কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে কতজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
অন্যদিকে পুলিশের অনুপস্থিতিতে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে।
এখনো অনেক পুলিশ সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কান্না থামছে না। এ অবস্থায় পুলিশ মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম বলেন, চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কাজ করছে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলে গত সোমবার সারা দেশে পুলিশের ওপর ব্যাপক হামলা হয়।ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা। হত্যা করা হয় অনেক পুলিশ সদস্যকে। মূলত এর পর থেকে পুলিশ সদস্যরা উধাও হয়ে যান।
পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পালিয়ে রয়েছেন জানিয়ে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি।
চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গত শুক্রবার রাজারবাগে ভুক্তভোগী মাঠ পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে নতুন আইজিপির বৈঠকের কথা ছিল দুপুরে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে সেটা স্বাভাবিক করতে সময় লেগে যায় অনেকটা। একপর্যায়ে অনিয়ম দূর করার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের হত্যার বিচার চেয়ে ব্যাপক স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ সহকর্মীরা।
সেখানে উপস্থিত এক পুলিশ সদস্য বলেন, বিক্ষোভের মুখেই নতুন আইজিপি ময়নুল ইসলাম একপর্যায়ে রাজারবাগ ছেড়ে চলে যান। আইজিপির উপস্থিতিতেই স্লোগান ওঠে, ‘আমার ভাই মরল কেন জবাব চাই’,‘পুলিশ হবে জনতার’।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের সামনেই ক্ষোভ দেখিয়ে সদস্যরা জানতে চান, কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় রক্তপাত ও হতাহতের জন্য দায় কার। অধস্তন কর্মকর্তাদের কিভাবে ঊর্ধ্বতনরা ব্যবহার করেন! এসবের পাশাপাশি বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নানা অসংগতি তুলে ধরেন তাঁরা। পুলিশ ‘হত্যা’র বিচার দাবি করে একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা চাই ব্যবস্থা, ব্যবস্থা, ব্যবস্থা।’
তাঁদের বক্তব্যের মধ্যেই মঞ্চের পেছনে বিশাল স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল বিভিন্ন জায়গায় নিহত পুলিশের মরদেহ ও রক্তাক্ত ছবি। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের কাউকে কেন সরকারের উপদেষ্টা করা হলো না প্রশ্ন তুলে একজন বলেন,‘অনিয়মের বিচার চাই।’এ সময় আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও র্যাবের ডিজি এবং তাঁদের কয়েকজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছাড়া আর কারো পরনেই ইউনিফর্ম ছিল না। এটি নিয়েও কথা বলেন পুলিশ সদস্যরা।
একজন নারী পুলিশ সদস্য মঞ্চে উঠে বলেন, ‘আজ এখানে আইজিপি স্যারের সঙ্গে মিটিং করতে আমার যথাযথ ইউনিফর্ম ও র্যাংক ব্যাজ পরে আসার কথা ছিল। কিন্তু আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখন পুলিশের ইউনিফর্ম গায়ে দিতে পারছি না। এই অবস্থার উত্তরণ চাই আমরা।’
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের জন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দায়ী করেন পুলিশের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
গত শুক্রবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে নতুন আইজিপি ময়নুল ইসলামের উপস্থিতিতে বৈঠকে জড়ো হওয়া পুলিশ সদস্যরা নানা অসংগতি তুলে ধরে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে শেখ হাসিনার পতন ঘিরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বহু সদস্যকে হত্যার পর স্থবির হয়ে পড়া পুলিশকে সচল করার চেষ্টায় ঢাকার রাজারবাগে বৈঠকে দেখা গেল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
থানায় থানায় হামলা চালিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপটে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আশ্রয় নিয়ে আছেন বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য। পুলিশ সদস্যদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে শুধুই লাশ আর পোড়া থানার ছবি আদান-প্রদান করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারাই। এ সময়ে পুলিশের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমনের উদ্যোগ হিসেবে সেখানে আসার কথা ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।