লোডশেডিং তীব্র আকার ধারন করেছে হঠাৎ করেই। কেন্দুয়া পৌরসদরসহ ১৩টি ইউনিয়নের মানুষ এনিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছে। গরম আর লোডশেডিং- এদুইয়ে মিলিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন।
তুলনামূলক পৌরসদরে কিছুটা কম হলেও গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রতি ঘন্টায় হরদম বিদ্যুত যায় আবার আসে। কোথাওবা টানা কয়েক ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কতৃপক্ষ বলছে, চাহিদা বৃদ্ধি আর উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরী হয়েছে।
আগষ্টে লোডশেডিং কম থাকলেও এখন তা তীব্র আকার নিয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। পৌরসদরের বাসা-বাড়ী, বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও বেশ ভোগান্তি হচ্ছে লোডশেডিংয়ে।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে কেন্দুয়া উপজেলায় বেশ কয়েক দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে.পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা গেছে।।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কেন্দুয়া আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক আছে। এছাড়াও দিন দিন গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে।
এঅবস্থায় উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদার পরিমাণ প্রায় ২০-২৪ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৮-১০ মেগাওয়াট। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কয়েকজন গ্রাহক জানান, উপজেলা সদরসহ গ্রামাঞ্চলে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। প্রতিদিন দিন সন্ধ্যায় (পিক আওয়ার) বিদ্যুৎ চলে যায়। এ ছাড়া সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ১০-১২ বার লোডশেডিং হয়। একবার বিদ্যুৎ গেলে আধা ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পর আসে। অব্যাহত লোডশেডিং এবং ঘনঘন বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিদ্যুৎনির্ভর সব ধরনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ারও ব্যাঘাত ঘটছে।
উপজেলার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা জিয়াউল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নামাজের সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা ঠিকমতো নামাজও পড়তে পারি না। প্রায় সময় বিদ্যুৎ থাকে না। কয়েকঘন্টা পরপরই বিদ্যুৎ আসে, কিছুুক্ষণ থাকার পর আবার চলে যায়।’ লোড শেডিংয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রয়োজনের সময় বিদ্যুৎ না থাকায় লেখাপড়ার করতে সমস্যা হয়। এতে তাদের লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
চিরাং ইউনিয়নের ভাই ভাই পোল্ট্রি ফার্মের মালিক নাজমুল হক জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে আমার ফার্মের মুরগিগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোন সময় গরমের কারণে মারা যেতে পারে। তাই জেনারেটর কেনার জন্য বাজারে এসেছি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাহিতপুর অভিযোগ কেন্দ্রের সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গত দুই দিন মাত্র ৮ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। এর আগের দিন শনিবার সরবরাহ মিলেছে মাত্র ৬ মেগাওয়াট। এঅবস্থায় একটি লাইন বন্ধ রেখে অপর লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং বেড়ে গেছে।
কেন্দুয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো.মজিবুর রহমান জানান, ‘স্বাভবিক সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল দিনে ১৬ মেগাওয়াট ও রাতে ২২ মেগাওয়াট। ‘তীব্র গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দিনে ২০ মেগাওয়াট ও রাতে ২৪ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। আবার রাত ১২ টার পর বিদ্যুৎ পাচ্ছি মাত্র ৮-১০ মেগাওয়াট।
আমরা চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। যার ফলে গ্রাহকদেরকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারছি না।বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লে শিগগিরই লোডশেডিংয়ের সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করছি।