বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০ বৈশাখ ১৪৩২
বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫
যেসব কারণে শেখ হাসিনার পতন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪, ৩:১৪ PM আপডেট: ০৬.০৮.২০২৪ ৫:০৫ PM
প্রায় সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হলো ‘একনায়ক’ হিসেবে। ছাত্র ও গণ–আন্দোলনের মুখে তাঁর শাসনের পতনের পেছনে একগুঁয়েমি, অহংকার ও অতি আত্মবিশ্বাস—এসব বিষয়কে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একক কর্তৃত্বের শাসনে শেখ হাসিনার সরকার সম্পূর্ণভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পশ্চিমা বিশ্বকে শত্রু বানিয়ে শেষ পর্যায়ে ভূরাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অবশেষে গণ–আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়। গতকাল সোমবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরের আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সরকারি একাধিক সূত্র বলছে, পদত্যাগের আগে গতকাল দুপুরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ ও সময় তাঁকে দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনা দুপুরের আগে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগ করেন। 

এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে বঙ্গভবন থেকেই শেখ হাসিনা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন। তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পরও শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থানের কথা বলা হচ্ছিল। এমনকি গত রোববার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে মাঠে নামিয়ে শক্তি প্রদর্শন করে আন্দোলন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সারা দেশে সংঘাত–সংঘর্ষে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপরও শক্ত হাতে দমনের কথা বলা হচ্ছিল।

রোববার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণভবনে বসে শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মন্ত্রী ও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রোববারও সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এরপরও পরিস্থিতি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে তাঁরা ধারণা করেছিলেন। কিন্তু চাপ আরও বাড়তে থাকে। গতকাল সকালেই তাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁদের সময় শেষ হয়ে গেছে। এরপর শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, সেই পর্যায়ে গত ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি ‘রাজাকার’ শব্দও ব্যবহার করেছিলেন। এতে তাঁর একগুঁয়েমি ও অহংকারের বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছিল। এরপর শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন, আন্দোলন আরও জোড়ালো হয়। সেই আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করায় গত ১৭ জুলাই থেকে কয়েক দিনে সারা দেশে দুই শ–এর বেশি প্রাণহানি ঘটে। এরপর সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে নামেন। বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনায় শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুতেই রক্ষা হলো না।

দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগ একা হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ শাসনে সবাইকে খেপিয়ে তুলেছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আর রাজনৈতিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়। এর ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকেও একা হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে ভূরাজনীতিতে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরপর তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করেও টিকে থাকে। এই আলোচনা চলছিল অনেক দিন ধরে। সরকার চীনের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক রেখে চলছিল। গত জুলাই মাসেই ৭ তারিখ থেকে দুই দিন চীন সফর করেছিলেন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ সেই সফরে অবশ্য ভালো ফল হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল অনেক দিন ধরে। বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনাসহ তাঁর নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়ে যায়।

তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ দেশের মানুষ ও শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলে। এতে একেবারে একা হয়ে পড়ে তারা।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত