দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম, গণহত্যা ও রক্তপাতের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র-জনতার বিজয়কে নানাভাবে কালিমা লিপ্ত করার জন্য চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব থেকে বিতাড়িত একটি চক্র প্রেস ক্লাবের নামে মিথ্যাচার করছেন বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক ঐক্য’র সমন্বয়ক সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শিল্পী। আজ রোববার (১১ আগস্ট)বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এই দাবি করেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিক নামধারী পলিটিক্যাল একটিভিষ্টদের একটি বক্তব্যের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। সংবাদপত্রে ছাপানো বক্তব্যগুলো শুধুই মিথ্যাচার।
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
১। সাধারণত প্রেসক্লাব হচ্ছে সাংবাদিকদের দ্বিতীয় আবাসস্থল এবং দেশবাসীর কাছে ‘মিনি পার্লামেন্ট’ হিসেবে খ্যাত। কিন্তু এই সাংবাদিক নামধারী গোষ্ঠিটি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবকে দলীয় কাযালয়, ফ্যাসিবাদ চর্চ্চার আখড়া এবং ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলসমূহের কর্মসূচিতে হামলার কেন্দ্রে পরিনত করেছিলো।
২। বিতাড়িত ফ্যাসিবাদের দোসর এই গোষ্ঠটি গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ছাত্র-জনতার উপর চলিত গণহত্যার উস্কানী দিয়েছে। বিগত সময়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকা অফিস লুটপাট করার পরিকল্পনা এই প্রেসক্লাবেই করা হয়েছিলো। সাংবাদিক নামধারীদের প্ররোচনা ও নেতৃত্বেই উল্লেখিত মিডিয়া হাউসগুলোতে গিয়ে সন্তাসীরা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায় ও লুটপাট করে।
৩। প্রেসক্লাব পরিচালনা সংক্রান্ত মহামান্য হাইকোর্টের ৩টি মামলা বিচারাধীন আছে। মামলা সমূহ হচ্ছে, রিট মামলা নং ১০৬৪/২০১৪, ১৬১০৯/২০২২ এবং সিভিল মামলা নং ৫১৬৮/২০১২। মহামান্য হাইকোর্ট এবং জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের আদেশ অমান্য করে বেআইনীভাবে কমিটি গঠন করে কথিত কমিটি প্রেসক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে যা স্বেচ্ছাসেবী সমাজসেবা সংস্থা সমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ এবং তথ্যসংক্রান্ত বিধিমালা ১৯৬২ এর সুস্পষ্ট লংঘন। যেহেতু উক্ত আইন এবং মহামান্য হাইকোর্ট ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয় প্রেসক্লাব পরিচালনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, সেহেতু এগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রেসক্লাব পরিচালনা সম্পূর্ণ বেআইনী ও এখতিয়ার বহির্ভূত।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ৩০/১০/১৯৯০ সালের (স্মারক নং- সসাআদছ/২১৮২) জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের নিবন্ধন গ্রহণ করে যার নিবন্ধন নং- চট্ট ১৫৮৩/১৯৯০।
৪। প্রেসক্লাবের বর্তমান সদস্য তালিকায় অর্ধেকেরও বেশি ভূয়া সাংবাদিক এবং দলীয় কর্মী। যারা মূলত চাঁদাবাজির মাধ্যমে জীবন- জীবিকা নির্বাহ করে থাকে । এদের সার্বক্ষনিক কাজ ছিলো ফ্যাসিস্ট সরকারের নানা অপকর্মের তাবেদারি ও ভিন্নমত দমনের পাঁয়তারা করা।
৫। চট্টগ্রামে কর্মরত দুই- তৃতীয়াংশ সাংবাদিকের প্রবেশধিকার দেয়া হয়না। শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদের দোসর এবং তাদের কোটরীবদ্ধ ব্যাক্তিরা এখানে অর্ন্তভূক্ত। অথচ চোরাকারবারী, মাদক ব্যবসায়ী, সমাজ বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিদের কাছে ‘আজীবন সদস্য’ পদের বিনিময়ে মোটা অর্থ আদায় করতো।
৬। এদের মূল কাজই ছিলো চাঁদাবাজি এবং ফ্যাসিবাদী সরকাররে উচ্ছৃষ্ট ভোগ করা। বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের অর্থে এরা পিকনিকের নামে ফাইভ স্টার হোটলে গিয়ে আনন্দ-র্ফূতি করতো। প্রেসক্লাবকে তারা মদ-জুয়া এবং অবৈধ হাউজি খেলার আখড়া বানিয়েছে।
৭। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বর্তমান জায়গা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান। এছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সাংবাবাদিদের জন্য মোটা অংকের অর্থ অনুদান দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকার দু’দফায় নগরীর শেরশাহ কলোনী এবং কল্পলোক আবাসিক এলাকায় কয়েক’শ সাংবাদিকের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসররা এই ইতিহাস প্রেসক্লাবের ইতিহাস থেকে একেবারেই মুছে দিয়েছে।
৮। গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদ অভ্যুত্থানের দিন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রেসক্লাব থেকে বিতাড়িত করে প্রকৃত সাংবাদকিদের জন্য তা উম্মুক্ত করে দিয়েছে। বৈষম্যের শিকার সাংবাদকিরা জনতার রোষানল থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে রক্ষা করেছে। বিতাড়িত ফ্যাসিবাদের দোসররা ছাত্র-জনতার বিজয় এবং বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নানা ধরনের গুজব, অপপ্রচার এবং মিথ্যা সংবাদ ছড়াচ্ছে।
৯। ৫ আগষ্টের পর জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ দেশের সবগুলো প্রেসক্লাবকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও অপশক্তি মুক্ত করা হয়ছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তারই ধারাবাহিকতার অংশ। প্রকৃত ও পেশাদার সাংবাদকিরা তা আনন্দচিত্তে মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু চট্টগ্রামের বিতাড়িত লুঠের সাংবাদিক গোষ্ঠিটি নানাভাবে সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
১০। বিতাড়িত গোষ্ঠিটি ফ্যাসিবাদী সরকারের সহায়তায় লুঠপাট করা অর্থ নিয়ে আবার প্রেসক্লাব কূক্ষিগত করতে মাঠে নেমেছে। তারা একদিকে বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে পার্টির নাম করে জড়ো হয়ে সদ্যগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকাররে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। লুটপাটের টাকায় তারা ছাত্র- জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের জাঁকজমকর্পূণ সংবর্ধনার প্রস্তাব ও করেছিলো। একই সাথে পটপরিবর্তনের পর মাঠে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের কাছে র্ধনা দিয়ে নানা লোভনীয় প্রস্তাব ও করছে।