বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১ বৈশাখ ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫
আলোচিত মিতু হত্যায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের জামিন আবেদন
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪, ৮:৪৭ PM
আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে দ্রুত জামিন করাতে আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে নানান তৎপরতা শুরু হয়েছে৷ গত বৃহস্প‌তিবার (৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম‌ তৃতীয় অতি‌রিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের জন্য বিশেষ আবেদন জানালে বিচারক মো. জসিম উদ্দিন ধার্য দিনে আবেদন করতে বলেছেন।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী ক‌ফিল উদ্দিন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ‘আমরা বাবুল আক্তারের জামিনের জন্য বিশেষ আবেদন করে‌ছিলাম। যেহেতু সেদিন (৮ আগস্ট) তার মামলার ধার্য দিন ছিল না, তাই আদালত পরবর্তী তারিখে জামিন আবেদন করতে বলেছেন। আমরা ১৩ আগস্ট আবার জামিন আবেদন করব।’

দেশ জুড়ে আলোচিত সাবেক পুলিশ কর্মমর্তা বাবুল আক্তার সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কয়েক দফায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন৷ বিশেষ করে জঙ্গি দমনে বাবুল আক্তারের সাহসী ভূমিকা তাকে দেশ জুড়ে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়৷ পেয়েছেন একাধিক রাষ্ট্রীয় পদক। এক সময় সরকারের আস্থাভাজন ও পুলিশ বাহিনীর আইডল বিবেচিত হতেন বাবুল আক্তার। তিনি এতোটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, হাটহাজারী এবং কক্সবাজার থেকে বাবুল আক্তারের বদলি ঠেকাতে রাজপথে নেমে এসেছিল জনতা।

এমন একজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাকান্ডের ঘটনায় দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্মদেয়৷ দেশের একাধিক শীর্ষ জঙ্গি গ্রেফতার ও জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে জঙ্গিরা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়৷ সেই সময় সরকারের প্রেসক্রিপশনে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে৷ তবে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিজের স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় নিজেই গ্রেফতার হন বাবুল আক্তার। আবুল আক্তারকে আসামী করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  

তবে মিতু হত্যা মামলার সাড়ে ৫ বছর পর বাবুল আক্তারকে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে আসামী করা হয় বলে জানান তার আইনজীবী ক‌ফিল উদ্দিন। তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, "সাড়ে ৫ বছর ধরে মিতু হত্যা মামলার তদন্তে অনেক বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তারা তদন্ত করেছিলেন তখন কেউ কিছু খুঁজে বের করতে পারেনি। কিন্তু হঠাৎ করে একজন ইন্সপেক্টর এসে সব বের করে ফেললো৷ হত্যা মামলার বাদিকেই তিনি আসামী বানিয়ে ফেললেন৷" 

২ মে ২০২১ থেকে ১৩ মে ২০২১ সালের এই কয়েক দিনের নানান ঘটনা পঞ্জির মধ্যদিয়ে বাবুল আক্তারকে আটক করা থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়েছিল বলে জানান এডভোকেট কফিল উদ্দিন৷ এছাড়া পিবিআই আদালতের অসত্য তথ্য দেখিয়ে মামলার তদন্ত করেছিল৷ এই ধরণের একাধিক গ্রাউন্ডে বাবুল আক্তারের জামিন চাওয়া হয়ে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ 
 
এদিকে বাবুল আক্তারের মুক্তির দাবী ও চাকুরীতে পর্নবহালের চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে৷ নির্দ্দিষ্ট কোন সংগঠন বা পরিচিতির উল্লেখ না করে বিভিন্ন বয়সি কয়েকজন নারী পুরুষ বাবুল আক্তারের মুক্তির দাবি জানান৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চট্টগ্রামের একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্প্রতিক আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত জামিন হতে আমরা দেখেছি৷ কারাগারে থাকাটা নিরাপদ মনে করে এতোদিন জামিনের আবেদন করেনি এমন আলোচিত অনেককে জামিনে মুক্ত হতেও দেখা যাচ্ছে৷ যতটুকু জানি বাবুল আক্তার আলোচিত একটি হত্যা মামলার আসামী৷ রাষ্ট্রের দায়ের করা কোন মামলা সেটি নয়৷ নিহতের বাবা এই মামলার বাদি। সবারই জামিন চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার আছে  এখন কে জামিন পাবে, কে পাবেনা সেটি একান্ত আদালতের এখতিয়ার৷ 

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পর ২০১৬ সালের ২৪ জুন ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ বাবুল আক্তারকে ১৫ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও পরবর্তিতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মিতু হত্যাকান্ডের দুই মাস পরে পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয় বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এরপর বাবুল আক্তার রাজধানীর আদ দ্বীন মেডিকেল হাসপাতালে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি চীন থেকে পানি পরিশোধনকারী যন্ত্র এনে বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। 

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলো— মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা, এহতেশামুল হক প্রকাশ, হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া।

আসামিদের মধ্যে শুধু মুসা পলাতক আছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত