কলকাতার আর জি কর সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেই নারী চিকিৎসককে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই নারী চিকিৎসকের পরিবার কলকাতা হাইকোর্টকে এ সংক্রান্ত ময়নাতদন্ত রিপোর্টসহ একটি পিটিশন জমা দিয়েছেন। এরই মধ্যে মামলাটির তদন্তভার সিবিআই’র (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, পিটিশনে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ওই নারী চিকিৎসকের শরীরে একাধিক পুরুষের বীর্য পাওয়া গেছে। তার শরীরে যৌন নির্যাতনের স্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার প্রমাণ রয়েছে।
ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, নারী চিকিৎসকের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থেকে ধারণা করা হয় তার ওপর বর্বর এবং হিংসাত্মক আক্রমণ চালিয়েছে নির্যাতনকারীরা।
ময়নাতদন্তে নিহতের মাথার কয়েকটি অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দুই কানেও জখমের চিহ্ন ছিল। যা থেকে ভুক্তভোগী ও ধর্ষকের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এছাড়া ওই নারীর ঠোঁটে এবং ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
পিটিশনে মেয়েটির পরিবার জানায়, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ভুক্তভোগীর শরীরে প্রায় ১৫০ মিলিগ্রাম বীর্য পাওয়া গেছে; যা থেকে ধর্ষণের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
মামলাটি সিবিআই’র হাতে ন্যস্ত করার আগে, রাজ্য পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে একজন নাগরিক স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেফতার করে; যার হাসপাতালে অবাধ যাতায়াত ছিল।
পরিবারের অভিযোগ, তাদের মেয়েকে গণধর্ষণের পর হত্যা করার একাধিক প্রমাণ থাকলেও এখন পর্যন্ত একজন ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকি আর জি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ এবং যারা ভুক্তভোগীকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে এখনও জবাবদিহিতায় আনা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রেইনি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় জরুরি বিভাগ ভবনের চারতলার একটি সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিতে যাওয়ার পর তিনি ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কর্মবিরতিতে যান চিকিৎসকরা।
এদিকে রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) হাইকোর্টে বলেছেন যে, বিচারবিভাগীয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল।
সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই নারী চিকিৎসক উপস্তিত ছিলেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ভুক্তোভোগীর মায়ের স্বাক্ষরও ছিল বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন।
ময়নাতদন্ত একজন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পরিচালিত হয়েছিল এবং তা নিশ্চিত করার জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিওগ্রাফ করা হয়েছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের একটি অনুলিপি পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।