পাঁচটার দিকে বিক্ষোভকারীরা আদাবর থানায় ভাঙচুর চালান। এ সময় পুলিশ অন্য একটি ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
এদিকে ঢাকার বাইরে কুমিল্লার দাউদকান্দি মডেল থানা ও তিতাস থানা, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানা, বগুড়া সদর থানা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসেও হামলা হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে হামলা চালায়। হামলাকারীরা জেলে গেট ও ভেতরের তালা ভেঙে অধিকাংশ আসামি ও কয়েদি বের করে নিয়ে যান। পাশাপাশি জিনিসপত্র লুটপাট করেন। তবে কতজন আসামি ও কয়েদি বের করে নিয়ে গেছেন, তা জানা যায়নি। এ ছাড়া ওই দিন বিকেলে শেরপুর জেলা কারাগারে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছেন। কারাগারে থাকা সব বন্দী পালিয়ে গেছেন। কারাগারে থাকা অস্ত্র ও সামগ্রী লুটপাট করা হয়।