ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ের প্রেক্ষাপটে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে ছাত্রজনতার আরও রোষের কারণ হয়েছিলেন। আন্দোলন চলাকালে সারদেশে পুলিশের নির্যাতন ও সহিংসতায় প্রাণ হারায় অনেক শিক্ষার্থী, যা জনতাকে আন্দোলনে আরও একত্রিত করে তোলে।
ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময় তার বেশ কিছু বক্তব্য সেসময় তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। এই মন্তব্যগুলো শুধু আন্দোলনকারীদের ক্ষোভই বাড়ায়নি, বরং আরাফাতের ক্ষমতাসীন দলের প্রতি জনতার অবিশ্বাস আরও তীব্র করেছে।
আরাফাত বলেছিলেন, আন্দোলনকারীদের মাদক দেওয়া হয়েছে। যেন তারা পুলিশের সামনে এসে বুক পেতে দেয়।
২২ জুলাই, যখন আন্দোলনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়, তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আবু সাঈদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আরাফাত বলেন, “প্রমাণও পাওয়া গেছে যে, আন্দোলনকারীদের অনেকে ড্রাগড ছিল। তাদের ড্রাগ করা হয়েছে, যেন তারা বুক পেতে পুলিশের সামনে চলে আসতে পারে।”
সাবেক তথ্যমন্ত্রী মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি বেগম রোকেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আবু সাঈদ পুলিশের প্রতি বুক পেতে দাড়িয়ে ছিলেন। পরে পুলিশ তাকে গুলি করলে তিনি নিহত হন।
মোহাম্মদ আরাফাতের এই বক্তব্য প্রচারের পর জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও সেসময় প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই ভিডিওটি দেখতে পারেন এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপগুলোতে নিহতদের সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করায় নিন্দা করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলির সামনে দুই হাত প্রসারিত করে নিজের বুক পেতে দেন আবু সাঈদ। তার মৃত্যুর পর তিনি ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতীকে পরিণত হন। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে জনতা যোগ দিয়ে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এছাড়াও গত ২১ জুলাই, যখন আন্দোলন চরমে পৌঁছেছিল, তখন একটি প্রচার ছড়িয়ে পড়ে যে, রাবার বুলেটের যোগান শেষ হয়ে গেছে। সাংবাদিকরা যখন এ বিষয়ে আরাফাতের কাছে জানতে চান, তখন তিনি রাগান্বিতভাবে বলেন, “সরকার যদি প্রতি সেকেন্ডে রাবার বুলেট ছোড়ে, তারপরও পাঁচ বছর লাগবে শেষ হতে; এতো স্টোরেজে আছে।”