ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় পর প্রকাশ্যে এসেছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র শিবির’। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় এ নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে। আবু সাদিক কায়েম গত শনিবার নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
এমন একটি সময়ে সাদিক কায়েম নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করলেন যখন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার আলোচনা চলছে। এমনকী স্থায়ীভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও প্রস্তাব রয়েছে।
এর মধ্যেই ছাত্রশিবির নেতার পরিচয় সামনে এনে সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে নানান আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যাচ্ছে।
ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে আসা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যেই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় অন্য রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলো।
অন্যদিকে, শনিবার নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাদিক কায়েমকে চিনতেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে।
আন্দোলন চলাকালে সারজিস-হাসনাত সহ অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে সাদিক কায়েম
ফলে তার নেতৃত্ব মেনে যারা মাঠে আন্দোলন করেছেন, তাদের অনেকেই এখন “প্রতারিত” বোধ করছেন। আবার সাদেক কায়েমের পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার পর বেশ “অস্বস্তিতে” পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতারা।
'আমরা আগে থেকেই ছিলাম' জানিয়ে সাদিক কায়েম বলছেন, পরিস্থিতির কারণেই এতদিন তিনি নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
যা বলছেন অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করা হলেও তারা যে রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন, সেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি- উভয় রাজনৈতিক দলকে একসাথে আন্দোলন করতে দেখা গেছে।
এমনকী ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হয়ে মন্ত্রীও হতে দেখা গিয়েছিল জামায়াত নেতাদের। তখনও ক্যাম্পাসটিতে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ছাত্রদল নেতারা। কিন্তু এখন কি তাদের অবস্থান পাল্টেছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শিপন বলেন, “ক্যাম্পাসের সবাই মিলেই যে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল, সেটি এখনও অপরিবর্তত রয়েছে। সুতরাং আমাদের অবস্থানও আগের মতোই আছে”।
আর সেকারণেই ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে আসা নিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি'র ছাত্র সংগঠনটি।
ছাত্রদলের শিপন বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ যেভাবে শিবিরকে মতবিনিময় সভায় ডেকেছে, আমরা সেটি সমর্থন করি না। সেজন্য স্পষ্ট ভাষায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি”।
ঢাবি শাখা শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম
তিনি বলেন, “তারা যে মতামত নিতে শিবিরকে ডেকেছে, সেটা আমরা আগে জানতামই না। শিবির সকালে দেখা করেছে, আমরা বিকেলে, তাদের ব্যাপারে যেহেতু একটা সিদ্ধান্ত আছে, কাজেই ক্যাম্পাসে এভাবে তারা (ছাত্রশিবির) হুট করে প্রকাশ্য রাজনীতি করতে পারে না” ।
প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে হলে আগে ছাত্রশিবিরকে একাত্তরসহ যেসব বিষয়ে তাদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট তুলে ধরতে হবে বলে জানান আহমেদ।
“এরপর শিক্ষার্থীরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন যে, শিবির ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারবে কী-না,” বলছিলেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনটির এই নেতা।
প্রায় একই ধরনের মতামত জানিয়েছেন বামপন্থী আরও দুই সংগঠন ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, “প্রতিবাদ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপাচার্যকে এই প্রশ্নও করেছি যে, আমরা কেউ যেখানে ক্যাম্পাসে শিবির নেতাদের চিনি না, সেখানে তারা চেনেন কীভাবে? কিন্তু জবাব পাইনি”।