দেশে চলমান বন্যার প্রভাব পড়েছে পাহাড়ি অঞ্চলেও। বন্যার কারণে রাঙ্গামাটি জেলায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু বরকল, বিলাইছড়ি, নানিয়াচর ও জুরাইছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ফসলী জমি পানিতে ডুবে আছে।
জেলার কয়েকটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে ২ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৭ হাজার ৮১৯ টন ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৩৫।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অঞ্চলের তথ্যমতে, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ৯০ হাজার ৮০১ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে ১৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মধ্যে ৩ হাজার ৮৪৮ হেক্টর সম্পূর্ণ এবং ৫ হাজার ৪৮৩ হেক্টর কৃষিজমির আংশিক। আংশিক ক্ষতি সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তরের ফলে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০৪ হেক্টর।
রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, বন্যার পানিতে রাঙ্গামাটিতে এবার ২ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৭ হাজার ৮১৯ টন ফসল নষ্ট হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা দাঁঁড়িয়েছে প্রায় ১১হাজারের মতো। তিনি জানান, রাঙ্গামাটি জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায়। এবারের বন্যায় জেলা-উপজেলায় মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মতো। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন হিসেবে মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে কম-বেশি হতে পারে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, ‘রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার কয়েকটি উপজেলায় কৃষি খাতে ১১১ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষকদের ধানসহ অন্যান্য বীজ দেয়া হবে। এরই মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে দুই টন ধানের বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আসন্ন রবি মৌসুমে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার কৃষকদের শীতকালীন সবজি ও বোরো ধানের বীজ দেয়া হবে।
বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে আমনের বীজ রোপণের সুযোগ না থাকায় কেবল খাগড়াছড়িতে দুই টন বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’এজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চাষিদের পর্যাপ্ত সহায়তা করা হবে।
কৃষি জমির পাশাপাশি এসব এলাকার রাস্তা-ঘাটেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি নামতে শুরু করায় বিভিন্ন উপজেলায় ফসলী জমিসহ রাস্তা-ঘাটের সর্বত্র ক্ষতের চিত্র এখন দৃশ্যমান।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, পানি কমতে শুরু করলেও জেলায় এখনো পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ১০টি উপজেলায় ৯২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হলেও ৪৭ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। বাকিগুলো পানি কমলে বিতরণ করা হবে জানানো হয়।