হাসিনা সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই বলে জানিয়েছে দেশটি। এমনকি বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপের অভিযোগ ‘কেবলই মিথ্যা’বলেও আখ্যায়িত করেছে দেশটি। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সোমবার হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়ের বলেন, “এটা স্রেফ ভুয়া।”
রয়টার্স লিখেছে, বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেছিলেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে মুখপাত্র বলেন, “আমাদের আদৌ কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব ঘটনায় জড়িত বলে যদি কোনো প্রতিবেদনে দাবি করা হয় বা কোনো গুঞ্জন যদি থাকে, সেসব স্রেফ ভুয়া।’
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রায় তিনশ মানুষের প্রাণ যায়।
৫ অগাস্ট আন্দোলনারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর আসে। সেদিন বিকালে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের বলেন, পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথমে হেলিকপ্টর ও পরে সামরিক বিমানে চড়ে আগরতলা হয়ে সেদিন রাতেই দিল্লি পৌঁছান বাংলাদেশের টানা ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী। এখনও তিনি সেখানেই আছেন।
রোববার ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেছেন, মানুষের মৃত্যু এবং সম্পদহানি ঠেকাতেই তিনি সরে গেছেন।
শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ঠিকই ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
এ ধরনের বিদেশি শক্তির দ্বারা ‘ব্যবহৃত’ না হওয়ার জন্য নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও সতর্ক করা হয়েছে ওই বার্তায়।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অবশ্য দাবি করেছেন, তার মাকে উদ্ধৃত করে যে বিবৃতির খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা বানোয়াট।
মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে জয় লেখেন, “সম্প্রতি একটি পত্রিকায় আমার মাকে উদ্ধৃত করে তার পদত্যাগের যে বিবৃতি ছাপা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা পরে কোনো বিবৃতি দেননি।”
হোয়াইট হাউজের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নে মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়ের বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে দেশের জনগণেরেই তা নির্ধারণ করা উচিত এবং আমাদের অবস্থান ঠিক এটাই।”
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার, যাদের ওপর পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভার থাকবে। যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের সরকারের পতন ঘটেছে, তাদের দুজন প্রতিনিধিও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে রয়েছেন।
তবে এ সরকারের কোনো মেয়াদ বা নির্বাচনের সম্ভাব্য কোনো সময়সীমা এ সরকার এখনও বলেনি। আন্দোলনকারীরা বলছে, তারা আগে এই রাষ্ট্রকাঠামো ও সংবিধানের সংস্কার চায়, তারপর নির্বাচন।